- শৈলেন দাস
ভরদুপুরে প্রায় দেড় ঘন্টা
ড্রাইভ করার পর ব্লকের রাস্তা অতিক্রম করে একটি কালো রংয়ের ফোর'হুইলার
এসে থামলো গ্রামের শেষ প্রান্তে। গ্রামটির
নাম সন্তোষপুর। ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নামল সোহিনী। ঘাড়
ঘুরিয়ে দুচোখ ভরে দেখল সবদিক তারপর কল করল মোবাইলে।
মাত্র মিনিট সাতেকের হাঁটাপথ, তারপর
টিলার উপরে পর্যটন স্থল। জায়গাটির নাম "পাঁচাল"। সেখানে ঘুড়ি উৎসবে
যোগ দিতে শিলচর থেকে এসেছে সে। সামাজিক মাধ্যমে এই উৎসবের কথা জেনে আগ্রহ প্রকাশ
করতেই সাড়া দিয়েছিল তার ফেসবুক ফ্রেন্ড ধীরেন দাস। সে-ই জানিয়েছিল, এই
উৎসব শিশুদের নিয়ে। শিশুরা প্রাণের আনন্দে হই হই রই রই করে রঙ-রঙিলা ঘুড়ি উড়ায়
আর বসন্তবাতাস সেই ঘুড়িদের সাথে লাগিয়ে দেয় হুটোপুটি। মেয়েরা আলপনা দেয়, ছোট্ট
ছোট্ট মেয়েরা মায়ের,
দিদিদের শাড়ি পরে সেজেগুজে আসে নাচবে-গাইবে বলে। বয়সের
কোন বাধা নেই,
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রামের সবাই চলে আসে ঘুড়ি উৎসবের
আনন্দ-হাটে।
সোহিনীর মনে প্রথমে কিছুটা
সঙ্কোচ ছিল। শুধুমাত্র ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাদে ধীরেনের ডাকে এখানে তার চলে আসা
ঠিক হয়েছে কি?
সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে আজকাল কত রকম
অপকর্মই তো চরিতার্থ করছে কিছু লোকে! কিন্তু না, এখানে
আসার পর ভীষণ ভাল লাগল তার। ধীরেন সোহিনীকে ঘুরে দেখালো চারপাশ। পাঁচালের পশ্চিম
দিকে বিস্তৃত শনবিল। পূর্ব দিকে ছোটকোনা গ্রাম। ধীরেন হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল
ফেসবুকে সোহিনীর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা প্রীতিভাজনব্যক্তি'র বাড়ি।
সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় সেখানকার আরও দু একজন বন্ধুর সাথে পরিচিত হল সে। তারপর
সবাই মিলে কিছু ছবি তুলল মুঠোফোনে।
সোহিনী দেখল ঘুড়ি উৎসবে যোগ
দিতে শিলচর থেকে কবি চন্দ্রিমা দত্তও এসেছেন তার প্রিয়জনদের সাথে। অন্যদের সাথে
আলাপচারিতায় ব্যস্ত কবি। সোহিনী কাছ থেকে কবিকে দেখার মনোবাসনা নিয়ে এগিয়ে
যেতেই শুনতে পেল কবি বলছেন - 'শনবিলের
এই ঘুড়ি উৎসব যেন প্রান্তিক এই এলাকার মানুষের প্রাণের উৎসব। কোনও কৃত্রিম
দেখনদারি ব্যপারই নেই। বয়স এখানে কোনও বাঁধা নয়, আনন্দই
শেষ কথা। তাছাড়া এই ধরনের ছোট ছোট উৎসবগুলোর আয়োজন বলতে গেলে এক নিভৃত আন্দোলনও
বটে। আমার বিশ্বাস,
একদিন সরকারের সুনজরে শনবিল আসবে আর শনবিলের গোটা সমাজ
উন্নততর জীবনে যাপন করবে তাদের দিন।' সোহিনীরও মনে হল ঠিক তাই। এই উৎসবের আনন্দ আমেজ তার মনকেও
ছুঁয়েছে ভীষণভাবে। সে অনুভব করল এই উৎসবের আয়োজক সংস্থার সবাই তো বটেই এখানকার
সাধারণ মানুষও খুব আন্তরিক এবং সমাজবন্ধু। তারা অপরিচিত সোহিনীকেও নিজেদের দলে
ভিড়িয়ে নিল আপন ভেবে। আর ধীরেনের ব্যবহারে তো সে অভিভূত একেবারে।
দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল।
টিলার সবুজ মাঠ দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে সোহিনী। ধীরেন একদৃষ্টে তাকিয়ে কিছুক্ষণ
দেখল তাকে। তারপর ডেকে বলল - 'কেমন
লাগল আমাদের গ্রাম,
বললে না যে? এখানকার মানুষজন, এই ঘুড়ি উৎসব।' ঘুরে দাঁড়ালো সোহিনী। বেশ কিছুক্ষণ চারপাশে দেখার পর, দুবাহু
ছড়ায়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে উচ্চস্বরে বলল- 'আই লভ ইট।'
তারপর এগিয়ে এসে লাজুক হেসে ধীরেনের চোখে চোখ রেখে বলল - 'শনবিল
আমার খুব প্রিয় এবং এখানকার মানুষজনও।' বলেই চটপট গাড়িতে উঠে পড়ল সে। বসন্তের মধুর ভালোলাগার
মুগ্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ধীরেন, চারপাশের বিশাল টিলা আর উঁচু নীচু প্রান্তর জুড়ে কেবল
সহজিয়া আনন্দের ঢেউ ...।
দারুন লাগলো গল্পটি। আর চিন্তা নেই শনবিল এবার সরকারের নজরে পড়েছে। এখানে পর্যটন স্থল অবশ্যই গড়ে উঠবে।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ মতামত ব্যক্ত করার জন্য। শনাবিল যেন সবার সুনজরে থাকে।
মুছুন