গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪

বসন্তের ভালোলাগা

 


                                        - শৈলেন দাস 

ভরদুপুরে প্রায় দেড় ঘন্টা ড্রাইভ করার পর ব্লকের রাস্তা অতিক্রম করে একটি কালো রংয়ের ফোর'হুইলার এসে থামলো গ্রামের  শেষ প্রান্তে গ্রামটির নাম সন্তোষপুর। ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নামল সোহিনী ঘাড় ঘুরিয়ে দুচোখ ভরে দেখল সবদিক তারপর কল করল মোবাইলে।

মাত্র মিনিট সাতেকের হাঁটাপথ, তারপর টিলার উপরে পর্যটন স্থল। জায়গাটির নাম "পাঁচাল"। সেখানে ঘুড়ি উৎসবে যোগ দিতে শিলচর থেকে এসেছে সে। সামাজিক মাধ্যমে এই উৎসবের কথা জেনে আগ্রহ প্রকাশ করতেই সাড়া দিয়েছিল তার ফেসবুক ফ্রেন্ড ধীরেন দাস। সে-ই জানিয়েছিল, এই উৎসব শিশুদের নিয়ে। শিশুরা প্রাণের আনন্দে হই হই রই রই করে রঙ-রঙিলা ঘুড়ি উড়ায় আর বসন্তবাতাস সেই ঘুড়িদের সাথে লাগিয়ে দেয় হুটোপুটি। মেয়েরা আলপনা দেয়, ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা মায়ের, দিদিদের শাড়ি পরে সেজেগুজে আসে নাচবে-গাইবে বলে। বয়সের কোন বাধা নেই, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রামের সবাই চলে আসে ঘুড়ি উৎসবের আনন্দ-হাটে।

সোহিনীর মনে প্রথমে কিছুটা সঙ্কোচ ছিল। শুধুমাত্র ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাদে ধীরেনের ডাকে এখানে তার চলে আসা ঠিক হয়েছে কি? সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে আজকাল কত রকম অপকর্মই তো চরিতার্থ করছে কিছু লোকে! কিন্তু না, এখানে আসার পর ভীষণ ভাল লাগল তার। ধীরেন সোহিনীকে ঘুরে দেখালো চারপাশ। পাঁচালের পশ্চিম দিকে বিস্তৃত শনবিল। পূর্ব দিকে ছোটকোনা গ্রাম। ধীরেন হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল ফেসবুকে সোহিনীর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা প্রীতিভাজনব্যক্তি'র বাড়ি। সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় সেখানকার আরও দু একজন বন্ধুর সাথে পরিচিত হল সে। তারপর সবাই মিলে কিছু ছবি তুলল মুঠোফোনে।

সোহিনী দেখল ঘুড়ি উৎসবে যোগ দিতে শিলচর থেকে কবি চন্দ্রিমা দত্তও এসেছেন তার প্রিয়জনদের সাথে। অন্যদের সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত কবি। সোহিনী কাছ থেকে কবিকে দেখার মনোবাসনা নিয়ে এগিয়ে যেতেই শুনতে পেল কবি বলছেন - 'শনবিলের এই ঘুড়ি উৎসব যেন প্রান্তিক এই এলাকার মানুষের প্রাণের উৎসব। কোনও কৃত্রিম দেখনদারি ব্যপারই নেই। বয়স এখানে কোনও বাঁধা নয়, আনন্দই শেষ কথা। তাছাড়া এই ধরনের ছোট ছোট উৎসবগুলোর আয়োজন বলতে গেলে এক নিভৃত আন্দোলনও বটে। আমার বিশ্বাস, একদিন সরকারের সুনজরে শনবিল আসবে আর শনবিলের গোটা সমাজ উন্নততর জীবনে যাপন করবে তাদের দিন।' সোহিনীরও মনে হল ঠিক তাই। এই উৎসবের আনন্দ আমেজ তার মনকেও ছুঁয়েছে ভীষণভাবে। সে অনুভব করল এই উৎসবের আয়োজক সংস্থার সবাই তো বটেই এখানকার সাধারণ মানুষও খুব আন্তরিক এবং সমাজবন্ধু। তারা অপরিচিত সোহিনীকেও নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিল আপন ভেবে। আর ধীরেনের ব্যবহারে তো সে অভিভূত একেবারে।

দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল। টিলার সবুজ মাঠ দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে সোহিনী। ধীরেন একদৃষ্টে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখল তাকে। তারপর ডেকে বলল - 'কেমন লাগল আমাদের গ্রাম, বললে না যে? এখানকার মানুষজন, এই ঘুড়ি উৎসব।' ঘুরে দাঁড়ালো সোহিনী। বেশ কিছুক্ষণ চারপাশে দেখার পর, দুবাহু ছড়ায়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে উচ্চস্বরে বলল- 'আই লভ ইট।' তারপর এগিয়ে এসে লাজুক হেসে ধীরেনের চোখে চোখ রেখে বলল - 'শনবিল আমার খুব প্রিয় এবং এখানকার মানুষজনও।' বলেই চটপট গাড়িতে উঠে পড়ল সে। বসন্তের মধুর ভালোলাগার মুগ্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ধীরেন, চারপাশের বিশাল টিলা আর উঁচু নীচু প্রান্তর জুড়ে কেবল সহজিয়া আনন্দের ঢেউ ...।

বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪

অবস্থান

 


-শর্মিলী দেব কানুনগো

-- বৌদি এই ক্রিমটা আমারেও একটা আনিয়া দিও নমিতার কথায় গা পিততি জ্বলে উঠে বিথির। এই এক সমস্যা হয়েছে এখন। বিথির যা আছে সব নমিতারও চাই। আশ্চর্যনিজের ওজন বুঝে চলতে পারে না মেয়েটা। মুখে অবশ্য নমিতাকে কিছু বলে না সে। না বলার কারণ আছে। নমিতাকে কেন্দ্র করেই সকাল থেকে বিকেল আর বিকেল গড়িয়ে রাত নামে বিথির বাড়িতে। দুই হাতে বিথির সংসার সামলায় নমিতা। একদিন নমিতা কাজ কামাই করলে বিথি চোখে অন্ধকার দেখে।

    রাত আটটায় বিথিদের রাতের খাবার টেবিল সাজিয়ে বাড়ি ফিরে সে। আর ভোর ভোর আবার এসে এ বাড়িতে ঢুকে। নমিতা ছাড়া কি একদিন ভালোভাবে থাকা সম্ভব এদের! এরজন্য অবশ্য বেতন পায় নমিতা। কিন্তু ইদানিং এক বায়না শুরু হয়েছে তার। বিথির মতো সবকিছু চাই তার। বিথি যে বেড কভারটা আনলো সেদিন সেল থেকে এমন একটা চাই তারও অনলাইনে একটা বাড়িতে পরার চপ্পল আনলো বিথি। অমনি নমিতাও বায়না ধরলো। তারও চাই এমন একটা চপ্পল অগত্যা মুখে কিছু বলতে না পেরে ভেতর ভেতর রাগে পুড়তে থাকে বিথি।

    নমিতা কাজ কর্মে খুব চটপটে। বিথির সকল ফাই ফরমাস হাসি মুখে পালন করে। সবাই বলাবলি করে ভাগ্য করে এমন কাজের মেয়ে পেয়েছে বিথি। কিন্তু এর বিনিময়ে যে কত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে বিথিকে সেটা কে বুঝবে। বিথির নীল রঙের নাইটি দেখে এখন নমিতারও চাই এমন একটা নাইটি। আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুঁজে পেতে এনে দিতে হলো এমন একটা নাইটি। মনকে বোঝালো দুধ খেতে হলে গরুর লাথিকে মেনে নিতেই হয়। তবে নমিতা প্রথম যেদিন এ বাড়িতে কাজ করতে এসেছিলো সেদিন চায়ের কাপ হাতে মাটিতে বসেছিলো। বিথিই তখন বলে ছিল - এমামাটিতে কেনো বসলে গো... চেয়ারে এসে বস। আমরা সবাইকে সমান দেখি যদিও একথা মন থেকে বলেনি সে। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিলো। যেকোনভাবে নমিতার মন জয় করতে হবে। কাজের মেয়ে পাওয়া যত কঠিন এরচেয়ে কঠিন একে টিকিয়ে রাখা। আর তাই আদর দিয়ে দিয়ে সে নিজেই নমিতাকে মাথায় তুলে।

     বিথির মেয়ে কেয়া ক্লাস নাইনে পড়ে। অনেক কষ্ট করে নমিতাও ওর মেয়েটাকে স্কুলে পড়ায় ।  দুটো বাড়িতে এক্সট্রা কাজ করে মেয়ের প্রাইভেট টিউশনের পয়সা জোগাড় করে। স্বপ্ন দেখে কেয়ার মতো একদিন তার মেয়েও দিদিমণি হবে ইস্কুলের। বিথির বড্ড রাগ হয় এসব শুনলে। শখ কতোকাজের মেয়েতেনার মেয়ে নাকি আবার ইস্কুলে পড়াবে…। চাপা রাগ গোপন করে নমিতার সামনে। আড়ালে গজগজ করে। কেয়া আর ওর বাবা হাসে। বিথির এসব ওরা বুঝতে চায় না। বরং কেয়া হেসে হেসে বলল - কি হয় মা, নমিতাদির মেয়ে দিদিমণি হলে? এত কষ্ট করছে নমিতাদিমেয়েটা চাকরি পেলে ওরা তো একটু ভালো থাকতে পারবে।

    কি হয় সেটা বিথিও ঠিক বুঝতে পারে না। কেমন যেন মনে হয় সে হেরে যাবে নমিতার কাছে। সেই হার যে কিসের হার সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। তবে একদিন সকালে নমিতা হেরে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল তার মেয়েটা পাড়ার একটা মোটর মেকানিকের সাথে পালিয়ে গেছে। বোধহয় ওরা বিয়ে করেছে। বিথি নমিতাকে সান্ত্বনা দিলো। কি আর করাযার যেমন কপাল…। নমিতার বুক ফাঁটা আর্তনাদ আর বিলাপের ফাঁকে বিথির বুক থেকে একটা নিশ্চিন্তের নিশ্বাস  বেরিয়ে এলো।

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...