সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

নৌকাবিলাস

।।রণবীর পুরকায়স্থ।।

শামীম আহমেদ আর শৈলজা চক্রবর্তীর প্রেমের তরী তখন মাঝ গঙ্গায় টালমাটাল। কেউ রাজি নয় কোলে। নিতে বলছে,
- একা এস তো গুন টেনে আনছি পারে।
-কিন্তু আর একজন? আমার প্রিয়? প্রিয়তমা?
-বিসর্জন দাও! জল সমর্পণ।
জোড়া প্রেম অবাধ্য সংকেতে জানায় প্রতিবাদ,
-এতো সোজা!
শামীম এর পরিজন বলে,
- তবে ধর্মান্তর করিয়ে নাও।
শৈলজার গোষ্ঠী বলে,
-আমাদের ওসব নেই।
শামীম শৈলজার কাজিয়া হয় তরণী'পরে,
-আছে কি নেই দিয়ে কী হবে। ধর্ম ছাড়াও হয় গৃহস্থালী। সেলিমদা চিত্রকর আর পৃথা খাসনবিশ তো বদলায়নি। জাহানারাদি অসীম সামন্তও সুখেই আছে।
-দু'রকম ধর্ম থাকলে সন্তানের ওপর চাপ পড়ে। কাকও হয়না  কোকিলও না।
-তবে টস করি। একজন পাল্টালেই চুকে যায় ল্যাঠা।
শামীম বলে,
-আমি পাল্টাব না। হিন্দুরা নেবে?
শৈলজার যুক্তি,
-রবীন্দ্রনাথকে যদি নেয় তোমাকেও নেবে।
-ওদের টা অন্য। নিমরাজি সমাজে তেমন আলোড়ন হয়নি। আমরা আরব সৈয়দ।
শৈলজা বলে,
-হতে চাইলে উপায় আছে। মায়াপুরে চলে যাও। শঙ্খ মহারাজ হয়ে ফিরে এসো দাড়ি মাথা ন্যাড়া।
শামীমের স্পষ্ট কথা,
-না  দাড়ি কাটব না। ন্যাড়া হব না, শঙ্খও না। তুমি কেন হয়ে যাওনা মুসলমানি।  তোমার একটা সুন্দর নাম দেব লুৎফা।
-ও নাম আমি জানি। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে আছে। আমি হব না।
ফলত মাঝগঙ্গায় নৌকা উল্টে যায়। হুবুডুবু খেতে খেতে দুজন দুদিকে। একজন দুঃখিনি থেকে যায় গঙ্গার পারে যেমন ছিল। সাঁতার জানে যে জন, গঙ্গা বেয়ে পড়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগর। মান্দাসে চেপে যায় হডসন সাগরপারে।
একটু তালগোল পাকিয়ে যায় উচ্চশিক্ষা হয় বিদেশে।
সাময়িক তকরার থেকে দীর্ঘ মেয়াদি বিচ্ছেদ কথা ভাবেনি কেউ কখনও।
শৈলজা শমীম যুক্তি তর্কে লড়াই করলেও ভালবাসার জমি ছাড়েনি এক ইঞ্চিও।
ওরা বলে,
-আমরাই ওরিজিনাল আদম হাওয়া।
বলে,
আমরা লক্ষ্মীজনার্দন। ছোটবেলায় হারিয়ে গেলাম আজমীর শরীফ আর পুষ্কর তীর্থের মধ্যবর্তী পাহাড়তলিতে। গিরিপথ বেয়ে যখন উঠছি তখন তীর্থযাত্রী পরিবার দুদিক থেকে আমাদের কেড়ে নেয়। আমরা মুক্ত হতে চাই। আমাদের জিহাদ এই আমাদের ধর্ম যুদ্ধ এখন।
ওরা বললে,
-বিয়ে করো।
সমিম বললে,
-রসো।
বলেই ফিরল দেশে।
ওদিকে, শৈলজার কি হইল তবে?
সেও আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাকি শুধু নির্বাচন। সুনীল মিথিলেশ স্বপ্নময় এর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। শৈলজার তিনজনকেই পছন্দ। তিনজনই থাকে নিউইয়র্ক আমেরিকায়।
তানা না নানা।
মালগুড়ি ডেজ-এর রিংটোন। পুরনো সেই দিনের কথা।
টোন পাল্টে দেওয়ারও কল আছে।
ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি।
পাঁচটা সকাল তখন।
কে বাজায়?
যাদের জন্মদিন আজ।
আদম হাওয়া, শিব-সতী।
যারা জন্মেছিল একই দিনে।
শীতের ডিসেম্বরে।
এক দুই তিন চার পাঁচ...
ছয় ডিসেম্বর ভোরে।
যারা অধুনা হারিয়ে গেছিল গঙ্গার জলে।
নৌকা ডুবিতে।
শুভেচ্ছা বিনিময় করে একজন আর একজনকে বলে,
-কি দেব তোমায় এমন দিনে, উপহার।
-তোমার যা প্রিয় তাই দেবে।
দুজন তিনসত্য করে বলে,
আর ঝগড়া করব না
বললে,
-বকেয়া কচাল মিটিয়ে ফেলা যাক তাহলে? হোক না একটা গোলটেবিল আজ।
-হোক। মন্দ কী? কোথায় কবে কখন বলে দাও আইটিননারি।
-কবে মানে তো আজ। সকাল বেলায় যে মহাবিস্ফোরণে জন্মে ছিলাম আমরা সে সময় তো আর খুলবে না 'গ্রেন অফ সল্ট'। তাই সন্ধ্যে সাতটা।
সঠিক সময়ে দুই বেঠিক নারী-পুরুষ খাবার ঘরের গোলটেবিলে মুখোমুখি বসে থাকে অবাক জলপাত্র হাতে। গৌরবর্ণ গৈরিক বসনে মুণ্ডিতমস্তক পুরুষে তাকিয়ে হতভম্ব নারী গায় উল্টো পদাবলি 'ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী।'
পুরুষ দেখে বরবর্ণিনী হরিণ-নয়নের চকিত চাহনি। ময়ূর রঙা অপরূপ কারুকাজ বোরখাবাসের শরীরি আমন্ত্রণে পুরুষ-হৃদয়ও বিহ্বল।
আহ কী হেরিনু!
ময়ূরপঙ্খী আবার পেখম তোলে নদীতে।
সেই যে টাইটানিক নৌকা ডুবে ছিল মাজ গঙ্গায়?
মন্দ সমীরণে সানন্দ কর্ণদার এবার প্রেমের নামের বাদামে লেখে অভিজ্ঞান।
-আমার নাম শঙ্খ মহারাজ।
অতি পরিষ্কার আকরে বিলাসিনীও লেখে নিজ নাম আমি,
-আমি লুৎফা।
মাঝগঙ্গায যখন কুয়াশায় আবৃত।
দুপারে দলীয় কোলাহল যখন স্তব্ধ।
তখন অকূলে পাড়ি দেওয়ার আগে নকল নামের বাদামখানি ওরা হেলাভরে ফেলে দেয় জলে।
দূর থেকে কাছের মানুষদের বলে,
-তোমরা কে হে।
বলে,
আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব আবহমানকাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...