। প্রতীমরাজ ভট্টাচার্য ।
মানুষ জন্ম নেয় একা, কিন্তু বাঁচে ভালোবাসার ভেতর দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাস যত পুরোনো, ভালোবাসার গল্পও ততটাই চিরন্তন। সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ তার হৃদয়ের ভাষায়, তার স্পর্শে, তার চোখের নীরবতায় ভালোবাসার অর্থ খুঁজে এসেছে। কেউ তা খুঁজেছে দেবতার মধ্যে, কেউ প্রকৃতির, কেউ মানুষের মুখে।
ভালোবাসা আসলে কোনো শব্দ নয়, কোনো সম্পর্কও নয়—এ এক অস্তিত্বের অনুভূতি। আমরা যখন কাউকে দেখি, তার চোখে নিজের প্রতিফলন খুঁজে পাই, তখনই জন্ম নেয় ভালোবাসা। সেই মুহূর্তে মানুষ বুঝতে পারে—সে একা নয়, তার অস্তিত্বের পাশে আরেকটি জীবন্ত সত্তা আছে, যে তার অনুভূতিকে অর্থ দেয়।
ভালোবাসা মানুষকে বদলে দেয় নিঃশব্দে।
যে মানুষ একসময় কেবল নিজের সুখে বাঁচত, সে হঠাৎ একদিন অন্য কারো হাসির জন্য অপেক্ষা করে।
এই অপেক্ষার ভেতরেই মানবতার শুরু। কারণ যে মানুষ ভালোবাসে, সে কখনো ঘৃণা করতে পারে না।
ভালোবাসা শেখায় সহনশীলতা, শেখায় ক্ষমা, শেখায় মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা।
তবে ভালোবাসা সহজ নয়।
এতে আছে বেদনা, আছে অনিশ্চয়তা, আছে বিচ্ছেদের ছায়া। কিন্তু এই বেদনাই জীবনের গভীরতম পাঠ শেখায়। যেমন নদী তার বাঁক না নিলে সাগর পেত না, তেমনি মানুষও ভালোবাসার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে না গেলে পরিপূর্ণ হয় না।
ভালোবাসা কখনো দখল নয়, কখনো মালিকানা নয়—এ এক মুক্তি।
যেখানে মানুষ অন্যকে নিজের মতো ভালোবাসে, কিন্তু তার স্বাধীনতাকে ছুঁয়ে দেখে না।
আজকের দ্রুতগতির পৃথিবীতে মানুষ যেন ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ ভুলে যাচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি, ইমোজি, বা ভার্চুয়াল কথোপকথন ভালোবাসাকে এক ধরনের প্রকাশে বেঁধে ফেলছে। কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ নয়, অনুভব। সেটা থাকে চোখের নীরবতায়, যত্নের অপ্রকাশিত মুহূর্তে, কিংবা কারো অপেক্ষায় ঘুম না আসা রাতে।
ভালোবাসা কেবল রোমান্টিক অনুভূতি নয়।
এটা মায়ের ছায়া, বন্ধুর হাত ধরা, বা একজন অপরিচিত মানুষের প্রতি সদয় দৃষ্টিও হতে পারে।
যে মানুষ ভালোবাসতে জানে, সে ভয়কে জয় করে; কারণ ভালোবাসার ভেতরেই আছে জীবনের অর্থ—অস্তিত্বের মূল শিকড়।
শেষমেশ বলা যায়—মানুষ যতদিন ভালোবাসবে, পৃথিবী ততদিন সুন্দর থাকবে।
কারণ ভালোবাসা কোনো যুগের নয়, কোনো ধর্মের নয়—এ মানুষের আত্মার আলো।
যে আলো অন্ধকারেও টিকে থাকে, মৃত্যুর পরেও থেকে যায় স্মৃতির মতো, গন্ধের মতো, এক অনন্ত আলো হয়ে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন