। ডঃ পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী ।
শরৎ আবারও এলো, সঙ্গে নিয়ে এলো প্রাণের মেয়ে উমাকে। সাদা মেঘের ভেলা নতুন দিল্লীর আকাশে, তবে মাঝে মাঝে কালো মেঘের ও লুকোচুরি। এই নিয়ে দশটি বছর , পূজোর সময়টায় আমার জন্ম শহর, বেড়ে ওঠার শহরের আকাশ বাতাস মাটি জলের স্পর্শ পাওয়া হয় না, মেয়েবেলায় ফিরে যাওয়া হয় না কিন্তু তা সত্বেও শিলচর এবং বরাক উপত্যকা থেকে প্রকাশিত পূজোসংখ্যাগুলো আমাকে পরিপূর্ণ করে রাখে। "প্রতাপঃ সমাজ ও সাহিত্যের প্রতিভাস" চিরদিনই আমার মনের খুব কাছের একটা লিটল মাগ্যাজিন। যে জলবহর , যে মাটি আমাকে দিনরাত চুম্বকের মতন আকর্ষণ করে, তারই প্রতিফলন ঘটে এর পাতায় পাতায়। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
পূজোর ঠিক কদিন আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের আসামের গর্ব, আমাদের প্রাণের শিল্পী জুবিনদাকে, তাই এই ঘোরতর বেদনার চোরাস্রোতের মধ্যেই দেবীকে আবাহন। আর সেই সময়টাতে প্রতাপের “জুবিন গর্গ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা” আর “পূজা সংখ্যাঃ ১৪৩২” দুটো সংখ্যাই ছুঁয়ে গেছে আমার শারদ প্রহর।
আমি নিজে জুবিনদার বিশাল ভক্ত, একসময় আমার একটা ফেসবুক ফেন পেইজও ছিল, “Zubeen Garg: The Jewel of Assam”, নামে। ২০০৯-১০ সালেই যার ফলোয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ১২০০০। ২০১২ তে জুবিনদা নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ শুরু করার পর,নিজের ব্যস্ততার কারণে, আর মেসেজ বক্সে প্রতিদিন ফ্যানদের হাজার হাজার মেসেজের রিপ্লাই দেবার লোড থেকে মুক্ত হবার জন্যে আস্তে আস্তে নিজের পেজটাকে সরিয়ে ফেলি। ফ্যানদের ভালবাসা ,এবং ক্রেজ এডমিন হিসেবে অনুভব করেছি তখনই। ২০১৭ তে দিল্লীর “Northeast Calling” উৎসবে পেয়েছিলাম সরাসরি সাক্ষাত। দেখেছিলাম, তাঁকে ঘিরে জনসমুদ্রের উন্মাদনা। প্রতাপের পাতায় পাতায় যেন সেই ভালোবাসারই সুর।
জুবিন গর্গ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা্র প্রতিটি লেখা অনবদ্য। রুমা দাসের “নদীর ঢেউ যে ছন্দ তোলে,মাঠের ঘাসে যে সুর দোলে,তার ভেতরেই তুমি ছিলে,জুবিন“,সুরজ কুমার নাথ “এমন তো কথা ছিল না জুবিন দা,মাঝপথে থেমে যাওয়া”, ড. অর্পিতা দাসের “জাতিহীন,ধর্মহীন,দেবতাহীন দিগন্তে—তিনি দাঁড়ালেন অনন্ত জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে” প্রত্যেকটা লাইনেই হৃদয়ের অভিব্যক্তি।
প্রজ্ঞাদীপ্তা ভট্টাচার্যের কলমে জুবিন যেন ছবির মতনই আকার নেন, রিপন দাসের মায়ায় “চলে গেলে বহু দূর,রাজপুত্র সেজে” রাজাই তো ছিলেন জুবিন। মঙ্গলা দত্ত রিমির কথায় “নীলাম্বু সৈকতে আছড়ে পড়া লোনা জলের ঢেউটাও জানে জুবিন দা,আজও তোমার কন্ঠস্বরে সুনামির হিল্লোল”, চাঁদনী দাসের কথায়, “তোমার দেওয়া ভালোবাসা, সত্যিই আজও অসহায়”, পিয়ালী ঘোষের ভাষায় “যার গন্ধে শুধু আসাম নয় গোটা ভারত ছিল সুগন্ধিত, সুরের হাত ধরে রাজপথে এসেছিল এক নাম- জুবিন গর্গ”, সুজিতা দাসের কবিতা যেন জুবিনের কাছে সরাসরি চিঠি, কথকতা। রূপালী রায়ের কলমে বাস্তবের সুর, “জীবনে যে মানুষ জয় করতে পারে,তাঁর কোনো মৃত্যু নেই”, রাজন দাস, চয়ন ঘোষ , রাহুল দাসের কলমে প্রকাশ পেয়েছে জুবিনের বিশালতা ব্যপ্তি,অপর্ণা কুমার , মাধুরী দাস , অনুরাগ ভৌমিক, গোপেন্দ্র দাস ,সুরজ শুক্লবৈদ্যের কলমে ধ্বনিত বেদনার সুর। শেখর মালাকার, প্রিয়তোষ শর্মার লেখায় সব হারানোর পর আবার ফিরে পাওয়ার আর্তি,অনুরোধ ও কামনা।
প্রতাপের পূজো সংখ্যাটাও বরাবরের মতনই আকর্ষনীয়, যা সেজে ওঠেছে বরাকের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের গল্প-কবিতার আল্পনায়। বরাকের পূজোর গন্ধ ভেসে এসেছে আমার জানালায়, সুচরিতা দাস, অসিত চক্রবর্তী, সানি ভট্টাচার্য, মঙ্গলা দত্ত রিমি, সুজিতা দাস, অমলেন্দু চক্রবর্তী, রঞ্জন কুমার বনিক, আনওয়ারুল হক বড়ভূইয়া, সুস্মিতা দাসচৌধুরী, শমিতা ভট্টাচার্য, স্বাতীলেখা রায়, মমতা চক্রবর্তী, রাখী দাস, শিপ্রা দাস, গোপেন্দ্র দাস, শতদল আচার্য, সদয় দাস, রাহুল দাস, আদিমা মজুমদার, বিষ্ণুপদ দাস, রাণা চক্রবর্তী, অপর্ণা কুমার, মাম্পী দাস, রুমা দাস, কুসুম কলিতা, আব্দুল হালিম বড়ভূইয়া, অর্পিতা দাস, শর্মি দে, প্রমিলা দাস, নীলাদ্রী ভট্টাচার্য, বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য, সুরজ কুমার নাথ, হর প্রসাদ কর্মকার, মানসী সিনহা, শান্তশ্রী সোম, অনন্যা ভট্টাচার্য, শৈলেন দাস দাদার কবিতার হাত ধরে। পুষ্পিতা দাস, সৈকত মজুমদার, সত্যজিৎ নাথের লেখা তিনটি গল্প আর যোগেন্দ্র চন্দ্র দাসের কলমে প্রবন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেছে অনাবিল ভালোলাগা, আর ছোট্ট শ্রেয়ানের আঁকা প্রচ্ছদটাও কি অপূর্ব। সব মিলিয়ে প্রতাপ আবারও অনন্য। অনেক অনেক শুভ কামনা এবং ভালোবাসা “প্রতাপঃ সমাজ ও সাহিত্যের প্রতিভাস” কে।
https://pratapsomajosahitya.blogspot.com/2025/09/blog-post_60.html
https://pratapsomajosahitya.blogspot.com/2025/09/blog-post_28.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন