সপ্তমিতা নাথ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সপ্তমিতা নাথ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

প্রতাপ : অনলাইন-৫

    "তেমন রাবার নেই মুছে উনিশে মে" কবি করুণা রঞ্জন ভট্টাচার্যের এই বাণী শ্বাশত। বরাকে বাঙালীর দৈনন্দিন জীবনে হাজারও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ভাষা কেন্দ্রিক আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে উনিশের চেতনাকে স্তিমিত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে যারা তাদের জানিয়ে রাখি, কবির এই প্রদীপ্ত ঘোষণাই আমাদেরও দৃঢ় অঙ্গীকার।
- শৈলেন দাস



মহান উনিশ, তুমি আছো

  । সীমা পুরকায়স্থ ।

উনিশ, তুমি আছো ট্রেনে ঘুরে ফেরা
ফেরিওয়ালার মুখের বেসুরো গানে।
বাংলায় কথা বলা, রুমাল, টর্চ, ঘড়ি
চেইন, পার্স আদি বিক্রেতার মুখের বুলিতে
তুমি আছো কৃষকের ঘরের
অভাবী ছাত্রের বর্ণমালার বইয়ে।
ওরা মূর্খ! ইংরেজি, আসামি, হিন্দী
অনেকেই বোঝে না।
ওরা দেশ, রাজ্য, ভাষা, জাতি, ধর্ম
বিভাগের চিন্তায় বিভোর নয়।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত এক করে
নিজে বাঁচে, পরিবার বাঁচায়, দেশকে বাঁচায়।
বড়লোকের সুউচ্চ অট্টালিকা গড়ে নয়,
বাঁচায় মাটি - গ্রামের ক্ষেতে, বৃহদাকার বটবৃক্ষে।
সুরক্ষিত করে প্রাণের ভাষা - নবান্ন উৎসবে,
লোক সংস্কৃতিতে, লোক গানে।
আনে প্রশান্তি বাংলার ঘরে ঘরে, 
শস্য শ্যামল সোনার ক্ষেতে।

 


 । রাহুল দাস।

ওহে শহীদ,
তোমাদের কাছে আমরা ঋণী
কৃতজ্ঞ থাকবো চিরকাল।
রক্ষা করতে বঙ্গ মায়ের সম্মান
হাসতে হাসতে তোমরা করে দিলে
কত সতেজ প্রাণের বলিদান।
মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় 
কত না করলে লড়াই,
অবশেষে রেল জংশনে 
জীবন উৎসর্গ করলে,
একটি ভগিনী আর দশটি ভাই।

 

ওহে শহীদ,
তোমাদের কাছে আমরা ঋণী
কৃতজ্ঞ থাকবো চিরকাল।
ওহে অমর শহীদ তোমাদের চরণে 
জানাই আমি শতকোটি প্রণাম 
আশীর্বাদ করুন আমাকে 
যেন আমিও রক্ষা করতে পারি 
আমার মায়ের সম্মান।

 


। সপ্তমিতা নাথ ।

ফাগুনের রং লাগিয়ে সবে গেল বসন্ত ,
কোন তান্ডবের জোয়ার নিয়ে বৈশাখ দ্বারে দ্বারস্ত,
যে স্টেশনে ছুটে যায় সবাই বরণ করিতে অতিথি আগন্তুক,
সেই স্টেশনেই শেষ ঠিকানা ফেরাতে মাতৃভাষার তরী ডুবন্ত।

মস্ত বড় এক জামাট আবেগ ভেঙ্গে চুরমার
রাজপথে সেদিন লাঞ্চিত মা, হয়ে তার ভাষা ছারখার
প্ত রোদে হঠাৎ হলো বৃষ্টিবিহীন বজ্রপাত,
যখন ওরা কারা করলো ভাষার শরীরে আঘাত।

বরাক সেদিন স্তব্ধ বধির, গভীর নিরাশায়
কেমনে বইবে? গাইবে? কলকল নীরব বিদিশায়
হাজার পাখির সুরের মূর্ছনা মুছে গেল
বেদনায়, স্কুল-কলেজের সিলেট পেন্সিল
ব্ল্যাকবোর্ডও কথা দিল কথা না বলার।

তবে ভাইয়েরা হাল ছাড়েনি হার মানেনি
মিছিলের পর মিছিল করে বুক পেতে দিতে ওরা পিছায় নি।
রাউন্ডের পর রাউন্ড পটকা ফাটিয়ে আনন্দ করতে ওরাও থামেনি !!
রক্ত হাতে একে অপরে ধরে দশ ভাই এক বোন
মাটিতে লুটায়, তবুও মাকে লুটাতে দেয়নি।

বিরাট আয়োজনে তারাপুর রেল স্টেশন থেকে,
প্রেমতলা দিয়ে ভাষার ভাষা প্রেম রক্ত বয়ে যায়।
বিজয় কলসে প্রেম ধারা ভরে রাখে সবাই,
উনিশ এলে কলস খুলে নিজেকে নিজে রক্ত তিলক পরায়।


 

  । পুষ্পিতা দাস ।


৬১ আর ৭১ এ যারা, 

ত্যাগ করেছেন নিজ প্রাণ।

তাদের জন্য গাইছি আমরা,

উনিশ, একুশের গান।

দুই বাংলার বীর শহীদদের জানাই,

আজ শতকোটি প্রণাম।

তোমার জন্য হয়েছে আজ,

বিশ্ব বাংলার নাম।

রবী আমার অহংকার,

নজরুল আমার ভালোবাসা।

তোমাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে,

পেয়েছি এই বাংলা ভাষা।


তোমাদের স্মরি


 । জয়ন্তী দত্ত ।

ওগো তোমরা শোনো 
কান পেতে শোনো 
ঐ শোনা‌ যায় মহাকালের ডাক
খড়্গ হাতে উদ্যত, করিতে ছেদন
আমাদের সাধের বাংলাভাষা।
কত সাধনার ধন, কত রক্তের বন্যায় রঞ্জিত মাটি,
ত আত্মত্যাগ্ এগুলো কি বিফলে যাবে? 

ওগো তোমরা শোনো 
কান পেতে শোনো 
মহাকালের বারতা। হিংসাস্রয়ীর কপটতা
আগ্রাসনে লিপ্ত চিত্ত
ধূর্ত শকুনীর দলের ভাবনা
কিভাবে করা যায় নির্মূল 
মাতৃ দুগ্ধ সম মোদের মাতৃভাষা।

ওগো তোমরা শোনো 
তোমরা কান পেতে শোনো 
যে শ্লোগান মুখরিত ছিল তোমাদের বিজয় ধ্বনি
যাতে পেল স্হান মাতৃভাষা।
লাঞ্ছনার কবলে পড়ে সে 
যন্ত্রণায় কাতরায় তবু ছাড়ে না নিজ অধিকার,
ভুলেনি তোমাদের শেখানো বুলি
"প্রাণ দেবো, ভাষা দেবনা",
"রক্ত দেবো তবু জবান‌ দেবোনা"।

তোমাদের তেজস্বীতা গেঁথে আছে বরাকের জনমন। 
এখনো আছে প্রতিবাদে মুখর
তোমরা কান পেতে শোনো।
বরাকের জনগণ তোমাদের স্মরণে শ্রদ্ধায়, 
প্রেরণায় প্রদীপ্ত।

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রতিভার আলোক শিখা

 


- সপ্তমিতা নাথ

শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছিল সেদিন মেয়েটি। সবে মাধ্যমিকের ফলাফল বেরিয়েছে। এই উষ্ণ অভ্যর্থনার উষ্ণতা সহ্য করে উঠতে পারে নাই , বিশেষ করে চোখ দুটি, রক্তিম ঝলসানো চোখে ভেসে উঠেছিল অতীতের ছেঁড়া, ফাটা, ভাঙ্গা কালো পর্দার স্মৃতি। গোটা উপত্যকার ছোট বড় সংগঠন ব্যক্তি বিশেষ আজ প্রতিভার পাশে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু  প্রতিভা  কি চায়? প্রতিভার কী চাওয়া উচিত বা অনুচিত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আত্মবিশ্বাসটুকু গড়ে ওঠার আগেই দুমড়ে মুছড়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল তার শৈশব।  সে আর  কেউ না  তারই নিজের পিতা । প্রতিটি মেয়েরই শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম নায়ক তার বাবা, কিন্তু কেন প্রতিভার ক্ষেত্রে তা বিপরীত! কেন তার বাবা নায়ক না হয়ে খলনায়ক এর প্রতিছবি হয়ে আজ চোখের অশ্রু হয়ে ভেসে গুলিয়ে যাচ্ছেন তার এই খুশির দিনে?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন কক্সা তিন এ, রোজ রাতের মতই সেই রাতও কালো ছিল কিন্তু নেমে এসেছিল অঘোর অমবস্যা, প্রতিভার জীবনে। প্রতিবারের মত মদাসক্ত বাবা ঘরে এসে মাকে প্রতিদিনের নিময়ের  প্রহার সেরে  বিশেষ করে যে কাজ সম্পাদন করলেন সেটি হলো প্রতিভার সমস্ত বইপত্র উনুনে দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা সেদিন থেকেই শুরু হলো প্রতিভার জীবনের পিছিয়ে যাওয়ার উন্নতির দিনগুলো।

রোগাক্রান্ত মা আর বাবাকে নিয়ে সংসার। বাবার সিদ্ধান্তই সর্বোপরি। আর আত্মীয়-স্বজন ও সমাজ? সে তো আগে থেকেই ছাপ নিয়ে বসে আছে প্রান্তিকের, কাজেই প্রতিবাদ তো প্রশ্নই ওঠে না। এ তো এক স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন ছবি এই সমাজের। ধীরে ধীরে বয়স বাড়তে থাকে সময়ের টানে হঠাৎ একদিন সার্ভে করতে এসে শিখা ম্যাডামের হাতে পড়ে যায় প্রতিভা। সরকারি কর্মজীবী, শিক্ষা বিভাগের বিশেষ প্রশিক্ষণ সেন্টারের প্রশিক্ষক। শিখা মেয়েটিকে দেখেই তার খোঁজ খবর নিলেন এবং তার ইতি বৃত্তান্ত জেনে তার মা এর কাছে অনুমতি চাইলেন। মেয়েটিকে তার বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার।  কিন্তু অক্ষম মা পিতার অনৈতিক কাজের ভারে আড়ষ্ট। সেখানে বাবাকে না জানিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আস্বস্ত করলেন শিখা ম্যাডাম প্রতিভার মা প্রণতিকে।

প্রতিভার জীবন শিখার আলোতে আলোকিত হতে শুরু হলো।  ব্রিজ কোর্স শেষ করে বয়স অনুযায়ী ক্লাসে ভর্তি হলো শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায়। কিন্তু নিয়তির খেলা অন্য এক গল্প লেখার  ফন্দি আঁটছে। যার ভয় ছিল সেই বিপত্তি ঘটলো। মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে সে সংবাদ বাবার অগোচরে থাকলো না  তারপর ঝরাক্রান্ত এক রাতের তুমুল  সংঘাতের পর এবার মা ও মেয়ে গৃহহীন এবং আশ্রয় হলো মামার বাড়িতে।

কিছুদিন বেশ ভালোই কাটলো তারপর শুরু হলো ভাইয়ের দৈমাত্রিক ব্যবহার । ভাইয়ের  পরিবারে দিদির অতিরিক্ত খরচের বোঝা কে বইবে? অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা বাবদ টাকা কোথা থেকে আসবে? জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে ঢালের মত খাড়া শিখার কাছে গেল প্রতিভা। তবে এবার অনেকটাই শক্ত পোক্ত মানসিকতা, যেকোন পরিস্থিতিতেই পড়া চালিয়ে যাবে । শিখার মনোবল যেন ফোঁয়ারার মতো উচ্ছাসের সাথে বেড়ে গেল সেদিন, যা চেয়েছিল তাই  বুঝি হলো। সে দেখতে পেয়েছিল প্রতিভার  মধ্যে অঙ্কুরিত হচ্ছে  আত্মবিশ্বাসের বীজ।

প্রতিভার জীবনের আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্ভুদ্ব করলেন শিখা ম্যাডাম। বললেন এবার তোর পড়াশোনা সাথে সাথে সাবলম্বী হতে হবে ব্যবস্থা কি? ‘সেটা আমি করে দিচ্ছি, ছোট ছোট ছাত্রদের পড়াবি আমি সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি  শুরু হলো নতুন যাত্রা কিন্তু নিয়তি আরো কিছু চাইছে প্রতিভার কাছ থেকে। দিন দিন অবহেলা বাড়তে থাকলো মামার বাড়িতে। প্রতিভা এতদিনে অনেক শক্ত, তাই শিখা ম্যাডামের পরামর্শ নিয়ে আত্মীয়তার যবনিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো প্রতিভা। মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল অজানা ঠিকানায়। ছোট একখানা  ঘর ভাড়া  করলো। এবার দায়িত্বও কর্তব্যের ভাড় অনেকটাই  যা সামলাতে শুধুমাত্র ছাত্র পড়ানো দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ যে ছাত্রগুলো পড়াতো তারা তো সেই প্রান্তিক সমাজেরই কাজেই আর্থিক সহায়তায় বা পারিশ্রমিক খুবই সামান্য। বড় বাবুদের দ্বারস্ত না হলে মায়ের ঔষধ, ঘর ভাড়া ও দুজনের পেট ভরে দুবেলা খাওয়া হয়তো সম্ভব নয়। অবশেষে বাধ্য হলো প্রতিভা বাসন ধোওয়া ও কাপড় কাঁচার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে, বড় বাবুদের ঘরে। সকালে কাজ সেরে স্কুলে যায় ও দুপুরে মা এ ঝি ত্র দুটা খেয়ে বসে পড়ে ছাত্র পড়াতে কথায় আছে আলস্যই দৈন্য দীনের প্রসূতি ও পরিশ্রমই সফলতার সোপান। সকলের সহায়তা ও সহযোগিতায় প্রতিভা বড় কলেজে ভর্তি হলো।

                আজ বিফলতার সাথে সমরযুদ্ধে জয়ী প্রতিভা কৌশল শিখে গেছে বিপদের সাথে কিভাবে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হয়। তাহলে কি সে সফল? তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির পেছনে যারা  রয়েছেন তবে কি তাদের ধন্যবাদ জানানো দরকার? নাকি বয়সের আগে প্রাপ্তমনস্ক হয়ে যাওয়ার জন্য কিংবা তার শৈশব কেড়ে নেওয়ার জন্য তাদের দোষারোপ করা উচিত? আজ মানসিক ভারসাম্য সামলাতে পারছিল না, প্রতিভার দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা বইছে। ঘরের এক কোনাতে লুকিয়ে রেখেছে প্রতিভা নিজেকে! যখন বাইরে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি-বিশিষ্ট সবাই দাঁড়িয়ে আছেন ওর সাথে দেখা করে সাহায্যের হাত বাড়াতে। পত্রপত্রিকা সংবাদ মাধ্যম সব কিছুতেই প্রতিভা তার সমরযুদ্ধের কাহিনী ও মাধ্যমিকের ফলাফলের জন্য শীর্ষে।

প্রতিভার প্রদীপ, শিখার দীপ্তিমা, আলোক না পেলে হয়তো ডুবে যেতো  অতল অন্ধকারে । অন্ধকারের সমাবেশে এরকম আরো অনেক শিখাই আলোকিত করতে পারবে হাটে , দোকানে  রাস্তায় রোজ দেখা পাওয়া বিবর্ণ প্রতিভাগুলোকে। হয়তো বা যদি কখনো হঠাৎ ছিটকে পড়ে কোন প্রদীপের অল্প আলোক শিখা ।


এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...