![]() |
সুজিতা দাস |
। সুজিতা দাস ।
সবার কাছেই তাদের গ্রাম খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় একটি জায়গা । তেমনি আমাদের কাছে আমাদের গ্রাম খুবই আকর্ষণীয়। তার একটা কারণও আছে বটে। আমাদের হাওরের গ্রামগুলো অন্য গ্রামের থেকে একটু ভিন্ন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি তো বটেই,তার ওপর আমাদের গ্রামে এখন অবধি লাকড়ির চুলা প্রচলিত আছে।
হাওরের গ্রামের পুরুষেরা কৃষিকাজ, মাছ ধরা সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। আর নারীরা অনেকই গৃহিনী। কিন্তু আমাদের গ্রামের প্রত্যেক ঘরেই নারী - পূরুষ দুজনকেই ঘরের কাজ এবং বাইরের কাজ করতে দেখা যায় সমানভাবে। গ্রামের নির্লোভ, শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো অল্পতেই খুশি। তারা সহজ সরল জীবনযাপনের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পায়। দুর্নীতি, রাজনীতির জটিল ধাঁধা থেকে অনেক দূরে।
এবার বলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। আমাদের সবুজ গ্রাম। মায়ের সাথে যেমন শিশুর সম্পর্ক থাকে তেমনি আমাদের গ্রামগোলোর সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক। চারিদিকে ধু ধূ রোদ, গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তখনও এই সবুজ গ্রামে থাকে প্রাণের স্পন্দন। চারিদিকে সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ। ছোট বড় হাজারো রকমের গাছ। ফুলের গাছ , ফলের গাছ ,কত বাহারি গাছের মেলা। এই গাছগুলো যেমন পরিবেশকে মনোরম করেছে তেমনি হয়ে উঠেছে হাজারো জীবের আশ্রয়স্থল। বরাক নদীর একটি শাখা নদী ঘাঘরা বয়ে গেছে হাওরের বুক বেয়ে। এই নদে ভরা কচুরিপানা যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো ও মনোরম করে তুলেছে । বাচ্চারা জলে সাঁতার কাটে, বয়স্করা স্নান করে, মেয়েরা কাপড় ধোয়। আছে রকমারি মাছ রুই, কাতলা, পুটি। মাছ ধরা হয় যেদিন, সেদিন যেন একটা উৎসব ।
গ্রামের সকাল সন্ধ্যার শান্ত মৃদু বাতাস হৃদ্য়ের গভীর পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। মাঠের এই সবুজতা, ফসলের ফুল যখন ফুটে তখন যেন মাঠের চেহরাই পাল্টে যায়। কখনও হলুদ, কখনও বেগুনী, আরও কতো রং। মাঠের পাকা ধানের রং সকালের সুনালী রোদকেও হার মানায় । হ্যাঁ, এরকমই চাতলা হাওরের গ্রামের সুন্দর্য।
তবে আমাদের গ্রামের কলেজে পড়া ছাত্রছাত্রীদের প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে গিয়ে অটো রিক্সা ধরতে হয়। বর্ষাকালে কাদা ঘেঁটে ঘেঁটে বাড়ি যেতে হয়। গ্রামের বেশিরভাগ রাস্তাগুলোতে এঁটেল ও বালিমাটি। বর্ষার জলে সে এক বিচিত্র পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কোথাও হাঁটু সমান কাদাজল বা কোথাও চ্যাটচ্যাটে কাদা। তারপর ধীরে ধীরে লালমাটির রাস্তা। গ্রামের এই মাটির রাস্তাতে আলাদা অনুভূতি আছে, আলাদা আবেগ আছে যা হয়তো অন্য রাস্তা এতটা টানতে পারবে না। এইভাবে তিন কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করার পর শরীরে ক্লান্তি তো আসা স্বাভাবিক। শরীরে এই ক্লান্তির ভাব থাকা সত্ত্বেও মনের শক্তিতে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা কলেজের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপর এখন তো পিস গলিয়ে রাস্তা তৈরি হচ্ছে সময়ের সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হবে এবং আগামী দিনেও তা চলতে থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন