। পল্লব দে ।
।। প্রথম দৃশ্য ।।
মা - (বাচ্চাকে কোলে নিয়ে) ওলে .. ওলে .. সোনা মা আমার, আমার পাখি ! এখন আমার সোনা মোবাইলে গান শুনবে ।
(গান ধরেছেন)
"আমার সোনার ছোট্ট মোবাইল
শুনায় শুধু গল্প- গান
গানের তালে তাল মিলিয়ে
সোনা আহ্লাদে আটখান।
দেখা না যায় যে ঝলমল আলো না দেখা যায় মুখ,
তবুও সেথায় লুকায় হাজার রং এর সুখ।"
মাগো, আমার তো কিপ্যাড মোবাইল! তোকে শুধু গান শোনাতে পারব! আমার পাশের বাড়ির বড়োলোকের মতো আর বড়ো মোবাইল নাই! না হলে তো তোকে মজার মজার ভিডিও দেখাতাম !
বাবা - কিগো? আমার সোনা মা কি করছে?
মা - তুমি দেখি আজ খুব তাড়াতাড়ি এসে গেলে?
বাবা - না! বাজার তেমন নেই , তাই আর চলে আসলাম।
মা- ও আচ্ছা ! তুমি সোনাকে ধরো, আমি তোমার জন্য চা করে আনছি।
বাবা - (বাচ্চাকে কোলে নিয়ে) আয় মা! (আদর করে কথা বলছেন)
মা- (চা নিয়ে প্রবেশ) সোনার বাবা আমার একটা কথা আছে।
বাবা - কি কথা?
মা- না বলছি!! এইবার পূজায় আমার কাপড় লাগবে না তার বদলে আমাকে একটি বড়ো মোবাইল কিনে দেবে ?
বাবা - ওহ বা! বা! বড় মোবাইল তুমি চালাতে পারবে তো?
মা - তা না হয় পাশের বাড়ির রিমকে বলবো আমাকে একটু শিখিয়ে দিতে
বাবা - আচ্ছা দেখি!!...
।। দ্বিতীয় দৃশ্য ।।
( দশ বছর পর)
মা - কি রে সোনা? তুই যে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে থাকিস। এইভাবে কি কেউ মোবাইল দেখে?
মেয়ে - তুমি এত কথা বলবে না তো! তুমি কী বুঝবে, আমি মোবাইল নিয়ে কী করছি? বাবা যে তোমাকে আগের মোবাইলটি দিল, সেটা তুমি ঠিকমতো চালাতেও পারলে না, উল্টো সেটাকে তিন বৎসরের মাথায় খেয়ে ফেললে..
মা - (মন খারাপ করে তাকিয়ে) হ্যাঁ। ঠিকই বলছিস, আমি খেয়ে ফেলেছি ।
মেয়ে - তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আমি মোবাইলে পড়াশোনা করছি। (মা মন খারাপ করে চলে গেলেন)
বাবা - (প্রবেশ) কীরে সোনা মা আমার? কী করছিস?
মেয়ে - না বাবা! এইতো মোবাইলে পড়াশোনা করছি।
বাবা - কোথায় তুই পড়ছিস মা? তুই তো দেখি রিলস্ বানাচ্ছিস?
মেয়ে - তাতে হলো কী?
বাবা - কিন্তু তোর এখন পড়ার সময়, এখন পড়্।
মেয়ে - আমি মোবাইলে পড়ে নেবো।
বাবা - আরে তো পড়ছিস কোথায়?
মা - (প্রবেশ) তুমি তো সারাদিন থাকো না, সারাক্ষণ .. মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। আর, আমাকে তো পাত্তাই দেয় না!
মেয়ে - কোথায়? কী বলছো? আমি কি মোবাইলে পড়াশোনা করি না !
বাবা - আচ্ছা, এত চেচাচ্ছিস কেন?
মেয়ে - না, তোমরা আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। তোমাদের সব সময় মোবাইল নিয়ে কথা আর সহ্য হয় না।
মা- আরে, তুই যে সবসময় মোবাইল নিয়ে থাকিস।
মেয়ে -তো?
বাবা - তো মানে?
মেয়ে - আরে আমার সঙ্গে আর বেশি কথা বলবে না তো! (মেয়ের প্রস্থান)
মা - কে জানে যে মোবাইল দেখতে দেখতে সে এভাবে উদ্ভট আচরণ শিখবে।
বাবা - মোবাইলটি হল কাল। কেনো যে ছোট থেকে এইভাবে মোবাইল দিয়ে দিয়ে আমি নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারলাম.. (মর্মাহত)
।। তৃতীয় দৃশ্য ।।
(চার বৎসর পর)
(মা -বাবা ও মেয়ে ঝগড়া করছে। মেয়ে মোবাইল হাতে ঝগড়ার মাঝে মাঝে চ্যাটিং করছে।)
রিম (পাশের বাড়ির মেয়ে) - কি গো? তোমাদের ঘরে এত চেঁচামেচি কেন? কী হয়েছে?
বাবা - আরে বলিস না রে আমাদের সোনা মা মোবাইল ছাড়া এক মিনিটও থাকেনা। পড়াশোনার কথা বলে লাভ নাই, গত কিছুদিন আগে ওর স্কুল থেকে অনেক কমপ্লেন এসেছে।
রিম - আচ্ছা! ঝগড়া করে কী লাভ? সব কিছুরই একটি সমাধান আছে, আগামী রবিবার আমাদের এখানে মোবাইলের সঠিক ব্যবহার নিয়ে এক সজাগতা অনুষ্ঠান হবে, সেখানে ওকে নিয়ে যাও অনেক কিছু জানতে পারবে।
মেয়ে - আমি যাব না।
বাবা - কেন যাবেনা?
মা - না সোনা মা, এভাবে কথা বলে না, আমরা সবাই যাব।
।। চতুর্থ দৃশ্য ।।
(অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার বিশেষ ব্যক্তি সহ সবাই অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুনছেন।)
বিশিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য - নমস্কার। বর্তমানে আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি এবং মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের এক প্রয়োজনীয় দিক। মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা বর্তমানে সভ্যতার কথা চিন্তা করতে পারি না। বিশ্বে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সংখ্যা প্রায় 6.9 বিলিয়ন। আমাদের দেশেও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী প্রায় 1.15 মিলিয়ন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এই তথ্য প্রমাণ করে মোবাইল আমাদের জীবনে কিভাবে জড়িত? বর্তমানে পুরো বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়। পড়াশুনা ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই মোবাইলের অন্যতম অবদান রয়েছে। তবে আজকের এই অনুষ্ঠানের আসল উদ্দেশ্য হল আমরা মোবাইল ব্যবহার করব কিভাবে? মোবাইল বর্তমানে 10 থেকে 18 বছর বয়সীদের মধ্যে ইতিবাচক দিকের তুলনায় নেতিবাচক দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যা, ভবিষ্যতে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করবে, তা অবশ্যম্ভাবী ।
যদিও ২০২০ সালের পর আমাদের দেশে 65% ছাত্রছাত্রীর অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন চার ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী কিশোর কিশোরীদের মধ্যে 30% এর বেশি মারাত্মক মানসিক চাপ এবং ২০% এরও বেশি ঘুমের ব্যাঘাতে ভুগছে। Pew Research Centre এর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে 45% ছাত্রছাত্রী সব সময় অনলাইন মুডে থাকায় বাস্তব দুনিয়ার সাথে তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর রিপোর্ট মতে নীল আলোর আসক্তি থেকে ডিজিটাল আই সিনড্রোম এবং আরোও মানসিক রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
মেয়ে - ইস্ কি কি বকবক করে যাচ্ছে? এত কথা কী বলছে? বোঝা-ই যায় না। যত নাটক!! আমি চললাম একটি নতুন ওয়েবসিরিজ শুরু হবে, সেটি দেখতে হবে।
বাবা-মা (একসঙ্গে) - দাঁড়া দাঁড়া এভাবে যায় না। দাঁড়া মা, শোন।
মেয়ে - তোমরা আর কোন কথা বলো না, আমি চলে যাচ্ছি (মেয়ের প্রস্থান)
।। পঞ্চম দৃশ্য ।।
(হসপিটালের দৃশ্য, ডাক্তার নার্স আছেন)
মা ও বাবা (একসঙ্গে চিৎকার দিতে হইতে প্রবেশ) - ডাক্তারবাবু বাঁচান, আমার মেয়েকে বাঁচান, দোয়াই ঈশ্বর! আমার মেয়েকে রক্ষা করো, প্রাণ দান করো। অবিরাম মোবাইল দেখতে দেখতে ও হঠাৎ জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। (কাতর ভাবে ডাক্তারের পায়ে ধরে) দয়া করে বাঁচান ...
ডাক্তার - আমি দেখছি, নার্স, তাড়াতাড়ি করে ইমারজেন্সি রুমে নিয়ে যাও। (ডাক্তার ও নার্সের প্রস্থান)
মা ও বাবা - (কান্নার মধ্যে) কেনো যে আমি ওকে ছোট থাকতেই অতিরিক্ত মোবাইল দেখতে বারণ করলাম না। হে ঈশ্বর! দয়া করো, রক্ষা করো।
(কান্নাকাটি চলছে)
ডাক্তার (প্রবেশ) - আপনার মেয়ে অতিরিক্ত মোবাইল দেখার কারণে মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে ওর ব্রেনে মারাত্মক ক্ষতি করেছে এবং নমোফোবিয়া রোগের লাস্ট স্টেজে থাকায় পেশেন্টের অবস্থা ভালো না।
মা ও বাবা - (কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে) - না......। হায়রে ঘাতক মোবাইল...।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন