পূজা সংখ্যা ১৪২৫ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পূজা সংখ্যা ১৪২৫ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

নৃপেন্দ্র দাস এর দুটি কবিতা



চেতনা


হে আমার দরিদ্র শনবিল
হে আমার কাঙ্গাল শনবিল
হে আমার নির্যাতিতা শনবিল
উঠো জাগো নিশী অবসান প্রায়।
চিৎকার করো দুধের শিশুর ন‍্যয়।

মৌন কেন তুমি জননী
মৌন কেন তুমি নির্যাতিতা নারী
মৌন কেন তুমি নব শিশু
মৌন কেন তুমি কিশোর কিশোরী
উঠো জাগো নিশী অবসান প্রায়।
চিৎকার করো দুধের শিশুর ন‍্যয়।

ও আমার জন্মভূমিগো তুমি জাগো
ও আমার শনবিলগো তুমি উঠো
ও আমার চাষা ভাই উঠো জাগো
ও আমার মৎস্যজীবী ভাই উঠো জাগো
উঠো জাগো নিশী অবসান প্রায়।
চিৎকার করো দুধের শিশুর ন‍্যয়।

...


প্রিয় শনবিল


হে সোনার রবি সোনার আলো
সিগ্ধ পরশ তৃষার ভালবাসা।
জাগাও জাগাও হে তুমি
মৌন সমাজের নিদ্রা;
জাগাও নিরাশা মানুষের অন্তরে আশা।

সুপ্রভাতে যেমন শিশির ভেজা আকাশে
সোনালী আলোয় আলোকিত তুমি।
তেমন অসহায় সমাজের অন্ধকার
নিরীহদের জীবনের যত আঁধার
দুরে সরিয়ে দাও নব রবি তুমি।

হে বিচিত্র পৃথিবী সবুজ অরণ্য
তোমার সবুজে শ্যামলে,
ভরিয়ে দাও রাঙিয়ে দাও শনবিল।
তোমরা উঠে এসো হে কৃষক,
তোমরা উঠে এসো হে মৎস্যজীবী
সূর্যের মতো তেজস্ক্রিয় হয়ে
অন্ধকার থেকে এসো বাহির হয়ে।

সুমন দাস এর দুটি কবিতা



ক্ষত

সাতটি দশক আগে ভাগ হলো দেশ
সব ধ্বংস রাজনীতির পাশা খেলায়,  
ক্ষমতার লিপ্সায় ওরা দিল কূটচাল
মানুষও উঠলো মেতে ধর্মের নেশায়।

স্বাধীনতার রব উঠলো যে চারিদিকে
ধর্মের ভিত্তিতেই চাই আলাদা ভূখণ্ড,
রাজনীতির ব্যবসায়ীরা তো হর্ষল্লাসে
নিজের তাগিদে দেশ করলো দ্বিখণ্ড।

পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকে
ক্ষত নিয়ে নতুন ঠিকানায় দিল পাড়ি, 
কোথাওবা পড়ে রইল সোনার ফসল
কতো কতো জমিদারের দালান বাড়ি। 

কতো স্ত্রীর মুছে গেল সিঁথির সিঁদুরটা
কোল খালি হলো যে অনেক মায়ের,
ভাইটা হারালো প্রিয় ভাইকে চিরতরে
সম্ভ্রম হারাতে হলো কতো যে বোনের।

বুকে ক্ষত নিয়ে নতুন স্থানে নতুন করে
শুরু হল যে জীবনের আরেক সংগ্রাম,
ফের নিজেকে স্বদেশী প্রমাণের পালা
তাইতো ছুটছে অনেকের কালো ঘাম।

পূর্বপুরুষ ক্ষত নিয়ে হলেন বাস্তুহারা
উত্তরাধিকারী আজও তা বয়ে চলছে,
অজানা ভয়ে যে মরছে তিলে তিলে
শেষ ঠিকানাও কি হারিয়ে যাবে পাছে?

সারেনি তো এখনো পর্যন্ত কত জনার
সাত দশক আগেকার ওই পুরনো ক্ষত,
প্রমাণের গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে ফের কি
নতুন ক্ষত বুকে নিয়ে হতে হবে বাস্তুচ্যুত?

...


অনুকরণ
     

যদি কাউকে করো অনুকরণ
তবে সূর্যকে করো, চাঁদকে নয়।
সূর্যের যে কোনো বদনাম নেই
চাঁদের গায়ে কিন্তু কলঙ্ক হয়।।

চাঁদের পানে পারবে তাকাতে
যতক্ষণ তব ইচ্ছে আছে মনে।
ভরদুপুরে পারবে কি তাকাতে
নীলাভ আকাশের সূর্যের পানে?

নিজেকে গড়তে হবে সেই ভাবে
যাতে কেউ কলঙ্ক খুঁজে না পায়।
প্রতিটি পদক্ষেপে যেন তোমার
সুনামের ঔজ্জ্বল্যতাটুকু ছড়ায়।।

পাছে অনেকেই হিংসায় জ্বলবে
হয়তোবা চাইবে তোমার সর্বনাশ।
বাধা বিপত্তি পিছনে ঠেলে দিয়ে
কাজে হতে হবে সূর্য সম প্রকাশ।।

মেঘের আড়ালে কিন্তু সূর্য হাসে
ছড়ায় যে তার উজ্জ্বল বিচ্ছুরণ।
তেমনি কালো মেঘ দূরে সরিয়ে
গঠন করো তোমার এই জীবন।।

প্রসেনজিৎ দাস এর দুটি কবিতা



প্রতিদান কী দিয়েছ


ভাই কী দিয়েছ প্রতিদান তাঁদের রক্তের বদলে
যাঁরা দিয়েছে প্রাণ  আত্মাহূতি দেশ গড়ার
তাঁদের আদর্শ মেনে করি না সম্মান
অবহেলিত তাঁরা আজ আমাদের সবার  অন্তরে
দিনের আলোতে তাঁদের স্ট্যাচুতে  কুসুমদাম পড়িয়ে
আর রাতের অন্ধকারে নোংরা আবর্জনা
ফেলে দিলে তাদের ওপরে
তাদের রক্ত বয়ে যাওয়া রক্তনদীতে
তোমরা নিজেরাই দিলে শবদেহ ভাসায়ে
মনের মহানন্দে সময় গুণে।
          
...


অতীত হয়ে গেছি


আমাকে তুমি অন্য কিছু জিজ্ঞেস করো
কিন্তু সম্পার কথা নয়।
সে এখন দালান বাড়িতে সুখে শান্তিতে বাস করে।
সে প্রতিদিন বাস্তব স্বপ্নের সাথে খেলা করে
আমাকে মনে রাখার মতো তার  সময় নেই হাতে 
আমি তো এখন অতীত হয়ে গেছি ।
আমার ভালোবাসার স্মৃতির বোঝা
এখন দাঁড়িয়ে আছে অর্ধ পুড়িয়ে ফেলা
কিংবা ছেড়া খাতার পুরনো মলাঠের মতো
রাস্তা, নর্দমার নোংরা, আবর্জনার ভেতরে
ঘুমিয়ে আছে চিরকালের জন্যে।
তার অন্তরে কি আর ফোটে উঠবে?
আমার প্রথম জীবনে দেওয়া লাল গোলাপ।

আব্দুল হালিম বড়ভূইয়া-র দুটি কবিতা



এক গুচ্ছ কাশ

পথের শেষান্তে একগুচ্ছ কাশ

খুলে দিল তার ফুটন্ত দুয়ার।

অবুঝ আগ্রহে প্রকৃতির বুকে

সাদা পালক তুলে আনন্দ করে।

এক খুশীর বার্তা ছড়ায়ে দিয়ে---

শরৎরাণীকে দেয় আভরণ।

কর্কশদেহে তুলো সাজিয়ে নেয়,

মনুষ্যলোকে মুক্ত ঝরা চাদরে।

বাতাসের দোলায়, জগৎ ভোলায়

আগমণী বার্তার আবেগ রসে।

শুভ্র মনোহর এই কাশফুল

আশ্বিনের আঙিণায় হিমের পরশ।

...


শিউলি


নূতনের গন্ধে খুঁজে বেড়াই---

কী জানি ; কী একটা উদ্যম এসেছে,

আকাশের নীলিমায় ঘন মেঘ;

বাতাসও একটু ভার।

গরমের সকাল-সন্ধ্যায়; শিশির কণা,

গাছের ডালে শিউলি ফুটেছে

মুকুলেও গেছে ভরি।

মাটির টানে উপচে পড়া

লাল-সাদা দেহ নিয়ে কী বাহার!

অশেষ মগ্ন আনন্দলোক,

শিউলি ফুটে গেছে এই ভেবে।

বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৯

বাবুল চন্দ্র দেব এর দুটি কবিতা



আইনের চোখে কালো কাপড়

যখন দেখি শতোর্ধ বৃদ্ধ ভারতীয় কিনা
প্রমাণ দিতে আদালতে ঘন্টার পর ঘণ্টা
বারান্দায় পড়ে থাকেন, তখন জানতে
ইচ্ছে হয়, স্বাধীনতা তোমার বয়েস কত!
ভারত, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান
শতোর্ধ তো এখনো নয়।

যখন দেখি কাগজের প্রামাণিকতায়
মাকে বন্দি হতে হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে
তখন জানতে ইচ্ছে হয় আইনের কাছে
কোথায় হারিয়ে গেল মানবতা!
একাত্তরটাই সীমারেখা আর পরিচয়?

যখন দেখি ঘরের একমাত্র সম্বল
ছেলেটির খোঁজাখুঁজি চলে আর
নদীর জলে ভেসে উঠে পচাগলা লাশ
তখন জানতে ইচ্ছে হয় খসড়ার কাছে
প্রাণ নিয়ে খেলার কে দিলো অধিকার!

উন্মাদ উল্লাসে বিজয় কীর্তন যখন দেখি
কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় জনতার
তখন ঘৃণা আর লজ্জায় জানতে ইচ্ছে হয়
এই টাকা দিয়ে করা যেতো না দূর
বেকারত্বের হাহাকার!

ক্রান্ত হও ভাই, ভেঙ্গে দাও সংকীর্ণ যত
মানষিকতার বেড়াজাল, উন্মুক্ত আকাশ
এসো হাতে হাত ধরে মানুষের কথা বলি
উড়াই ত্রিরঙা নিশান ভারত মাতার।
পাঞ্জাব যদি পাঞ্জাবির, বিহার যদি
বিহারির, আসাম যদি আসামির
তবে ভারত দেশটি কার!

প্রাণের গ্রন্থ সংবিধান, জানতে ইচ্ছে হয়
আইনের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য আইন
নাকি জীবন নিয়ে খেলা ভাগ্যবিধাতার।
আইনের চোখে কালো কাপড়
বড় লজ্জার, বড় লজ্জার, বড় লজ্জার!

....

অন্ধ নাচ

বন্যার কান্না ভাসছে এখনো
দুঃসহ জীবন রাত্রিবাস
আর্ত যন্ত্রণা হতাশার মেঘে
তপ্ত,  ক্লান্ত, উপবাস।

ঘৃতের বাতি ধূপ চন্দন
ঢাকে পড়লো কাটি
রঙ, ঢঙ আর সাড়ম্বরে
ভাবের পরিপাটি।

কপালে যার কাল বৈশাখী
উত্তাল সাগরে কিসের ভয়?
জীবন তো আর ঘুমের ঘোরে
অলীক কোনো স্বপ্ন নয়।

তালের পাতার নৌকা দিয়েই
জীবন নদীর পারাপার
দুহাত যাদের কাণ্ডারি হয়
প্রয়োজন কি মহামায়ার!

ক্ষুদার পেটের জ্বালা কি আর
জোড়ায় শিউলি ফুলে
অন্ধ নাচের উন্মাদনা
কাণ্ডজ্ঞান ভুলে।

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

আমার কর্মজীবন নিয়ে আমি গর্ববোধ করি



।।রেবতী মোহন দাস।।

সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম আমার । অভাব অনটনের জন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর সংসারের কাজে লেগে যাই । এমন কোন কাজ নেই যা করিনি । পড়াশোনা ছাড়ার 6 বৎসর পর আবার স্কুলে ভর্তি হয়ে 1975 ইং মেট্রিক পরীক্ষা পাশ করি শ্যামাচরণ দেব বিদ্যাপীঠ শিলচর থেকে । তারপর ইন্টারমিডিয়েট কাছাড় কলেজ থেকে প্রথম বর্ষ পাশ করে দ্বিতীয় বৎসর পরীক্ষা দিতে পারিনি কারণ সেই দারিদ্রতা । লেগে যাই কাজে । গৃহস্থী, মাছ মারা আরো কত কিছু । কিছু দিন পর অবস্থার উন্নতি হল । তখন মনে হল অনেক গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা পিতামাতার অবহেলার জন্য পড়তে পারে না । আমি চেষ্টা করব ওদের জন্য কিছু করতে । আমাদের গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রীযুক্ত গোপেশ রঞ্জন দাস মহাশয়ের প্রেরণায় আমাদের বাঘমারা গ্রামের পাশেই এক্স-টি গার্ডেন শ্রমিক 6 নং (আইরংমারা) গ্রাম । বর্তমান আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে দেওয়ালের নিকটে । তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম গন্ধই ছিল না, 1977 ইংরেজির কথা । গ্রামের লোকেরা দিবারাত্র সমানভাবে মাদকে আসক্ত ছিল সেই গ্রামে পরপর কয়েকটি সভা করে উনাদের মতামত নিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক ভেঞ্চার স্কুল স্থাপন করি ।  না ছিল ঘর না ছিল আসবাবপত্র । আমি উনাদের সাথে গিয়ে জঙ্গল থেকে বাঁশ এনে একটি ঘরের ব্যবস্থা করি । ছন বাঁশের ঘর কতদিনই বা টিকবে ? ভেঙ্গেও গেল । তখন গাছ তলায়, গোয়াল ঘরে, মানুষের ঘরের বারান্দায় ক্লাস করেছি । বইপত্র, খাতা, কলম জোগাড় করতে আমার যে কি কষ্ট হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না । তার উপর নেশাখোর মানুষের উৎপাত- 'আমাদের স্কুল লাগবে না' । কিন্তু ওই গ্রামেরই কিছু মুরব্বি আমাকে বলতেন মাস্টারবাবু এদের কথায় কান দেবেন না । অনেক ভাবনা চিন্তার পর আমি প্রায় প্রতিজ্ঞাই করে ফেললাম আমি স্কুল বানাবোই । নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আসলো সেই শুভ দিন, 1983 ইংরেজির পহেলা  অক্টোবর । আসাম সরকার স্কুলটি প্রাদেশিকরন করলো । এর পূর্বে অনেকবার গুয়াহাটি যাওয়া আসা করতে হয়েছে । অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাহায্য পেয়েছি । স্কুলের অবস্থা ভালো ছিল না । তখন ধলাইর বিধায়ক ছিলেন আমার বন্ধুবর বর্তমান আসাম সরকারের বরিষ্ঠ মন্ত্রী শ্রীযুক্ত পরিমল শুক্লবৈদ্য মহাশয় । উনাকে বললাম স্কুল তো হল ঘরের কি হবে ? তখন তিনি এক লক্ষ টাকা দিলেন । একটা পাকা ঘর হয়ে গেল । তখন থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি । স্কুলে শিক্ষক আমি একা । ডি.আই. মহোদয় কে বলে আরো একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করা হলো । ভালো মতে স্কুল চলছে ।
চাতলা হাওর তথা আশেপাশের বেশ কিছু স্কুল নিয়ে বাঘমারা কেন্দ্র । সম্পাদক ছিলেন শ্রীযুক্ত গোপেশ রঞ্জন দাস । উনার ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য আমাকে বললেন কেন্দ্র সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে । নুতন চাকুরী বয়স কম, এগুলি আমি বুঝিনা । কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে নির্বাচিত করা হলো কেন্দ্র সম্পাদক হিসাবে । দীর্ঘ 18 বৎসর সততার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছি । আসলো 2003 ইং, সর্বশিক্ষা আরম্ভ হলো । সি. আর. সি. সি. নিয়োগ করা হবে । উক্ত পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হলো । আমি নির্বাচিত হয়ে তরুতাজাবাড়ি সি. আর. সি. সি. তে নিযুক্তি পেলাম । দীর্ঘ 10 বৎসর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। অনেক ট্রেনিং করেছি ।
ধীরে ধীরে আমার অবসর গ্রহণের সময় এগিয়ে আসতে লাগল ।  2015 ইংরেজির 15 ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনে আমি একটি সভা ডাকলাম আমার স্কুলে । সেই সভায় শ্রীযুক্ত পরিমল শুক্লবৈদ্যসহ রাজনীতিবিদরা, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন স্কুলের বর্তমান কর্মরত এবং প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ, গ্রামের মুরব্বি বৃন্দ সহ সর্বস্তরের জনসাধারণ ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন । আমি সভা কে উদ্দেশ্য করে বললাম -'যে জায়গায় স্কুল হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না । সেই জায়গায় সর্বশিক্ষার কারণে তিনটা পাকা স্কুল গৃহ, রান্নাঘর, শৌচালয়, জলের কল সহ সবরকমের সুবিধা তৈরি হয়ে গিয়েছে । দীর্ঘ চাকুরী জীবনে যদি ভুল ভ্রান্তি কিছু করে থাকি তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । এই গ্রামের জনসাধারণ আমাকে দেবতার মতো মান্য করেছে । ওদের সর্বপ্রকার সামাজিক কাজে আমি অংশগ্রহণ করেছি । 48 বৎসর পূর্বে গ্রামের যে অবস্থা বা পরিবেশ ছিল তা আজ আর নেই । প্রত্যেক ঘরের ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন স্কুলে কলেজে পড়ছে । সত্যিই যাহা ভালোলাগা এবং আনন্দের বিষয় ।' সভায় বিভিন্ন বক্তা নিজ নিজ বক্তব্যে প্রশংসায় আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছেন । সকলের শেষে বক্তব্য রাখেন মাননীয় পরিমল শুক্লবৈদ্য মহাশয় । উনার বক্তব্য বলেন, আজ তো বিদায় সভা নয় তবে কেন এই সভার আয়োজন ? কেহ তো এরকম করেননি আপনি কেন করলেন ? আমি বললাম, কেউ এমন সভা করে না বলেই তো আমি করলাম । আমি আরো বললাম মজুমদার বাজারে একদিনের জন্য একটি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছিল, সেই শিবিরে সি. আর. সি. সি., কেন্দ্র সম্পাদক, প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন প্রায় 250 জনের মতো । শিবিরে গুয়াহাটি থেকে আগত প্রশিক্ষক মহাশয় প্রশ্ন করেছিলেন -আপনাদের ছেলে-মেয়েরা কি আপনাদের স্কুলে পড়ে না প্রাইভেট স্কুলে পড়ে ? সভা চুপ, কেউ কিছু বলছেন না । আমি দাঁড়িয়ে বললাম, স্যার আমার ছেলে মেয়েরা সরকারি এল. পি., এম. ই., হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত । তখন প্রশিক্ষক মহাশয় আমার খুব প্রশংসা করেছিলেন । কথাগুলো এই জন্যই বললাম, ব্যতিক্রম আমি সব জায়গায় । তারপর শুক্লবৈদ্যজি আমার জীবনের সব দিক নিয়ে সভায় বক্তব্য রাখলেন, উনার মত বক্তা বলেই বলা সম্ভব । শেষে বললেন আপনি 'ব্যতিক্রমী' বটে । সভার কাজ শেষ ।
তারপর এলো 31 শে আগস্ট 2015 ইং আমার কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার দিন । কি বলবো গ্রামবাসীরা যে কাজটি করলেন তা অবিশ্বাস্য । আমার ডাকা সভার চেয়ে বড় সভা করে সকলকে বুঝিয়ে দিলেন 40 বৎসর পূর্বে যাদের পড়ালেখার বালাই ছিল না, সভ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত অবস্থা তাদের ছিল না আজ সেই গ্রাম কোথায় দাঁড়িয়ে ! সরকারি মানপত্র ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে মানপত্র এবং অজস্র উপাধিতে ভূষিত করলেন আমায় দিলেন নানা উপহার । সভায় ছিলেন আইরংমারা তথা বরাকের গর্ব পরিমল শুক্লবৈদ্যজি, অফিস অথরিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এলাকার মুরুব্বীবৃন্দ, জনসাধারণ, প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ । উপস্থিত গন্যমান্যরা প্রশংসায় আমাকে ভাসিয়ে দিলেন । আমি নির্ধারিত আসনে বসে চোখের জল ফেলছিলাম আনন্দে। শেষে শুক্লবৈদ্যজি আমার জীবনের নানা দিক, সফল জীবন, সামাজিক চিন্তাধারা, স্কুল গঠন ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে বলে বক্তব্য শেষ করলেন ।
সভার কাজ ছল ছল চোখে শেষ হলো । আমার জীবনে এই প্রথম উপলব্ধি করলাম বিদায় যে এত করুন । প্রায় তিন শতাধিক গ্রামবাসী এবং ছাত্র ছাত্রী মিছিল করে আমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন ।
বিভিন্ন স্কুলে সংবর্ধনা, পেয়েছি ব্লক পর্যায়ের, 5 সেপ্টেম্বর 2018 ইং শিক্ষক দিবসে জেলা গ্রন্থাগারে জেলা ভিত্তিক সম্মাননা পেয়েছি। আমার কর্মজীবন নিয়ে আমি গর্ববোধ করি ।

রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮

মহিমাময় 'হিমা দাস'



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা ১৪২৫।।


।।পাপ্পন দাস।।

গেল ৩১ আগস্টের কথা।সেদিনের একটা খবর--
'জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ভারতের সোনার দৌড় ধরে রাখলেন অ্যাথলিটরা'-,আমাকে এবং আমার মতো অনেককে স্বস্তি দেয়।আমরা বুঝতে পারি যে,
অ্যাথলিটরা বরাবরের মতো এবারও আমাদের দেশের মাথা উঁচু করেছেন।যতই তাদের আমরা খুব একটা চালকের আসনে না বসাই,গাড়ি কিন্তু ঠিক চালিয়েই যাচ্ছেন তারা।
    এর আগের দিন(৩০ আগস্ট) দুটি সোনা আসে অ্যাথলেটিক্সে। ৪০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতেন ভারতের মেয়েরা।আর সে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন অসম কন্যা হিমা দাস।অবশ্য এর আগেই তিনি ৪০০ মিটার দৌড়ে রুপো পেয়েছিলেন।আর তাইতো সেদিন তিনিই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।ভারত সহ রাজ্যের আম জনতা যদিও বা এ নিয়ে খুব একটা চর্চার দিকে যাননি,কিন্তু ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে তো এ নিয়ে একটা উত্তেজনা ভাব বিরাজ করছিলই।হিমা দাস এর কী হল,এগিয়েছে নাকি মেয়েটা--এরকম কিছু প্রশ্ন তো মুখে মুখে ছিলই।আর সবশেষে দেখা যায় যে,তিনি হতাশ করেননি আমাদের।
   তিনি ছাড়াও পুরুষদের ১৫০০ মিটার দৌড়ে সে দিনের দ্বিতীয় সোনা এনে দেন জিনসন জনসন।আর সে দিনের জোড়া সোনা নিয়ে ভারতের সোনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩। অবশ্য মেয়েদের ৪০০ মিটার রিলে রেসে ভারতীয় দলই সোনা জেতার দৌড়ে গত চার বারই দাপট দেখিয়েছিলেন।উল্লেখ্য যে,এই নিয়ে ২০০২ সাল থেকে টানা পাঁচ বার সোনা জিতল ভারত এই ইভেন্টে। হিমা দাস ছাড়া ভারতীয় দলে ছিলেন এম আর পুভাম্মা, সরিতা গায়কোয়াড় এবং ভি কে বিস্ময়া।
    বলা বাহুল্য,রুপোর পরে এ বার হিমার সোনা জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসতে থাকে অসম।মন্ত্রী কেশব মহন্ত ঘোষণা করেন, অবিলম্বে ধিঙে হিমার মূর্তি বসবে। অক্টোবরে অসমে এসে নিজে হাতে নিজের মূর্তি উদ্বোধন করে বাড়িতে ঢুকবেন সোনার মেয়ে হিমা।
    এ নিয়ে কোনও একটা কাগজে কারো একজনের লেখা আমার চোখে পড়ে।তিনি লেখেন,হিমা দাসের মূর্তি বসানোর খবরটি পড়ে জানা গেল, অসমের জলসম্পদ মন্ত্রী হিমা দাসের মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এক শ্রেণির রাজনীতিকের এই এক সমস্যা, তাঁরা অপ্রয়োজনীয় চমক দিতে ভালবাসেন। হিমা ভারত তথা নিজ রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু মূর্তি বসানোর চেয়ে, রাজ্যের আনাচকানাচে হিমার মতো যে অসামান্য অ্যাথলিটরা লুকিয়ে আছেন, তাঁদের খুঁজে বার করে তাঁদের প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করাটাই আসল কাজ।
    তিনি সঠিক বলেছেন।হিমা দাসের মূর্তি বানানোর বিপক্ষে আমি।এদিকে,১৯৬৬ সালের এশিয়ান গেমসে ৮০০ মিটার দৌড়ে সোনা পেয়েছিলেন ভোগেশ্বর বরুয়া। তার পর থেকে অসমে আর এশিয়াড সোনা আসেনি। হিমার দৌড়ে প্রথম থেকে নজর রাখছিলেন তিনি। তিনি হিমাকে দৌড়ের বাইরে আর কোনোদিকে মন না দেওয়ার পরামর্শও দেন। আর সেদিন হিমার নজির ছোঁয়া দৌড় দেখার পরে আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েন এবং বলেন,
'জাতীয় ও এশীয় রেকর্ড করার পরেও আমি অলিম্পিক্সে দৌড়ানোর সুযোগ পাইনি। সেই কষ্ট দূর হল। তিক্ততা মনে করতে চাই না। আমাদের হিমা এক ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার। ওকে পরিবার বা প্রশিক্ষকরা তৈরি করে দেননি। আমার বিশ্বাস হিমা অলিম্পিক্সেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু অলিম্পিক্সে যাওয়ার পথে অনেক বাধা আসতে পারে। হিমাকেও সব কিছুর জন্য তৈরি হতে হবে। হিমাকে সামলে রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, রাজ্যবাসীর।'
    গত ৭ সেপ্টেম্বর হিমাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
ঘরের মাটিতে ফিরে রাজ্য সরকারের সংবর্ধনা সভায় এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক হাতে নিয়ে হিমা বলেন,'খেলোয়াড়রা আসলে মনপ্রাণ দিয়ে ভাল ফল করতে চায়। কারণ, তারা পয়সার জন্যই খেলে। জানে পদক জিতলেই টাকা পাবে। আজ যেমন আমি পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত আমায় এত টাকা পেতে দেখে অসমের অন্য খেলোয়াড়রাও আজ ভাবছে, হিমা যদি দৌড়ে এত টাকা পেতে পারে, আমিও ভাল খেললে তেমনই পাব।'
    তিনি সঠিক কথাই বলেন।সবকিছুর সঙ্গেই টাকা আর সম্মানের একটা সম্পর্ক রয়েছে।আর দুই-ই যদি কোথাও থেকে হাসিল করা যায় তা হলে অদূর ভবিষ্যতে কেউ এতে এগিয়ে যেতে পিছপা হবে না।
আমাদের অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা অসহ্য ভাব বিদ্যামান।সেই ছেলেবেলা থেকেই মা-বাবা তাদের সব সন্তানদের বুঝিয়ে দেন যে পড়াশোনা করতে হবে,আর এর পর ভবিষ্যতে একটা ভাল চাকরি জোগাড় করে নিতে হবে।কিন্তু সঙ্গে যে আরও অনেক কিছুও জরুরি বা আরও অনেক কিছুর মাধ্যমেও যে এগিয়ে যাওয়া যায় সে দিকে কারোর নজরই নেই।এ সমাজে সবাই যদি শুধু ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোনও অফিসের বড় কোনও অফিসার হন,তা হলে একস্ট্রা কারিকুলামের দিকে কার ঝোঁক হবে?এই যেমন আমরা যারা লেখালেখি করি,অন্তত এই অঞ্চলের,
তারা মনে মনে মেনেই নিই যে,লেখালেখির মাধ্যমে আমাদের আর কিচ্ছুটি হাসিল হওয়ার নয়,একটা ভাল চাকরি আমাদের করতেই হবে,আর তা-ই আমাদের তিন বেলা খাবারের যোগান দেবে।আর সবকিছুর পর যদি কিছুটা সময় বেঁচে যায় তা হলে লেখালেখি করতে পারি।কিন্তু এ থেকে যে কিচ্ছু হাসিল হবে,তা ভেবে নেওয়াই অন্যায়।টাকা তো কেউ দেবেই না,নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেই হবে।আর এ জায়গায় যদি হিমার মতো মেয়েদের হাতে এই লেভেলের সম্মান আর টাকা ওঠে তা হলে এর থেকে ভবিষ্যৎ অনেক কিছু পেয়ে যাবে।
    এদিকে,১৯৬৬ সালে ভোগেশ্বর বরুয়ার পর এবার হিমা। একটি সোনা ও ২টো রুপোর পদক।
সেদিন(৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টায় বিমানবন্দরে পৌঁছন তিনি।সেখানেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, ডিজিপি কুলধর শইকিয়া। সেখান থেকে বিরাট কনভয়ে, হুড খোলা গাড়িতে চেপে হিমার সফর শুরু হয়। প্রথমে জালুকবাড়িতে ভূপেন হাজরিকার সমাধিক্ষেত্রে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান।এরপর ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে যান। দৌড়ের ট্র্যাকে প্রণাম করে হিমা বলেন,'এই ট্র্যাকেই আমার দৌড় শুরু। জুন মাসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের সেরা সময় করেছিলাম এখানে। জাকার্তায় নির্বাচিত হয়েছিলাম। রাজ্যবাসীর স্বপ্ন সফল করতে পেরে ভাল লাগছে।'
   নস্টালজিয়া!আর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল হিমার হাতে বিশ্ব জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে সোনা, এশিয়ান গেমসে ১টি সোনা ও রুপোর দুটি পদকের জন্য মোট এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। অসমের ক্রীড়া দূত হিসেবে দু’বছরের জন্য হিমাকে ৩০ লক্ষ টাকা হওয়ার প্রস্তাবপত্রও দেওয়া হয়।দারুণ একটা বক্তৃতা দেন তিনি। হিমা বলেন,'বাবা স্পষ্ট জানিয়েছেন, অহঙ্কার পতনের মূল। এই যে চুলে রং করেছি, ছেঁড়া জিনস পরেছি দেখে বাবা খুব রেগে গিয়েছে। আমি জানি একটা চোট লাগলে কালকেই আমার কেরিয়ার শেষ। তখন অহঙ্কার নয়, আমার লড়াইটাই অন্যদের পথ দেখাবে।' তিনি আরও বলেন,'বিভিন্ন রাজ্যের পদকজয়ীরা দল বেঁধে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আমি গেলাম একাই। সঙ্কোচ হচ্ছিল। রাজ্যের ৩০টি জনগোষ্ঠী যদি অন্তত একজন করে ক্রীড়া প্রতিভাকে তুলে আনতে পারে, ১২৬ জন বিধায়ক যদি নিজেদের কেন্দ্র থেকে একজন করেও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় দিতে পারেন তবে তার মধ্য থেকে অন্তত ১০ জন পদকজয়ী আসবেই। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে পরের বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।' আর তারপর দৌড়ের পথ দেখানো শিক্ষক শামসুল হক এবং দুই প্রশিক্ষক নিপন দাস, নবজিৎ মালাকারকে ধন্যবাদ দিয়ে হিমা বলেন,'আমায় যাঁরা তুলে এনেছেন তাঁরাও একই সম্মানের দাবিদার।'
    সবশেষে আরও দু-চারটে কথা।অভিনব অভ্যর্থনার মধ্যে ঘরে আসেন হিমা।আর তা তাঁর প্রাপ্যই বটে।কিন্তু সরকার ও প্রাক্তনদেরও ভেবে দেখতে হবে যাতে আস্তে আস্তে করে এরকম আরও প্রচুর হিমা দাস বেরিয়ে আসেন,যা ভারতের নাগরিক হিসেবে আমাদের খুব আনন্দ দিয়ে থাকে।


সুমঙ্গল দাস এর দুটি কবিতা



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।


মহামায়ার আগমন


হে মা মহামায়া তুমি মায়ার কান্ডারি
তোমার আগমনের শুভবার্তা মহালয়ার দিনে।
বহিবে মৃদু বাতাস তোমার আগমনের লগ্নে
উচ্চারণ করবে সব তোমার মহামন্ত্র জপ।
প্রাতঃকালে যুবক, বৃদ্ধ, শিশু করবে প্রাতঃভ্রমণ
জলের স্রোতের ন্যায় বহিবে নদীর কিনারায়
এ অপূর্ব মানব স্রোত সংযোগ করিবে ধরায়।
ষষ্ঠীতে মন্দির প্রাঙ্গণ খুলে যাবে প্রবেশ দ্বার
স্বপরিবারে গ্রহন করবে আসন,শান্তি করবে দান
মহাপ্রসাদ বিতরণ হবে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে
মানব ভক্তি স্রোতে কল্যাণ ধারা করবে উপভোগ।
খুব আনন্দ উলুধ্বনি শুনবে তুমি শঙ্খ ধ্বনি
ফুল স্পর্শে চরণ ছুঁয়ে তোমায় জানাবে নিবেদন।
সবাইকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ রেখে ফিরবে দশমীতে
তোমার এই যাত্রা পথে ধ্বংস হবে অশুভ শক্তি
একে অপরের আলিঙ্গনে হউক সবার মুক্তি।

...


দীপাবলি


দীপাবলি আতশবাজি ডুরুম ড্রাম শব্দ
ফুরুত করে উঠে রকেট পোকামাকড় লুপ্ত।
চৌদ্দ পুরুষের চাই প্রদীপ জ্বলে সবার ঘরে
এটম বম্ ফাটে যখন কম্পন উঠে বুকে।
আটাশ ফাটে ফুরুট ফারাট জ্বালায় মোমবাতি
গুরুম গারাম শব্দ শুনি অমাবস্যা রাতি।
আটাশ বম্ এটম বম্ বাচ্চারা না ধরে
বড়োরাও ফাটাও তবে ঘর থেকে দূরে।
টুনিসেট বিদ্যুৎ জ্যোতি আলো করে রাত
বারুদ নিয়ে মত্ত সবাই খেয়াল রাখো হাত।
ঘোর জংগল অরণ্য বনে ডাকিনী যোগিনী সাজে
রুদ্ররূপি মহাকালী ব্যাস্ত নিধন কাজে।
মহাকালীর মহাপ্রসাদ চাইনা এবার সুরা
যুবকদের বলো মাগো মদ ছাড়ো তোরা।
অসুর রূপি মদের নেশা হউক সবার পতন
বধ কর সুরা পান সমাজ কর গঠন।

ইউনুস আমিন বড়ভুইঞা -র কবিতা



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।

জীবন ক্রিয়া

যন্ত্রের মতো ছুটে চলা জীবনে
ঝড় বৃষ্টি গা পুড়ানো রোদের দহনে
ফুটেছিল বসন্তের একবিংশ ফুল
সীমাহীন প্রেমে অবিরত মশগুল--
বুক পকেটে রাখা যত্নের চিটি
মরচিকায় অস্পষ্ট বর্ণগুলির চিমটি
এখনো মনে করিয়ে দেয় অতীত!

ব্যস্ততার ফুলদানি গোছানো বেমানান
শূন্যতার খাতায় সংযোজন ম্রিয়মাণ।
অবাধ্যতায় সর্বন্তকরণে বিষধর বিষফনা
দংশিতে দংশিতে বিনাশিবে পাওনা।
দেনার বহরে ভারাক্রান্ত হৃদয় বীণা
আত্মসংকোচনের বিলোপে এক ধাপ
এভাবেই সুচনাতে পতন হয়..!

অতীত হাঁসায় নিভৃতে কাঁদায়
নবীন দ্বারের খিল বিভ্রাট ছুটায়।
যৌবন বিমুখ তারুণ্য জ্যান্ত অভিশাপ
স্রোতের বিপরীতে জন্মাতে পারে নব ধাপ।
মিষ্ট অতীত, কষ্টের অতীত, দুঃখের অতীত!
এসব বলা বাহুল্য তারুণ্যের ভাবনায়
দিগন্তের পর দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষায়
অতীতের ব্যার্থতা এগিয়ে যেতে শেখায়--
আর এটাই জীবের জীবন ক্রিয়া।

রাজু দাস এর দুটি কবিতা



সুখ

সুখ, সে কেমন কখনো দেখিনি

কি তার প্রাচুর্যতা

আজও বুঝতে পারিনি

শুধু আধঘুমা অবস্থায়

প্রতিদিন স্বপ্নেই আসে

রাতের অন্ধকারে হাজার

সুখের গল্প নিয়ে

রাতের শেষে সেই কুঁড়েঘর

মাটির দেওয়াল আর বিন্না ছনেরচাল।

জানো!

মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়

কখন জানি উড়িয়ে নেয়

ঝড় তুফানে ওই ঘর

তখন লন্ঠনের আলোও নিবে যাবে

থাকবে পড়ে অন্ধকার আর অন্ধার।

সত্যি খুব কষ্ট হয়,

সমগ্র পৃথিবীটাই ছলনা

সুখ নামে কিছুই নেই।।



বন্ধু

ওরে বন্ধু

আমি কখনো ভাবিনি

তুই যে আবার ফিরে আসবি

ওই নীল আকাশে

রামধনুর সাত রঙে রঙিন হয়ে।

সত্যি,

আমাকে চমকে দিলে!

যেনো বৃষ্টি মাঝে এক ঝলক রোদ্দুর

আধার রাতে ফুটফুটে জোৎস্না

আর ব্যস্ত মনে বুক ভরা হাসি।

আমি কখনো ভাবিনি

বন্ধুত্বের যে এতো টান

যাকে ভুলতে গেলেও ভুলা যায়না

বার বার মনে পরে

তার সাথে কাটানো সময় ও স্মৃতিগুলো

আর সেই স্মৃতিই একদিন

পৌঁছে দেয় ওই ঠিকানায়

যেখানে স্নেহ ভালোবাসা

মায়া মমতার ভান্ডার,

রাগ অহংকার হিংসা নিন্দা

কিছুই নেই শুধু হাসি খুশির জমজমাট।

ওরে বন্ধু এ কেমন সম্পর্ক

যার গভীরতা এতো অসীম?


 

মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮

তোমার জন্য কিছু প্রশ্ন



।। সুশীল দাস ।।


কিছু প্রশ্ন বার বার

মনকে টেনে নিয়ে যায়

তোমার কাছে।

ভাল তো বেসে ছিলে

কিন্তু ভুল বুঝছো অনেকটা

তাই ভীষণভাবে জিজ্ঞেস করার ছিল

কিছু প্রশ্ন তোমাকে।

কেন চলে গেলে?

আমি কি এতটাই খারাপ ছিলাম?

সেগুলি প্রশ্ন অনেক দিন হয়ে গেছে

আনসিন হয়ে পরে আছে

তোমার ওয়াটসআপ নম্বরে।

তুমি কেন কথা রাখনি?

ভুলে যদি যাবে

তাহলে কেন এসেছিলে?

এ সব প্রশ্ন আজও

স্ট্যাটাসের জায়গাটা ছাড়েনি।

কেন করেছিলে প্রমিস?

কেন দেখিয়েছিলে রঙিন স্বপ্ন?

মনের মধ্যে শুধু এইগুলি প্রশ্নই

বার বার উতলে উঠে

তোমার জন্য ।

 

সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

মৃত্যু



।। ভানু ভূষণ দাস ।।


মৃত্যু! মৃত্যুটা কেমন হবে?

        ভীষ্মের মৃত্যু, দধীচির মৃত্যু

        না সক্রেটিসের মৃত্যু

            আরো কত আছে

        মার্টিন লুথার, চে গোয়েভরা

        ইন্দিরা গান্ধী ওরাও মরেছিল

        কি পেলো?

        ওদের মতো চাইনা।

চোখে ভাসে ৩০ অক্টোবরের ভাঙ্গাগড়

        গুজরাটের গোধরা কি দুর্বিষহ

        রক্তের দাগ কালশিটে

        কান্নার নমকিন ভাষা - হাহাকার

        চিতার পাশে বিনিদ্র।

আরো অনেক দেখেছি; নীলোৎপল অভিজিত

কি দোষ করেছিল, এত শত হলো

        ক্ষান্ত, শান্ত হয়েছে কি?

তবুত চলছে পায়ে পায়ে

সীমানা পেরিয়ে জীহাদের ঘাটে।


রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮

ঝড়


।। দোলনচাঁপা দাসপাল ।।

 

প্রচণ্ড এক ঝড় চাই আমি।

প্রচণ্ড!  বৈশাখী তাণ্ডব!

রুদ্র বাতাস আর দ্রৌপদী -তেজী বৃষ্টি ফোঁটা।।

সে বাতাসে ভেঙ্গে যাক্ নুইয়ে যাওয়া আধমরা সম্পর্ক ।

সে বৃষ্টিতে ঝরে যাক্ মৃতপ্রায় কুঁড়ি

যা আমাকে মনে করিয়ে দেয় সদ্যমৃত ভ্রূণকে।

দাঁড়িয়ে আছি আমি ধ্বংস স্তুপ নালান্দায়।

প্রাচীন অভিমান আর নিত্য ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে।

গণগণে সূর্য আর আগুন ঝরা পৃথিবীর মধ্যে

এক দগ্দ্ধ বলয় হয়ে।

শ্রাবণের রিম ঝিম ধারা আমাকে পারবে না দিতে কোন নুতন জন্ম।

তাই  আমি চাই এক ঝড়।

বিধ্বংসী তাণ্ডব! দুযোর্গপূর্ণ প্রলয়!

যে ঝড়ের শেষে আমি জেগে উঠব এক

নির্বিকার সকাল হয়ে -----

যেন কিছুই হয়নি গতকাল রাতে।

সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮

প্রনিতা দাস -এর দুটি কবিতা



মায়ের আগমনে

মা গো তোমার আগমনে
     আনন্দ আজ এই ভুবনে।
মণ্ডপগুলো উঠছে সেজে
     কত রঙের রঙীন সাজে।
সাজবে সবাই নতুন করে
      আয়োজন তাই ঘরে ঘরে।
শঙ্খ ঘণ্টা বাদ্য করে
     নেবে তোমায় বরণ করে।
ঢাক ঢোলের মধুর সুরে
      খুশিতে সবার মন ভরে।
মিলেমিশে সবাই ঘু্রে
     একসাথে মণ্ডপে মণ্ডপে।
মাগো তিন দিনের তরে
      আসো তুমি বাপের ঘরে।
বিজয়া দশমীর দিনে
        তাই তো সবার অশ্রু ঝড়ে।



দূর্গা মা

তোমার চরণে জানাই মা প্রনতি
     তুমি সবারে দাও সুমতি।
হিংসা  বিবাদ মারামারি
      আমরা কভু যেন নাহি  করি।
সৎ চিন্তাভাবনা যেন অনুসরণ করি।
অসুর-নরপিশাচদের কর তুমি নাশ
তোমার দয়ায় হয় যেন মা পৃথিবী প্রকাশ।
মনের আধাঁর ঘুচে, দাও মা তুমি আলো
সবার হৃদয়ে প্রেম ভক্তির ভাব জেগে তোল।

বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

বুল্টি দাস -এর দুটি কবিতা



শরৎ রানী


শরতের শারদ প্রভাতে

       শিশির ও আকাশে

কত সুর ভেসে আসে

       আগমনীর গানে।

শিউলি তলায় যেমন

       ময়ূরেরা পেখম তুলে

তেমনি আমার শরৎ রানী

       নৃত্য করে কাশবনে।

শুকনো পাতারা আবার

        শিশিরে ভিজে

মেঘের আলপনায় আবার

       প্রেমেরা জাগে।

বছর পরে কত কবিতারা

      ছন্দে ছন্দে মিলে

আর লাবণ্যময়ী শরৎ রানী

      সাজে নব রূপে।




    দুর্গা


ঘরে ঘরে দুর্গা আছে
সেই দুর্গাকে কজন খুঁজে?

লালসা যে দুর্গাকে রোজ খুঁজে
অসুর ছাড়া কি তখন কেউ পাশে থাকে?

দুর্গা যখন পাগলীরূপে
পরে থাকে রাস্তার পাশে।

পাগলী দুর্গার পূজা তখন কজন করে
সময়ের সুযোগ বুঝে অসুররাই তো ঝাপিয়ে পরে।

দুর্গা কখনও মাতৃরূপে,ভগিনীরূপে,স্ত্রীরূপে
কখনও আবার প্রেমিকারূপে।

পৃথিবীর সব নারীর মাঝেই যে দুর্গা আছে
সেই দুর্গাকেও তো সবার খুঁজতে হবে।


এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...