তোমাকে যেতে হয়নি চিকেন-নেক পেরিয়ে নরকাসুর পাহাড়ের পাশে বয়ে যাওয়া সুশীতল পানীয়ের খোঁজে।
ট্রেন থেকে নেমে নদী পারাপার। ঘাটে নেমে অনেকটা কষ্ট করে বন্ধুর সৌজন্যে একখানি মটর-গাড়ির বন্দোবস্তে চড়াই উতরাই পেরিয়ে শৈল শহরে পৌঁছে প্রশান্তির সারি সারি পাইনাস খাসিয়া। এদিকে ওদিকে ছড়ানো ঝরনার শব্দ। ঘণ্টার সুরের মতো ঝিঁঝি পোকার একটানা গান।
কলিকাতা হইতে আগত কবিকে "কুবলেঈ" বলে স্বাগত জানায় এক শ বছর আগের সেদিন ১৯১৯এর ১১ই অক্টোবর।
চেরাপুঞ্জি থেকে মানুষের পিঠে চেপে সমতলে নেমে যাবার প্রস্তাব করেছ বাতিল।
পাহাড় থেকে গাড়ি করে নীচে নেমে সে বছর চার নভেম্বর ছুঁয়ে গেছ লঙ্গাই নদীতীরে করিমগঞ্জ রেলস্টেশন। কুশিয়ারার কূল দেখেছিলে কি না জানা নাই। অথবা, নটী-খাল।
বেঙ্গল রেলওয়ের দেওয়া তোমার স্পর্শ পেয়ে ধন্য হয়েছিল যত ধানক্ষেত আর সুপারির গাছ। মাঠে মাঠে সারি দেওয়া কুশিয়ার ক্ষেত। ঝুঁটি নেড়ে হেসে ছিল আনারস আর দূরে বয়ে যাওয়া বড়বক্র স্রোত।
আমার জন্ম শহর থেকে সেই রেলগাড়ি চলে গেছিল কমলালেবু আর চা-বাগিচায় ঘেরা সুরম্য সুরমায়। ছিলে কত দিন। তারপর ত্রিপুরায়।
অতঃপর তৈরি হবে কীন-ব্রীজ সুরমার বুকে। আমার পিতামহ যুক্ত হবেন সেই কর্মকাণ্ডে।
তারপরও তুমি আসবে বার বার।
একটি সুশীল যুবক কবিকে লিখবে চিঠি।
যে চিঠিটির কথা আমি শুনেছি কিন্তু দেখি নাই। যেইরূপ, সেই আদি নিবাসে আমি যাই নাই কখনো।
দেশভাগের পলি জমা আমার পিতামাতার হা-হুতাশ মিলিয়ে গেছে বহুদিন, ওঁদের ইহলোক ত্যাগের সাথে সাথে।
এখন নতুন শব্দে লব্জ নিত্যনতুন দেশহারাদের মর্মন্তুদ আর্তনাদ।
চিকেন-নেক নামক ভৌগোলিক শব্দটা জন্মানোর বেশ আগেই তোমারও যাত্রা শেষ হয়েছিল। বেশ হয়েছিল।
আমার স্বদেশের বোয়ামে বোয়ামে এখন জারিত হয় নানান শব্দের শেলফ-লাইফ।
ইনার লাইন পার্মিট অথবা খিলঞ্জীয়া নথির বেড়াজাল তোমাকেও আটকে দিত না তো!
চিকেন-হার্টদের প্রাণভোমরা ভরে রাখার এই সকল কৌটো তৈরির বহু আগেই তুমি অস্তমিত হয়ে ছিলে। বেশ করেছিলে।
তোমার সেই যাত্রার পথের সূত্র ধরে এক শত বৎসর পর তবু আমরা তোমাকেই মনে মনে ভাবি।
[প্রতাপ ঃ অনলাইন-৪]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন