ছোটগল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ছোটগল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

অব্যক্ত প্রেম

 


-সৈকত মজুমদার


    ঈশিতা খুবই শান্ত, লাজুক ভাবগম্ভীর স্বভাবসিদ্ধ একটা মেয়ে। দেখতে বেশ সুন্দরী ও আকর্ষণীয়। আমি ওকে কলেজের নবীনবরণ থেকে দেখছি, একা বিলোনীয়া শহরে ভাড়া থেকে পড়াশোনা করছে। কলেজে ওঠার পর দ্বিতীয় বর্ষে বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়, তখন বাড়ির লোকদের শায়েস্তা করার জন্য এক বান্ধবীর বাড়িতে কিছুদিন সে লুকিয়ে থাকে।

    এখনো কোনো ছেলের চোখে চোখ রাখেনি, প্রেমের প্রস্তাব যে পায়নি এমন নয়। সে এসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না, ওর কাছে এসব নাটক মনে হয়! আজ অবধি ঈশিতা কারো প্রেমে পড়েনি। কারণ, নিজের অনেক বান্ধবীদের দেখেছে প্রেম করতে। আবার কিছুদিন পর ওদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়। হয়তো ঈশিতা এসব দেখে নিজে আর প্রেমে এগোনোর সাহস পায়নি। যদিও কলেজের অন্যান্য মেয়েদের চাইতে ঈশিতা অনেক রূপসী ছিল। ওর মনের মধ্যে প্রেম সম্বন্ধে সব সময় একটা ভয় বিরাজ করত। সে ভাবত, প্রেম মানে যন্ত্রণা অথবা প্রতারণা!!

    একদিন এই ঈশিতার প্রেমে পড়ে যায় সৌম্য, তা সকলেরই ধারনাতীত ছিল। ঈশিতাকে ওর ভালো লাগে এবং মনে মনে ভালোবাসত। কিন্তু মুখে বলেনি কখনো। তারপর হঠাৎ কয়েকদিন ধরে ঈশিতা কলেজ আসেনি, ওকে না দেখতে পেয়ে সৌম্যর খুব মন খারাপ হয়ে যায় এবং ঈশিতার এক বান্ধবীর কাছে ওর খবর জানতে চায়। তখন বন্ধুরা নানা ব্যঙ্গোক্তি করে। সৌম্যর খুব খারাপ লাগে।

    তারপর সে মনে মনে স্থির করে, এবার যেদিন কলেজ আসবে সেদিনই ঈশিতাকে প্রপোজ করবে। একাকী এ বিষয়ে রাতদিন প্র্যাকটিস করে, আর রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে।

-    "আমি অন্যদের মতো অভিনয় করতে পারি না, যেটুটু ভালোবাসি শুধু মন থেকেই।"

    হঠাৎ একদিন কলেজ গেইটে মুখোমুখি সৌম্য-ঈশিতা, ধবধবে সাদা একটা প্রাইভেট গাড়ি থেকে হাসিমুখে নামে ঈশিতা। পরনে শাড়ি, কপালে সিঁদুর!

    সৌম্য বজ্রাহত ব্যক্তির ন্যায় অপলক চোখে চেয়ে  থাকে।

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রতিভার আলোক শিখা

 


- সপ্তমিতা নাথ

শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছিল সেদিন মেয়েটি। সবে মাধ্যমিকের ফলাফল বেরিয়েছে। এই উষ্ণ অভ্যর্থনার উষ্ণতা সহ্য করে উঠতে পারে নাই , বিশেষ করে চোখ দুটি, রক্তিম ঝলসানো চোখে ভেসে উঠেছিল অতীতের ছেঁড়া, ফাটা, ভাঙ্গা কালো পর্দার স্মৃতি। গোটা উপত্যকার ছোট বড় সংগঠন ব্যক্তি বিশেষ আজ প্রতিভার পাশে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু  প্রতিভা  কি চায়? প্রতিভার কী চাওয়া উচিত বা অনুচিত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আত্মবিশ্বাসটুকু গড়ে ওঠার আগেই দুমড়ে মুছড়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল তার শৈশব।  সে আর  কেউ না  তারই নিজের পিতা । প্রতিটি মেয়েরই শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম নায়ক তার বাবা, কিন্তু কেন প্রতিভার ক্ষেত্রে তা বিপরীত! কেন তার বাবা নায়ক না হয়ে খলনায়ক এর প্রতিছবি হয়ে আজ চোখের অশ্রু হয়ে ভেসে গুলিয়ে যাচ্ছেন তার এই খুশির দিনে?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন কক্সা তিন এ, রোজ রাতের মতই সেই রাতও কালো ছিল কিন্তু নেমে এসেছিল অঘোর অমবস্যা, প্রতিভার জীবনে। প্রতিবারের মত মদাসক্ত বাবা ঘরে এসে মাকে প্রতিদিনের নিময়ের  প্রহার সেরে  বিশেষ করে যে কাজ সম্পাদন করলেন সেটি হলো প্রতিভার সমস্ত বইপত্র উনুনে দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা সেদিন থেকেই শুরু হলো প্রতিভার জীবনের পিছিয়ে যাওয়ার উন্নতির দিনগুলো।

রোগাক্রান্ত মা আর বাবাকে নিয়ে সংসার। বাবার সিদ্ধান্তই সর্বোপরি। আর আত্মীয়-স্বজন ও সমাজ? সে তো আগে থেকেই ছাপ নিয়ে বসে আছে প্রান্তিকের, কাজেই প্রতিবাদ তো প্রশ্নই ওঠে না। এ তো এক স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন ছবি এই সমাজের। ধীরে ধীরে বয়স বাড়তে থাকে সময়ের টানে হঠাৎ একদিন সার্ভে করতে এসে শিখা ম্যাডামের হাতে পড়ে যায় প্রতিভা। সরকারি কর্মজীবী, শিক্ষা বিভাগের বিশেষ প্রশিক্ষণ সেন্টারের প্রশিক্ষক। শিখা মেয়েটিকে দেখেই তার খোঁজ খবর নিলেন এবং তার ইতি বৃত্তান্ত জেনে তার মা এর কাছে অনুমতি চাইলেন। মেয়েটিকে তার বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার।  কিন্তু অক্ষম মা পিতার অনৈতিক কাজের ভারে আড়ষ্ট। সেখানে বাবাকে না জানিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আস্বস্ত করলেন শিখা ম্যাডাম প্রতিভার মা প্রণতিকে।

প্রতিভার জীবন শিখার আলোতে আলোকিত হতে শুরু হলো।  ব্রিজ কোর্স শেষ করে বয়স অনুযায়ী ক্লাসে ভর্তি হলো শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায়। কিন্তু নিয়তির খেলা অন্য এক গল্প লেখার  ফন্দি আঁটছে। যার ভয় ছিল সেই বিপত্তি ঘটলো। মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে সে সংবাদ বাবার অগোচরে থাকলো না  তারপর ঝরাক্রান্ত এক রাতের তুমুল  সংঘাতের পর এবার মা ও মেয়ে গৃহহীন এবং আশ্রয় হলো মামার বাড়িতে।

কিছুদিন বেশ ভালোই কাটলো তারপর শুরু হলো ভাইয়ের দৈমাত্রিক ব্যবহার । ভাইয়ের  পরিবারে দিদির অতিরিক্ত খরচের বোঝা কে বইবে? অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা বাবদ টাকা কোথা থেকে আসবে? জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে ঢালের মত খাড়া শিখার কাছে গেল প্রতিভা। তবে এবার অনেকটাই শক্ত পোক্ত মানসিকতা, যেকোন পরিস্থিতিতেই পড়া চালিয়ে যাবে । শিখার মনোবল যেন ফোঁয়ারার মতো উচ্ছাসের সাথে বেড়ে গেল সেদিন, যা চেয়েছিল তাই  বুঝি হলো। সে দেখতে পেয়েছিল প্রতিভার  মধ্যে অঙ্কুরিত হচ্ছে  আত্মবিশ্বাসের বীজ।

প্রতিভার জীবনের আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্ভুদ্ব করলেন শিখা ম্যাডাম। বললেন এবার তোর পড়াশোনা সাথে সাথে সাবলম্বী হতে হবে ব্যবস্থা কি? ‘সেটা আমি করে দিচ্ছি, ছোট ছোট ছাত্রদের পড়াবি আমি সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি  শুরু হলো নতুন যাত্রা কিন্তু নিয়তি আরো কিছু চাইছে প্রতিভার কাছ থেকে। দিন দিন অবহেলা বাড়তে থাকলো মামার বাড়িতে। প্রতিভা এতদিনে অনেক শক্ত, তাই শিখা ম্যাডামের পরামর্শ নিয়ে আত্মীয়তার যবনিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো প্রতিভা। মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল অজানা ঠিকানায়। ছোট একখানা  ঘর ভাড়া  করলো। এবার দায়িত্বও কর্তব্যের ভাড় অনেকটাই  যা সামলাতে শুধুমাত্র ছাত্র পড়ানো দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ যে ছাত্রগুলো পড়াতো তারা তো সেই প্রান্তিক সমাজেরই কাজেই আর্থিক সহায়তায় বা পারিশ্রমিক খুবই সামান্য। বড় বাবুদের দ্বারস্ত না হলে মায়ের ঔষধ, ঘর ভাড়া ও দুজনের পেট ভরে দুবেলা খাওয়া হয়তো সম্ভব নয়। অবশেষে বাধ্য হলো প্রতিভা বাসন ধোওয়া ও কাপড় কাঁচার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে, বড় বাবুদের ঘরে। সকালে কাজ সেরে স্কুলে যায় ও দুপুরে মা এ ঝি ত্র দুটা খেয়ে বসে পড়ে ছাত্র পড়াতে কথায় আছে আলস্যই দৈন্য দীনের প্রসূতি ও পরিশ্রমই সফলতার সোপান। সকলের সহায়তা ও সহযোগিতায় প্রতিভা বড় কলেজে ভর্তি হলো।

                আজ বিফলতার সাথে সমরযুদ্ধে জয়ী প্রতিভা কৌশল শিখে গেছে বিপদের সাথে কিভাবে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হয়। তাহলে কি সে সফল? তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির পেছনে যারা  রয়েছেন তবে কি তাদের ধন্যবাদ জানানো দরকার? নাকি বয়সের আগে প্রাপ্তমনস্ক হয়ে যাওয়ার জন্য কিংবা তার শৈশব কেড়ে নেওয়ার জন্য তাদের দোষারোপ করা উচিত? আজ মানসিক ভারসাম্য সামলাতে পারছিল না, প্রতিভার দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা বইছে। ঘরের এক কোনাতে লুকিয়ে রেখেছে প্রতিভা নিজেকে! যখন বাইরে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি-বিশিষ্ট সবাই দাঁড়িয়ে আছেন ওর সাথে দেখা করে সাহায্যের হাত বাড়াতে। পত্রপত্রিকা সংবাদ মাধ্যম সব কিছুতেই প্রতিভা তার সমরযুদ্ধের কাহিনী ও মাধ্যমিকের ফলাফলের জন্য শীর্ষে।

প্রতিভার প্রদীপ, শিখার দীপ্তিমা, আলোক না পেলে হয়তো ডুবে যেতো  অতল অন্ধকারে । অন্ধকারের সমাবেশে এরকম আরো অনেক শিখাই আলোকিত করতে পারবে হাটে , দোকানে  রাস্তায় রোজ দেখা পাওয়া বিবর্ণ প্রতিভাগুলোকে। হয়তো বা যদি কখনো হঠাৎ ছিটকে পড়ে কোন প্রদীপের অল্প আলোক শিখা ।


রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বসন্ত

 


- মঞ্জরী রায় হীরামণি

            বসন্ত নাকি ঋতুরাজ! বসন্তের কোকিল আর রঙের বাহারে প্রকৃতি নাকি অপরূপা হয়ে ওঠে। এমনটাই স্কুলের রচনা খাতায় ব্ল্যাকবোর্ড থেকে টুকে এনেছিল  শুভা। সে থেকে শুভা জানে কোকিল যখন কুউউ করে ডাকে তখনই বসন্ত আসে। বসন্তের সৌন্দর্যকে  চারপাশে খুঁজে ফিরে।

            ঝাটিঙ্গার তীর ঘেষে শিমুল মন্দাররা যখন ফুলে ফুলে সেজে ওঠে, তখন শহর থেকে দলে দলে মানুষ আসে শুভাদের এই ইটখোলা গাঁয়ে। তারা বসন্তের শোভা দেখেন। ক্ষীণস্রোতা ঝাটিঙ্গায় নেমে জলকেলি করেন। ছবি তোলেন। কিশোরী শুভা আলগা থেকে দাঁড়িয়ে এসব দেখে। ওদের কথাবার্তাও কানে আসে। এমন কী মাঝে মাঝে ছবি তোলার জন্য শুভা আর ওর  সঙ্গী সাথীদের ছবিও তোলেন তারা। শুভারা অবশ্য এতে খুশিই হয়। কারণ নিজেদের ওমন ঝলমলে ছবি মোবাইলে তো ওরা তুলতে পারে না। ওই ছবিগুলো যখন উনারা কাছে ডেকে মোবাইলে দেখান তখন নিজের ছবিকেই কেমন যেন অচেনা মনে হয়। এ ছাড়া চিপস্ চকোলেট বিস্কুট ইত্যাদির প্রাপ্তিও ঘটে বটে! সব মিলিয়ে শুভার মনে হয় বসন্ত বুঝিবা একারণেই ঋতুরাজ!

ফটোবাজি আর চিপস চকোলেট পর্ব সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অবশ্য সে রং ফিঁকে হতে হতে উধাও হয়ে যায়। মা প্রচুর বকা ঝকা করেন। ঘরে এক ফোঁটা জল নেই। পুকুরগুলো শুকিয়ে কাঠ। কূয়োর হালও তথৈবচ এ অবস্থায় ঝাটিঙ্গার ক্ষীণ স্রোতই ভরসা। ছোট্ট ভাইটিকে ঘরে রেখে মা তো জল আনতে যেতে পারেন না। শুভাকেই প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে নদীর চড়াই উতরাই ভেঙে জল আনতে হয়। শুভা যদি সেই এক কলস জল আনতেই আধ বেলা কাটিয়ে দেয় তাহলে মা তো আর তাকে মন্দার ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানাতে পারেন না!  অগত্যা...

 

প্রচুর গাল মন্দ খেয়েও শুভার দুচোখে ভীষণ স্বপ্ন। ছবিওয়ালা ওই দিদিমণিটির মতো সে-ও একদিন ওমন ঝকঝকে হলুদ শাড়ি পড়বে। ঘাড়ের উপর থাকবে আলতো খোঁপা। আর তাতে গুঁজে দেবে লাল মন্দার...

সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

নৌকাবিলাস

।।রণবীর পুরকায়স্থ।।

শামীম আহমেদ আর শৈলজা চক্রবর্তীর প্রেমের তরী তখন মাঝ গঙ্গায় টালমাটাল। কেউ রাজি নয় কোলে। নিতে বলছে,
- একা এস তো গুন টেনে আনছি পারে।
-কিন্তু আর একজন? আমার প্রিয়? প্রিয়তমা?
-বিসর্জন দাও! জল সমর্পণ।
জোড়া প্রেম অবাধ্য সংকেতে জানায় প্রতিবাদ,
-এতো সোজা!
শামীম এর পরিজন বলে,
- তবে ধর্মান্তর করিয়ে নাও।
শৈলজার গোষ্ঠী বলে,
-আমাদের ওসব নেই।
শামীম শৈলজার কাজিয়া হয় তরণী'পরে,
-আছে কি নেই দিয়ে কী হবে। ধর্ম ছাড়াও হয় গৃহস্থালী। সেলিমদা চিত্রকর আর পৃথা খাসনবিশ তো বদলায়নি। জাহানারাদি অসীম সামন্তও সুখেই আছে।
-দু'রকম ধর্ম থাকলে সন্তানের ওপর চাপ পড়ে। কাকও হয়না  কোকিলও না।
-তবে টস করি। একজন পাল্টালেই চুকে যায় ল্যাঠা।
শামীম বলে,
-আমি পাল্টাব না। হিন্দুরা নেবে?
শৈলজার যুক্তি,
-রবীন্দ্রনাথকে যদি নেয় তোমাকেও নেবে।
-ওদের টা অন্য। নিমরাজি সমাজে তেমন আলোড়ন হয়নি। আমরা আরব সৈয়দ।
শৈলজা বলে,
-হতে চাইলে উপায় আছে। মায়াপুরে চলে যাও। শঙ্খ মহারাজ হয়ে ফিরে এসো দাড়ি মাথা ন্যাড়া।
শামীমের স্পষ্ট কথা,
-না  দাড়ি কাটব না। ন্যাড়া হব না, শঙ্খও না। তুমি কেন হয়ে যাওনা মুসলমানি।  তোমার একটা সুন্দর নাম দেব লুৎফা।
-ও নাম আমি জানি। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে আছে। আমি হব না।
ফলত মাঝগঙ্গায় নৌকা উল্টে যায়। হুবুডুবু খেতে খেতে দুজন দুদিকে। একজন দুঃখিনি থেকে যায় গঙ্গার পারে যেমন ছিল। সাঁতার জানে যে জন, গঙ্গা বেয়ে পড়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগর। মান্দাসে চেপে যায় হডসন সাগরপারে।
একটু তালগোল পাকিয়ে যায় উচ্চশিক্ষা হয় বিদেশে।
সাময়িক তকরার থেকে দীর্ঘ মেয়াদি বিচ্ছেদ কথা ভাবেনি কেউ কখনও।
শৈলজা শমীম যুক্তি তর্কে লড়াই করলেও ভালবাসার জমি ছাড়েনি এক ইঞ্চিও।
ওরা বলে,
-আমরাই ওরিজিনাল আদম হাওয়া।
বলে,
আমরা লক্ষ্মীজনার্দন। ছোটবেলায় হারিয়ে গেলাম আজমীর শরীফ আর পুষ্কর তীর্থের মধ্যবর্তী পাহাড়তলিতে। গিরিপথ বেয়ে যখন উঠছি তখন তীর্থযাত্রী পরিবার দুদিক থেকে আমাদের কেড়ে নেয়। আমরা মুক্ত হতে চাই। আমাদের জিহাদ এই আমাদের ধর্ম যুদ্ধ এখন।
ওরা বললে,
-বিয়ে করো।
সমিম বললে,
-রসো।
বলেই ফিরল দেশে।
ওদিকে, শৈলজার কি হইল তবে?
সেও আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাকি শুধু নির্বাচন। সুনীল মিথিলেশ স্বপ্নময় এর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। শৈলজার তিনজনকেই পছন্দ। তিনজনই থাকে নিউইয়র্ক আমেরিকায়।
তানা না নানা।
মালগুড়ি ডেজ-এর রিংটোন। পুরনো সেই দিনের কথা।
টোন পাল্টে দেওয়ারও কল আছে।
ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি।
পাঁচটা সকাল তখন।
কে বাজায়?
যাদের জন্মদিন আজ।
আদম হাওয়া, শিব-সতী।
যারা জন্মেছিল একই দিনে।
শীতের ডিসেম্বরে।
এক দুই তিন চার পাঁচ...
ছয় ডিসেম্বর ভোরে।
যারা অধুনা হারিয়ে গেছিল গঙ্গার জলে।
নৌকা ডুবিতে।
শুভেচ্ছা বিনিময় করে একজন আর একজনকে বলে,
-কি দেব তোমায় এমন দিনে, উপহার।
-তোমার যা প্রিয় তাই দেবে।
দুজন তিনসত্য করে বলে,
আর ঝগড়া করব না
বললে,
-বকেয়া কচাল মিটিয়ে ফেলা যাক তাহলে? হোক না একটা গোলটেবিল আজ।
-হোক। মন্দ কী? কোথায় কবে কখন বলে দাও আইটিননারি।
-কবে মানে তো আজ। সকাল বেলায় যে মহাবিস্ফোরণে জন্মে ছিলাম আমরা সে সময় তো আর খুলবে না 'গ্রেন অফ সল্ট'। তাই সন্ধ্যে সাতটা।
সঠিক সময়ে দুই বেঠিক নারী-পুরুষ খাবার ঘরের গোলটেবিলে মুখোমুখি বসে থাকে অবাক জলপাত্র হাতে। গৌরবর্ণ গৈরিক বসনে মুণ্ডিতমস্তক পুরুষে তাকিয়ে হতভম্ব নারী গায় উল্টো পদাবলি 'ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী।'
পুরুষ দেখে বরবর্ণিনী হরিণ-নয়নের চকিত চাহনি। ময়ূর রঙা অপরূপ কারুকাজ বোরখাবাসের শরীরি আমন্ত্রণে পুরুষ-হৃদয়ও বিহ্বল।
আহ কী হেরিনু!
ময়ূরপঙ্খী আবার পেখম তোলে নদীতে।
সেই যে টাইটানিক নৌকা ডুবে ছিল মাজ গঙ্গায়?
মন্দ সমীরণে সানন্দ কর্ণদার এবার প্রেমের নামের বাদামে লেখে অভিজ্ঞান।
-আমার নাম শঙ্খ মহারাজ।
অতি পরিষ্কার আকরে বিলাসিনীও লেখে নিজ নাম আমি,
-আমি লুৎফা।
মাঝগঙ্গায যখন কুয়াশায় আবৃত।
দুপারে দলীয় কোলাহল যখন স্তব্ধ।
তখন অকূলে পাড়ি দেওয়ার আগে নকল নামের বাদামখানি ওরা হেলাভরে ফেলে দেয় জলে।
দূর থেকে কাছের মানুষদের বলে,
-তোমরা কে হে।
বলে,
আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব আবহমানকাল।

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...