![]() |
সোমদত্তা দাস |
। সোমদত্তা দাস ।
আজও অনেকটাই লেট করে ঘুম থেকে উঠেছে তারা। প্রায় ১২টা নাগাদ। না, বাড়িতে কেউ নেই। সে একা। ব্রেকফাস্ট আজও কামাই। ব্রাশ করে ঝটপট তৈরি হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরে সে। আজকের দিনটা বাড়িতে বসে হৈচৈ দেখে কাটাতে রাজি নয় সে। কাজের চাপে বই পড়ার অভ্যেসটা প্রায় ছুটেই গেছে, এখন এন্টাড়টেইনমেন্ট মানেই web series। তাই আজ এই ছুটির দিনে কয়েকটা বই কিনবে বলে ভেবে রেখেছে। যাওয়ার আগে পোষা বেড়ালের খাবারটা তার জায়গা মত রেখে দেয়। কানে হেডফোন। মডারেইট ভলিউমে বাজতে শুরু করে অঞ্জন দত্ত।
পরনে বিশেষ কিছু না, হাল্কা গোলাপি রঙের কুর্তা আর একটা নীলচে জিন্স-পেন্ট। কপালে ছোট্ট কালো বিন্দি। নিজের গলিটুকু হেঁটেই পার করে। রাস্তার মুখে পেয়ে যায় অটো। জিজ্ঞেস করে -
"সাহানা বুক স্টোর?"
"উঠুন"
দেরি না করে উঠে পরে তারা। মুঠোফোন বের করে স্ক্রল করে কিছুক্ষণ। কিছুই ভালো লাগছে না। ফিরে যায় আবার গানে। বাজছে ভবঘুরে নভশ্চর। বুক স্টোরের ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায় অটো। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বই হাবের ভেতরে যায় তারা।
ফাঁকাই আছে। এক গাদা বই, রিসেপশানিস্ট আর তারা। থ্রিলার সেক্সশানের দিকে এগিয়ে যায়। ব্যোমকেশ পড়া হয়নি, হাতের কাছে কখনও পায়নি বলে বোধ হয়। আজ ব্যোমেকেশ-ই কিনবে। ব্যোমকেশ সমগ্র হাতে নিয়ে চোখ বোলায় অন্য সব বইয়ের দিকে। ব্যোমকেশের সাথে সাথে আরও কিছু বই নিয়ে রিসিপশানের দিকে এগিয়ে যায়। বিলিং চলছে। হঠাৎ করে ফোনটা বেজে ওঠে।
"সোহম...?"
আজ পাঁচ বছর পর হঠাৎ তারার কথা কেন মনে পড়লো সোহমের? চার নম্বর রিঙ-এ ফোন রিসিভ করে তারা।
"হ্যালো?"
"তারা! I wasn't sure if you would pick up to be honest! five years and still the same number? I got lucky!"
"তোর নম্বরটাও তো বদলাসনি। সেই এক-ই"
ফোনের ওপাশ থেকে সোহমের হাসি শোনা যায়।
"কেমন আছিস? আজ হঠাৎ এত বছর পর আমার কথা মনে পড়ল যে?"
"আরে না... মানে..."
"থাক, আমাকে আর বোঝাতে হবে না। বল, কি দরকার আছে?"
"ছি ছি ছি! তুই ভাবলি এত বছর পর শুধু দরকার পড়েছে বলে তোকে কল করেছি? honestly, I am hurt Tara!"
"নেকামো করার অভ্যেসটা তাহলে এখনও রয়ে গেছে।"
দুজনেই হেসে উঠে।
"এই গত সাপ্তাহ শহরে ফিরলাম। তাই ভাবলাম তোকে কল করে দেখি। এখনও যদি শহরে টিকে থাকিস তাহলে নাহয় দেখা করতাম? Catch up, you know?"
"হুম..."
"কোথায় আছিস এখন? ব্যস্ত?"
"না ব্যস্ত না ঠিক, বই কিনছি।"
বিলটা মিটিয়ে দিয়ে হাতে বইয়ের ব্যাগটা নিয়ে বুক হাব থেকে প্রস্থান করতে করতে তারা বলে -
"এই ব্যাস বিলটা মিটিয়ে বেরোলাম।"
"Wait, let me guess! Sahana book store?"
"হ্যাঁ।"
"ওখানেই দাঁড়া। আমি আসছি। বাবার স্কুটিটা হাইজেক করেছি বুঝলি।"
"বাপরে! তুই সত্যি আসছিস !"
"হ্যাঁ। আজকে তোর সাথে দেখা করেই ছাড়বো! নড়বি না। আমি এই ১০ মিনিটে আসছি।"
ফোনটা কেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয় তারা। মুখে তার মুচকি হাসি। ৫ বছর, কিন্তু কথা বলে তেমন মনেই হয়নি... হেডফোনে আবার গান বেজে ওঠে। শুধু তোমাকেই ভালোবেসে...
"সরি সরি, অল্প লেট হয়ে গেল।"
সোহমের গলা শুনে পিছে ঘুরে তাকায় তারা। কান থেকে হেডফোন খুলে ব্যাগে পুরে দেয়। কিছুক্ষণ চুপচাপ। কেউ কোনো কথা বলে না । সোহম অনেকটা বদলে গেছে। লম্বা চুল রেখেছে। খোঁপা করা। চশমার ফ্রেমটাও বদলে গেছে...
"কি রে? কিছু বলবি? না এরকম-ই অসভ্যের মত আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি?"
মুচকি হাসে তারা।
"ভাবছিলাম কতটা বদলে গেছিস। তারপর কথা বলা শুরু করলি, বুঝে গেলাম, এখনও সেই narcissitic পুরুষ আপনি।"
"উঠে পর। সকালে খাওয়া হয়নি নিশ্চয়ই? এতটাও বদলাসনি জানা আছে। চল, লাঞ্চ করব।"
"I am giving you the side eye, hope you know that.."
বলতে বলতে তারা উঠে পরে স্কুটিতে।
কিছুক্ষ্ণ দুজনেই কিছু বলে না। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর সোহম জিজ্ঞেস করে---
"কোথায় যাওয়া যায় বল তো? Tiffany's কী এখনও আছে? ওখানেই তো সবসময় যাওয়া আসা ছিল আমাদের, তাই না?"
"হ্যাঁ আছে। অনেকদিন ওখানে যাওয়া হয় না, তবে অফিসের রাস্তায় পরে আমার... উফ কত যে মেমরিস ওখানে! তুই চলে যাওয়ার পর Tiffany's -এ আমার আর বোধ হয় যাওয়া-ই হয়নি..."
আবার নীরবতা। মিনিট দশেক লাগে রেস্তরায় পৌঁছাতে তাদের।
"Table for two, please."
"This way, sir."
টেবিলে বসে পড়ে দুজনেই। মুখোমুখি। মেনু দেখে অর্ডার দেওয়া শেষ।
"আর বল, কেমন আছিস?" সোহমের প্রশ্ন।
"এই ব্যাস চলছে আর কি... 9 to 5, then home, sleep, 9 to 5 again. Boring corporate life you know."
"হুম। আমারও ওই একই রকম বলতে পারিস, ওই weekends এ অল্প sketching করি। অভ্যেসটা ছুটে যেতে দিই নাই... সবই তো বদলে গেছে, পুরনোর মধ্যে ওই আঁকাটাই রয়ে গেলো..."
"বাহ! আর আন্টি আঙ্কেল ভালো আছেন?"
"ওই চলছে আর কি! তোর মা ভালো?"
"She passed away last year"
"ও .. আমি জানতাম না, আমি... I am so sorry.."
"Its okay, nothing to be sorry bout."
খাওয়ার নিয়ে আসে waiter। নীরবে খাওয়া শুরু করে দুজনেই। খেতে খেতে অনেক না বলা কথা, পাঁচ বছরের জমানো গসিপ, আরও কত কী...
তারা অনেক দিন পর এমন মন খুলে হাসছে। সময় তারার ভালো যাচ্ছে না... মায়ের চলে যাওয়া, একা হয়ে যাওয়া, কিন্তু সোহমের সাথে আবার সেই পুরোন comfort খুঁজে পাচ্ছে সে। খাওয়া শেষ করে, বিল মিটিয়ে দেয় সোহম। তারার কোনো প্রতিবাদ মানতেই সে রাজি নয়। তারাকে রীতিমত বকা ঝকা করেই পার্সটা ঢোকানো করায় সোহম। এই লাঞ্চটার দরকার ছিল তারার। অনেকটাই। কত চাপানো কথা এত সহজে হয়তবা সোহমকেই বলতে পারত সে। একজন পুরনো বন্ধু, এমন একজন যে তাকে ছোট থেকে চিনে, জানে। বাড়ি ফেরার পথে দুজনেই চুপ। Awkward silence নয় comfortable silence। মুখে তারার হাসি। স্কুটি থেকে নেমে সোহমের দিকে তাকালো তারা।
"আমি আসলে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ফিরে এসেছি। এখন এখানেই থাকব... এবার কন্টেক্ট হারাবো না... আবার দেখা করবি তো?" সোহম বলে।
তারা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। এক গাল হাসি দিয়ে স্কুটি ঘুরিয়ে সোহম চলে যায়। তারার মুখে এখনও হাসি। তাকিয়ে আছে... খুশি। অনেক দিনের সেই একা একা ভাবটা হঠাৎ করে উধাও হয়ে মিশে যায় বাতাসের সাথে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন