ভয়

সীমা ঘোষ 

। সীমা ঘোষ ।

[প্রতাপ : অনলাইন-১৪]

আমার ঘরের মুশকিল আসান তপতী হন্তদন্ত হয়ে সময়ের আগে ছেলেকে নিয়ে হাজির। ব্যাপার কী?

- দিদি দুইশোটা টেকা দ্যাও।

- কেন?

- ছেলে হাইস্কুলো বর্তি হইত।

- টাকা লাগবে কেন?

- জানি না। মাস্টরনি কয়, বর্তি হইতে দুইশো টেকা লাগব।

- সে আবার কী? এখন তো সরকারি স্কুলে সব ফ্রি, টাকা লাগবার তো কথা নয়।

- জানি না দিদি। সবেউ দেয়। আর কয়, না দিলে বর্তি করাইতে পারবায় না। হেড মাস্টরনির টেবিলের উপরে দেখসি বেজান টেকা রাকা আছে।

- টাকা দেবে, তার রশিদ দেব?

- রশিদ?

- না, মানে তুমি যে টাকা দেবে তার জন্য কোনো কাগজে লিখে দেবে কিছু? তুমি যে টাকা দিলে তার কী প্রমাণ থাকবে?

- এইসব কে কইব দিদি।

তপতীর উদ্বেগ বাড়ে। আমার কথার প্যাঁচে তার বুঝি সময় পার হয়ে যায়। মাথার ভেতর দুশ্চিন্তা ভনভন ঘোরে বুঝি। চোখে মুখে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কালো ছায়া, ছেলের স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া থমকে যাবে না তো!

- ওঔ তো, দেখলায় নানি, স্কুলের পাশ সাটিপিকেট আনার সময়, উমাশংকর পাঠশালা দেড়শ টেকা লইল। কয়, না দিলে সার্টিপিকেট দিতা না। আমরা কিতা অত মাততে পারমু নি? তে সেইবারও তো দিলাম দেড়শ টেকা। লকডাউনে জামাইয়ের কাম কাজ আসলো না। যে কষ্ট করিয়া দিন কাটাইসি। এখন সবতাতউ ভয় লাগে। তারার লগে বেশি মাতাত যাইলে তারা আবার ছেলেরে বর্তি করিয়া না লয়...

পার্শ থেকে দুশো টাকা বের করে তপতীর হতে দিই। তপতীর চোখে কৃতজ্ঞতার ঢেউ দুলে ওঠে। ছেলেকে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে সে নেমে যায়।

আমি তাকিয়ে থাকি ওর চলার দিকে। তপতীর প্রতিদিনের যুদ্ধে আর একটা অন্তহীন সহ্যক্ষমতার আয়ুধ যোগ হয়!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...