![]() |
স্মৃতি দাস |
। স্মৃতি দাস ।
যে দুজন বাঙালি কবি সমস্ত বিশ্বে বরেণ্য, তাঁদের দু'জনেরই জন্মস্থান ভারতবর্ষ। তাঁদের প্রতিভার দ্বারা ভারতকে
সমৃদ্ধ করেছেন, ভারতকে পৌঁছে দিয়েছেন এক সীমাহীন উচ্চতায়। তাঁরা ভারতের গর্ব, কারণ তাঁরা ভারতে জন্মে ভারতকে মহান করে বিশ্ব দরবারের এক
বিশেষ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা প্রাত:স্মরণীয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও
আরেকজন কাজী নজরুল ইসলাম। এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে তাঁরা লিখেননি। জন্মসূত্রে
মুসলমান কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে হিন্দুদের দেব দেবী নিয়ে ভক্তি সঙ্গীত লিখে
গিয়েছেন তা হয়তো আর কোনো কালেই কোনো কবির পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ আমাদের
অনুভবে বিরাজ করেন। আমরা শত চেষ্টা করলেও তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারিনা। আমরা তাঁর
প্রভাবে,
তাঁর অনুভবে যেন আমাদের সমস্ত সত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছি। সুখ,
দু:খ, হাসি কান্নায়, প্রেমে আমরা তাঁকেই স্মরণ করে বাঁচি। তাঁকে ছাড়া আমরা
স্থবির,
জড়। তিনি শশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে
আমরা তাঁকে সর্বদা ছুঁয়ে থাকি। আমাদের কোনো ক্ষমতাই নেই তাঁকে অস্বীকার করার,
তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার। তাঁর সৃষ্টি দিয়েই আমরা তাঁকে স্মরণ করি। এমনকি তাঁর প্রয়াণ
দিবসে স্মরণ করার গানটিও যেনো আমাদের
জন্য লিখে রেখে গেছেন। গানটি এমন.....
আজ শ্রাবণের
পূর্ণিমাতে কি এনেছিস বল
হাসির কানায়
কানায় ভরা নয়নের জল।।
বাদল হাওয়ার
দীর্ঘশ্বাসে যূথীবনের বেদন হাসে
ফুল ফোটানোর
খেলায় কেন ফুল ঝরানোর ছল।।
অবাক হওয়ারও
জায়গা থেকেও অনেক উর্দ্ধে এই বিস্ময় কবির অবস্থান।
কাজী নজরুল ইসলাম আরেক বিস্ময় কবি। আমাদের সৌভাগ্য যে এই কবিও আমাদের মাটিতে জন্মে এই দেশের আলো বাতাসে নিজেকে সিঞ্চিত করেছেন। চুরুলিয়ার মতো এক প্রত্যন্ত গ্রামে অশিক্ষিত মুসলমান পরিবারে জন্মেও এই কবি দেশবাসীকে যা দিয়ে গিয়েছেন তার তুলনা করা ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। কখনো বিদ্রোহ করেছেন, কখনো অভিমান করেছেন, কখনো আবার প্রেমের জোয়ারেও ভেসেছেন। এক কথায় তাঁকে কোনো উপমা দেওয়া সম্ভব নয়। সমাজের জাত পাত, ধর্মজনিত বৈষম্যের বীজ সরাতে আজীবন প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টা মানুষ গ্রহণ করতে দ্বিধা করেছে। অসাম্প্রদায়িকতা কখনো নিজে করেনওনি, সহ্যও করেননি। অপমানে অপমানে দগ্ধ হয়েছেন বারংবার। বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন, সাম্যবাদী হয়ে উঠেছেন নিজেকে প্রমান করতে। কিন্তু সবই যেন কানা কলসীতে জল ঢালা! কি অপূর্ব অপূর্ব শ্যামাসংগীত লিখেছেন কবি, কৃষ্ণ ভজন,আগমনী গান.. সেসব শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে! ভাব ভক্তিতে সিঞ্চিত সেসব গান বাঙালীর সম্পদ হয়ে রয়েছে। টাকা পয়সা, আভিজাত্য, সম্মান কোন কিছুই চাহিদা ছিলনা কবির। তিনি ছিলেন ভালবাসার কাঙাল আর প্রচণ্ড অভিমানী! নিজেই নিজেকে বলেছেন...
কবি সবার কথা কইলে এবার নিজের কথা কহ
কেন নিখিল ভুবন অভিমানের আগুন দিয়ে দহ।।
কে তোমারে হানল হেলা কবি
সুরে সুরে আঁকো কিগো সেই বেদনার ছবি
তোমার হাসিতে যে বাঁশি বাজে সে তো তুমি নহ
কবি সবার কথা কইলে এবার নিজের কথা কহ!
কি বেদনা! কাকে বলবেন, কি বলবেন, কে-ই বা শুনবে তাঁর কথা... তাই গান লিখেছেন। সুরে সুরেই বলেছেন সবকিছু। আজ কবি আমাদের কাছে নেই, কিন্তু তাঁর লেখা আজও আমাদের চোখের কোণ সিক্ত করে। বিশ্ব কবিকে যে-ই যত অবহেলা করুক, তাঁকে অস্বীকার করুক, তিনি কখনো ছোট হয়ে যাবেননা। তিনি যা ছিলেন তাই আছেন ও থাকবেন। কাজী নজরুলকে নিয়েও যতই মানুষ টানা হ্যাঁচড়া করুক তিনি ভারতেরই কবি এবং ভারতেরই থাকবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন