একটি কালো মেয়ের গল্প


সুজিতা দাস

মেয়েটি কালো। গায়ের রং ময়লা। একমাত্র কালোর জন্যই বাড়িতে কদর কম। তিন বোন ওরা। তিন বোনের মধ্যে বড়ো এবং ছোটটি বেশ ফুটফুটে সুন্দরী হয়েছে। মাঝখান থেকে মেজটি কেন যে কালো হলো ভাবা যায় না। মানুষ সুন্দরের পূজারী। সুন্দরকে সবাই ভালোবেসে কাছে পেতে চায়। আধঘন্টা বসে গল্পও করতে ভালোবাসে। সে আপন হোক বা পর, সবার সুন্দরের দিকেই নজর। তারই কদর বেশি। অন্যদিকে কালোর প্রতি নজর নেই। সে তার বাবা মা হলেও সমান দৃষ্টিতে দেখেন না। শুধু কি তাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটাটাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাকে যে কত রকম কষ্ট সহ্য করতে হয় তা কাওকে বলে বোঝানোর মতো নয়।

এরকমই একটি পরিবারে বাবা অনিমেষ দত্ত ও তার স্ত্রী অনিমা দত্তের তিন মেয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবার। এক কথায় সুখের সংসার বললে চলে। পূর্ণিমা, চন্দ্রিমা ও নীলিমা তিন বোন পিঠেপিঠি বড় হচ্ছে। বয়সের ব্যবধান বেশি নয়, সবাই দেড় দুই বছরের ছোট বড়। ওরা নিজেদের মধ্যেই খেলাধূলা ও পড়াশোনা করতে করতে বড় হচ্ছে। এদের মধ্যে মেলামেশা খুব। এক বোন আরেক বোনকে ছাড়া থাকতে পারে না। সবাই সবার খেলার সাথী। খুনসুটি, ঝগড়াঝাটি যে হয় না তা নয়। হলেও বেশি সময় স্থায়ী থাকে না। প্রত্যকেই বাবা মায়ের খুব আাদরের। প্রত্যেককেই খুব ভালোবাসেন তারা। এমনি ভাবেই বড় হচ্ছিল তারা। প্রাথমিক স্কুল পেরিয়ে যখন ওরা হাইস্কুলে পড়তে শুরু করে। তখন থেকেই সব কিছুই অন্য ধারায় চলতে লাগলো যেন। একজনের প্রতি ঘৃণার ভাব। এই যে মেজ মেয়েটি যার নাম চন্দ্রিমা যে কালো!

মায়ের এক কথা -- কালো মেয়ের বেশি পড়াশোনা করার দরকার নেই। পাত্র পাওয়া যাবে না। শিক্ষিত ছেলেরা নাকি কালো মেয়ে বিয়ে করতে চায় না। আবার অশিক্ষিত ছেলেরাও নাকি তেমন বিদ্যাধরীকে বিয়ে করতে চাইবে না। অর্থাৎ তার পড়াশুনা করে কাজ নেই। অথচ তিন বোনের মধ্যে চন্দ্রিমাই পড়াশোনায় ভালো। স্কুলে প্রতি বছর ফার্স্ট হয়। অথচ তাকেই তিনি পড়াতে চান না। নানা অজুহাত দেখিয়ে তার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে মা বলেন- শরীরটা ভালো নেই, রান্নাটা তোকেই করতে হবে। আজ স্কুলে যেতে হবে না তোর। চন্দ্রিমা -- আমি রান্নাবান্না করেই স্কুলে যাব মা। "না তোকে আজ স্কুলে যেতে হবে বলছি, যাওয়া হবে না ব্যাস ---"

এইভাবে সপ্তাহে অন্তত দুদিন তার স্কুলে যাওয়া হতো না। এতে মেয়েটি আরো জেদি হতে থাকল। বাড়ির রান্নাবান্না এবং বাড়ির ঘরোয়া সব কাজ নিজে একাই করে ও বইপত্র নিয়ে বসে পড়ত। স্কুলে না গেলেও স্কুলের পড়াটা তার করে রাখা চাই। না বুঝতে পারলে পরদিন স্কুলে গিয়ে শিক্ষিকাদের কাছ থেকে বুঝে নিত। সেদিক থেকে তার কোনো সংকোচ ছিল না। যেহেতু মেয়েটি প্রতিবছর ফার্স্ট হয় দিদিমণিরাও খুব সহযোগিতা করতেন। এতে মেয়েটির দুটি কাজ হয় এক, পড়াশোনায় তার ঠিক মত চলতে থাকে এবং দ্বিতীয়ত সে বেশ পরিশ্রমী হয় এবং সংসারের রান্নাবান্না ও গৃহকর্মে নিপুণা হয়ে ওঠে। এছাড়াও সহ্যশক্তিও তার বেড়ে যায়। তবু মন বলে তো একটা বস্তু আছে। তাকে দমন করা কষ্টকর। তার আবেগ অনুভূতিকে তো মূল্য দিতে হয়।

তবুও চন্দ্রিমা বিশ্বাস করে সবাই শুধু তার গায়ের রঙের দিকে তাকাবে না। তার ধৈর্য ও ইচ্ছাশক্তির মর্যাদা সে একদিন পাবেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...