সেলফি পয়েন্ট

প্রতাপ : ১৮তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩২ 

। সৈকত মজুমদার ।

স্কুল কলেজ জীবনে প্রেম ভালোবাসায় আবেগ কাজ করে, বিবেক তখন নাবালক। স্কুলের গন্ডি পেরোতেই বোঝা যায় প্রেম ভালোবাসা জীবনের সব নয়; তার বাইরেও একটা জগত আছে। প্রেম ভাত দেয় না, বোঝাপড়া দেয়। আর পরিশ্রমের ফলই সেই জগতের জোয়ার ভাটা সামলে জীবন নৌকা বায়।

জিনিয়া বিয়ের আগে এক নির্জন সন্ধ্যায় রণিতের কাঁধে মাথা রেখে বলেছিল- "রণিত, অন্য কারও সাথে বিয়ে হলে আমি বাঁচব না!" রণিত ভিতরে ভিতরে খুশিতে আপ্লুত হয়। জিনিয়ার ভালোবাসা আর বিশ্বাসকে উজ্জ্বল করতে ভালো আয়ের স্বপ্ন দেখে। কলেজ শেষ না হতেই জিনিয়াকে আশ্বস্ত করে বলে- আমি দু'একদিন দেখা না করলেও তুমি কিন্তু ভুল বুঝো না। আমাকে দাঁড়াতে হবে।

রণিত পড়ার ফাঁকে বিভিন্ন চাকরির ইন্টারভিউ দেয়। কখনও ডেলিভারি বয়ের কাজ করে। তবু জিনিয়ার উপযুক্ত হয় না। তারপর এজেন্সিতে কাজ ধরে, আয় ভালো কিন্তু কাজের সূত্রে দূরে যেতে হয়। জিনিয়ার সাথে দেখা হয় না। মা-বাবার সাথেও না। খুব কষ্ট হয় তার। এদিকে জিনিয়াও সন্দেহ করে। সে এজেন্সি ছেড়ে দেয়। আর তখনই জীবনের উপর আসে বন্যা। একদিন মুহুরীর করাল গ্রাসে ভিটে হারিয়ে, সে হয়ে যায় নিঃস্ব! জিনিয়া এসব দেখে উদ্বিগ্ন। নিরাশ হয় জিনিয়ার পরিবারও। রণিত তবুও জিনিয়াকে ধৈর্য্য ধরতে বলে। বলে- আমাদের ভালোবাসার ভিটে এখন চর হয়েছে, জমেছে পলি। একদিন পলি জমা উর্বর মাটিতে সোনার ফসল ফলবে। আমি চাষাবাদ করব, দেখবে।

তারপর জীবনের উপর বয়ে গেল আরও নানা ঝড়। দিন গড়িয়ে সপ্তাহ, সপ্তাহ গড়িয়ে পক্ষ, পক্ষ গড়িয়ে মাস আর মাস গড়িয়ে বছর। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে রণিতের জীবন! একদিন সেই পলি জমা উর্বর মাটিতে সোনার ফসল ফলেছে। সে নিজের আয় থেকে ঘর তুলে মা-বাকে রেখেছে। বেকার রণিত পায়ের তলার ভিত মজবুত করেছে ঠিকই; ততদিনে ওর ভালোবাসার পাখি উড়ে যায় এক আকাশ থেকে অন্য আকাশে!

আজ দূর্গাষ্টমী। তাড়াতাড়ি কাজ ছেড়ে সন্ধ্যায় সেজেগুজে বেরিয়ে পড়ে রণিত রাস্তায়। পথে ওরিয়েন্টাল ক্লাবের পূজো প্যান্ডেল। এক পাশে স্পট লাইটের কৃত্রিম ফুলমালায় সাজানো একটি গোলাকৃতি বড় ফ্রেমের জায়গা। ছবি তোলার জন্য রয়েছে "সেলফি পয়েন্ট।"

তখনও স্বেচ্ছাসেবকদের নাকাবন্দী শুরু হয়নি। রণিতের বাইক এগিয়ে যায়। এগিয়ে যায়  সুবেশী তিনটি শরীর সেলফি পয়েন্টের দিকে। কৌতূহলে তাকায় রণিত। হাসিখুশি ফুটফুটে বাচ্চা কোলে নিয়ে এক সুখী পিতা সেলফি পয়েন্টের ভিতর গিয়ে দাঁড়ায় আর হাসিমুখে সেলফি ক্যামেরা মিলিয়ে নিয়ে ক্লিক ক্লিক করে চলছে জিনিয়া!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৮তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩২)

সম্পাদকীয়  … শরতের আকাশে মেঘের ভেলা ,  দিগন্তে কাশফুলের শুভ্র হাসি —  যেন বাংলার মাটিতে ফিরে আসে এক চিরন্তন প্রতীক্ষার ঋতু। ঢাকের আওয়াজ , ...