-শর্মিলী দেব কানুনগো
-- বৌদি এই ক্রিমটা আমারেও একটা
আনিয়া দিও… । নমিতার কথায় গা পিততি জ্বলে উঠে বিথির। এই এক সমস্যা
হয়েছে এখন। বিথির যা আছে সব নমিতারও চাই। আশ্চর্য… নিজের ওজন বুঝে চলতে পারে না মেয়েটা। মুখে অবশ্য নমিতাকে
কিছু বলে না সে। না বলার কারণ আছে। নমিতাকে কেন্দ্র করেই সকাল থেকে বিকেল আর বিকেল
গড়িয়ে রাত নামে বিথির বাড়িতে। দুই হাতে বিথির সংসার সামলায় নমিতা। একদিন নমিতা
কাজ কামাই করলে বিথি চোখে অন্ধকার দেখে।
রাত আটটায় বিথিদের রাতের খাবার টেবিল সাজিয়ে বাড়ি ফিরে সে। আর ভোর ভোর
আবার এসে এ বাড়িতে ঢুকে। নমিতা ছাড়া কি একদিন ভালোভাবে থাকা সম্ভব এদের! এরজন্য
অবশ্য বেতন পায় নমিতা। কিন্তু ইদানিং এক বায়না শুরু হয়েছে তার। বিথির মতো
সবকিছু চাই তার। বিথি যে বেড কভারটা আনলো সেদিন সেল থেকে এমন একটা চাই তারও। অনলাইনে একটা বাড়িতে পরার চপ্পল আনলো বিথি। অমনি নমিতাও
বায়না ধরলো। তারও চাই এমন একটা চপ্পল। অগত্যা… । মুখে কিছু বলতে না পেরে ভেতর ভেতর
রাগে পুড়তে থাকে বিথি।
নমিতা কাজ কর্মে খুব চটপটে। বিথির সকল ফাই ফরমাস হাসি মুখে পালন করে। সবাই
বলাবলি করে ভাগ্য করে এমন কাজের মেয়ে পেয়েছে বিথি। কিন্তু এর বিনিময়ে যে কত কিছু
সহ্য করতে হচ্ছে বিথিকে সেটা কে বুঝবে। বিথির নীল রঙের নাইটি দেখে এখন নমিতারও চাই
এমন একটা নাইটি। আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুঁজে পেতে এনে দিতে হলো এমন একটা নাইটি।
মনকে বোঝালো দুধ খেতে হলে গরুর লাথিকে মেনে নিতেই হয়।
তবে নমিতা প্রথম যেদিন এ বাড়িতে
কাজ করতে এসেছিলো সেদিন চায়ের কাপ হাতে মাটিতে বসেছিলো। বিথিই তখন বলে ছিল - এমা… মাটিতে কেনো বসলে গো... চেয়ারে এসে বস। আমরা সবাইকে সমান
দেখি। যদিও একথা মন থেকে বলেনি সে। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিলো।
যেকোনভাবে নমিতার মন জয় করতে হবে। কাজের মেয়ে পাওয়া যত কঠিন এরচেয়ে কঠিন একে
টিকিয়ে রাখা। আর তাই আদর দিয়ে দিয়ে সে নিজেই নমিতাকে মাথায় তুলে।
বিথির মেয়ে কেয়া ক্লাস নাইনে
পড়ে। অনেক কষ্ট করে নমিতাও ওর মেয়েটাকে স্কুলে পড়ায় । দুটো বাড়িতে এক্সট্রা কাজ করে মেয়ের প্রাইভেট
টিউশনের পয়সা জোগাড় করে। স্বপ্ন দেখে কেয়ার মতো একদিন তার মেয়েও দিদিমণি হবে ইস্কুলের।
বিথির বড্ড রাগ হয় এসব শুনলে। শখ
কতো…। কাজের মেয়ে… তেনার মেয়ে নাকি আবার ইস্কুলে
পড়াবে…। চাপা রাগ গোপন করে নমিতার সামনে।
আড়ালে গজগজ করে। কেয়া আর ওর বাবা হাসে। বিথির এসব ওরা বুঝতে চায় না। বরং কেয়া
হেসে হেসে বলল - কি হয় মা, নমিতাদির মেয়ে
দিদিমণি হলে? এত কষ্ট করছে নমিতাদি… মেয়েটা চাকরি পেলে ওরা তো একটু ভালো থাকতে পারবে।
কি হয় সেটা বিথিও ঠিক বুঝতে পারে না। কেমন যেন মনে হয় সে হেরে যাবে
নমিতার কাছে। সেই হার যে কিসের হার সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। তবে একদিন সকালে
নমিতা হেরে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল তার মেয়েটা পাড়ার একটা মোটর মেকানিকের সাথে
পালিয়ে গেছে। বোধহয় ওরা বিয়ে করেছে। বিথি নমিতাকে সান্ত্বনা দিলো। কি আর করা… যার যেমন কপাল…। নমিতার বুক ফাঁটা আর্তনাদ আর বিলাপের ফাঁকে বিথির বুক থেকে
একটা নিশ্চিন্তের নিশ্বাস বেরিয়ে এলো।
এখানে আমার একটা লেখা ছাপবেন , প্রিয় সম্পাদক ? শ্রী সৌমিত্র। আমার ফেসবুক আইডি এটা
উত্তরমুছুনআমাদের ফেসবুক এবং ওয়াটসএপ গ্রুপে জয়েন করুন, সাইড বারে লিঙ্ক দেওয়া আছে।
মুছুন