। যোগেন্দ্র চন্দ্র দাস ।
"যে জাতি নিজ ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে পারে না, সে জাতি কখনও উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে না।” বঙ্কিমচন্দ্র কথিত এই নিজ ভাষা হচ্ছে মাতৃভাষা। মাতৃভাষা শুধু কি একটি ভাষা? না। মাতৃভাষা একটি জাতির আত্মপরিচয়। তার সামগ্রিক সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার মাধ্যমে আমরা অন্য ভাষা-সংস্কৃতিকে সহজে আয়ত্ত করতে পারি। আমার মাতৃভাষা বাংলা। তাই এই ভাষা আমার প্রাণের স্পন্দন, আত্মপরিচয়ের প্রতীক, মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। বাংলা ভাষার মধ্যেই খুঁজে পাই বিশ্ব চরাচরের যাবতীয় মাধুর্য, বাংলা ভাষার মতো আর কোন ভাষা আমার 'কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া' প্রাণকে আকুল করতে পারে না। কবি আমাদের এই মর্মের কথাই লিখেছেন, 'তোমার কোলে, তোমার বোলে কতই শান্তি ভালবাসা...কী যাদু বাংলা গানে, গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে, গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা...'। নেনসন ম্যান্ডেলা যথার্থই বলেছেন, "তুমি যদি একজন লোকের সঙ্গ এমন ভাষায় কথা বলো যে ভাষা সে বোঝে, তাহলে সেটি তার মাথায় গিয়ে পৌঁছোবে। যদি তুমি তার মাতৃভাষায় কথা বলো তাহলে সেটি তার হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছোবে।” জন্মসূত্রে এই ভাষায় কথা বলা আমার মৌলিক অধিকার।
আমাদের মনে রাখা উচিত মাতৃভাষা হচ্ছে সেই ভাষা, যে ভাষা একটি শিশু তার জন্মের পর থেকে পরিবার-পরিজন ও পরিবেশের মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শেখে। মাতৃভাষা যে-কোনো মানুষের চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করার প্রধান মাধ্যম এবং তার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্র এই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় আমাদের শিলচরে ১৯৬১ সালে ১৯শে মে বিশ্বের প্রথম নারী ভাষা শহিদ কমলা ভট্টাচার্য সহ আরও ১০জন নির্ধিদ্বায় বুকের রক্ত ঝরিয়ে হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছিলেন তদানীন্তন অসম সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে। তারপর যথাক্রমে ১৯৭২ ও ১৯৮৬ সালেও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় শহিদ হতে হয় বাঙালিদের। ভবিষ্যতে আরও কত রক্ত ঝরাতে হবে জানি না। কারণ যে আগ্রাসনের জন্য বাঙালিকে বলিদান দিতে হয়েছে, সেই আগ্রাসন বর্তমানেও চলছে শুধু এর ধরণ পাল্টেছে। বহু পূর্ব থেকে অসমে বসবাসরত বাঙালিকে এখনও প্রমাণ দিতে হয় সে বিদেশি কিনা? এই বেড়াজালে পড়ে লক্ষ লক্ষ বাঙালি এখনও NRC-তে নথিভুক্ত হতে পারে নি। বর্তমানে সমগ্র রাজ্যে যে নিযুক্তি প্রক্রিয়া চলছে তাতেও দেখা যাচ্ছে বরাক উপত্যকার বাঙালিদের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। এই আগ্রাসন তথা বৈষম্যমূলক মনোভাবের অবসান কবে হবে কে জানে! এমনটা যদি চলতে থাকে তাহলে এই অঞ্চলের বর্তমান প্রজন্মের বাঙালিদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।
বাঙালি সমাজ আজ প্রকৃত নেতৃত্বের অভাবে ধুকছে। যে সমাজের নেতৃবৃন্দ সারা ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার লোকের অভাব। তার কারণ খুঁজলে দেখা যাবে বাঙালি সমাজ এখন বহুধারায় বিভক্ত । রাজনৈতিক ভাবে অনেকেই নিজস্ব পরিচিতি জিজ্ঞেস করলে বলবে সে বিজেপি, সে কংগ্রেস, সে সিপিএম। ধর্মীয় পরিচয়ে সে হিন্দু, সে মুসলমান। জাতিগত পরিচয়ে সে হয়ে যায় বর্ণহিন্দু, তপশীলী ইত্যাদি। তাহলে বাঙালি কোথায়? বহুবিভাজিত এই সমাজে অনেকেই আজ নিজেকে বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত হতে পারছে না। এর চেয়ে আক্ষেপের বিষয় আর কীই বা হতে পারে! আবার এমনটাও লক্ষিত হয় যে উচ্চপদে আসীন বা উচ্চবিত্ত লোকেদের অনেকেই নিজেদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে যেন তাদের আভিজাত্যে বাঁধে।
বর্তমান প্রজন্মের একটি অংশ হিন্দিয়ানা বা ইংরেজিয়ানার মোহকরী জাদুতে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলেছে। তাদের মায়ের ভাষা, আত্মার ভাষা মাতৃভাষা বাংলা ওরা ভুলে যেতে বসেছে। কথায় কথায় ইংরেজি না বললে ওদের অভিভাবক লজ্জা পান। ওরা ভুলেই যাচ্ছে শিক্ষার পূর্ণ বিকাশ কী করে হয়! গাছের গোড়ায় জল না ঢেলে ডালপালায় জল ঢাললে যেমন গাছের পূর্ণ বিকাশ হয় না, তেমনি প্রথম ভাষা মাতৃভাষায় দক্ষ না হলে শিশুর শিক্ষারও পূর্ণ বিকাশ হয় না। একটি শিশু তার মাতৃভাষার উপর যত দক্ষ হবে সে তত তাড়াতাড়ি অন্যান্য ভাষায়ও দক্ষ হবার ক্ষমতা অর্জন করবে। মাতৃভাষায় দক্ষ না হয়ে অন্যভাষায় যতই দক্ষ হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সে হবে তোতাপাখির বুলি। আমাদের মনে রাখা একান্ত প্রয়োজন, "জাতির আত্মার প্রকাশ ঘটে তার ভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষাকে অবহেলা করা মানে জাতির অস্তিত্বকেই বিপন্ন করা।"
শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় অতি সহজে এবং দ্রুত কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে পারে। অনায়াসে খুব দ্রুত তাদের আবেগিক বিকাশ ঘটে। পিতা-মাতা-আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সন্তানের সামাজিক সম্পর্ক শক্তিশালী করে তোলে তার মাতৃভাষা। তাই শিশুকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেও তার পূর্ণ বিকাশ হবে না যদি সেই সঙ্গে বাংলা ভাষার উপরে গুরুত্ব না দেওয়া হয়। তাই প্রত্যেককেই নিজদের সন্তানদের বাংলা ভাষায় দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।
আসুন আমরা, জাতি-ধর্ম, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত এই সমস্ত কৃত্রিম ভেদাভেদ ভুলে নিজেকে বাঙালি পরিচয়ে গর্ব বোধ করি। উদাত্ত কণ্ঠে বলি বাংলাভাষা আমার মায়ের ভাষা, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই অধিকার রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব। আসুন সবাই মিলে এক বাঙলা সমাজ গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই। একসাথে গেয়ে উঠি - জান দেবো তবু জবান দেবো না। বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিতে হলে করবো না বাহানা।
বাঙালি সমাজ আজ প্রকৃত নেতৃত্বের অভাবে ধুকছে। যে সমাজের নেতৃবৃন্দ সারা ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার লোকের অভাব। তার কারণ খুঁজলে দেখা যাবে বাঙালি সমাজ এখন বহুধারায় বিভক্ত । রাজনৈতিক ভাবে অনেকেই নিজস্ব পরিচিতি জিজ্ঞেস করলে বলবে সে বিজেপি, সে কংগ্রেস, সে সিপিএম। ধর্মীয় পরিচয়ে সে হিন্দু, সে মুসলমান। জাতিগত পরিচয়ে সে হয়ে যায় বর্ণহিন্দু, তপশীলী ইত্যাদি। তাহলে বাঙালি কোথায়? বহুবিভাজিত এই সমাজে অনেকেই আজ নিজেকে বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত হতে পারছে না। এর চেয়ে আক্ষেপের বিষয় আর কীই বা হতে পারে! আবার এমনটাও লক্ষিত হয় যে উচ্চপদে আসীন বা উচ্চবিত্ত লোকেদের অনেকেই নিজেদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে যেন তাদের আভিজাত্যে বাঁধে।
বর্তমান প্রজন্মের একটি অংশ হিন্দিয়ানা বা ইংরেজিয়ানার মোহকরী জাদুতে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলেছে। তাদের মায়ের ভাষা, আত্মার ভাষা মাতৃভাষা বাংলা ওরা ভুলে যেতে বসেছে। কথায় কথায় ইংরেজি না বললে ওদের অভিভাবক লজ্জা পান। ওরা ভুলেই যাচ্ছে শিক্ষার পূর্ণ বিকাশ কী করে হয়! গাছের গোড়ায় জল না ঢেলে ডালপালায় জল ঢাললে যেমন গাছের পূর্ণ বিকাশ হয় না, তেমনি প্রথম ভাষা মাতৃভাষায় দক্ষ না হলে শিশুর শিক্ষারও পূর্ণ বিকাশ হয় না। একটি শিশু তার মাতৃভাষার উপর যত দক্ষ হবে সে তত তাড়াতাড়ি অন্যান্য ভাষায়ও দক্ষ হবার ক্ষমতা অর্জন করবে। মাতৃভাষায় দক্ষ না হয়ে অন্যভাষায় যতই দক্ষ হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সে হবে তোতাপাখির বুলি। আমাদের মনে রাখা একান্ত প্রয়োজন, "জাতির আত্মার প্রকাশ ঘটে তার ভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষাকে অবহেলা করা মানে জাতির অস্তিত্বকেই বিপন্ন করা।"
শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় অতি সহজে এবং দ্রুত কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে পারে। অনায়াসে খুব দ্রুত তাদের আবেগিক বিকাশ ঘটে। পিতা-মাতা-আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সন্তানের সামাজিক সম্পর্ক শক্তিশালী করে তোলে তার মাতৃভাষা। তাই শিশুকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেও তার পূর্ণ বিকাশ হবে না যদি সেই সঙ্গে বাংলা ভাষার উপরে গুরুত্ব না দেওয়া হয়। তাই প্রত্যেককেই নিজদের সন্তানদের বাংলা ভাষায় দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।
আসুন আমরা, জাতি-ধর্ম, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত এই সমস্ত কৃত্রিম ভেদাভেদ ভুলে নিজেকে বাঙালি পরিচয়ে গর্ব বোধ করি। উদাত্ত কণ্ঠে বলি বাংলাভাষা আমার মায়ের ভাষা, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই অধিকার রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব। আসুন সবাই মিলে এক বাঙলা সমাজ গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই। একসাথে গেয়ে উঠি - জান দেবো তবু জবান দেবো না। বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিতে হলে করবো না বাহানা।
খুব সুন্দর স্যার, সময়োপযোগী লেখনী
উত্তরমুছুন