-
দেবলীনা রায়
ভারতের
সর্বশ্রেষ্ঠ মহামনীষীদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এক সাধারণ মানব
থেকে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠা অনন্য ইতিহাস বিদ্যমান। তিনি তো শুধু ধর্মগুরু
ছিলেন না, ছিলেন মানবতাবাদী, সমাজসেবক ও দেশপ্রেমিক। প্রত্যক্ষভাবে তিনি রাজনীতিতে জড়িত
ছিলেন না,
কিন্তু পরোক্ষভাবে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবনার দ্বারা
পরাধীন ভারতকে মুক্ত করার জন্য যুবসমাজকে আহ্বান জানিয়েছিলেন,
উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর প্রসঙ্গে নেতাজী তাই তো বলেছিলেন,
স্বামীজী ছিলেন পৌরুষসম্পন্ন, পূর্ণাঙ্গ মানুষ, তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে সংগ্ৰামী, ছিলেন
শক্তির উপাসক। তাই তিনি দেশবাসীর উন্নয়নের জন্য বেদান্তের বাস্তব ব্যাখ্যা
দিয়েছেন। শিকাগো শহরে আয়োজিত ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামীজীর যোগদান,
নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বিজয়ধ্বজ উড়িয়ে বিদেশে
ধর্ম মহাসভা জয় করে, সফলতার রাজমুকুট পরে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। এ পবিত্র
ভূমিতে তাঁর শুভ পদার্পণের ১২৫ তম বর্ষপূর্তি হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ।
আবার সে বছরই মে মাসে পালিত হল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রতিষ্ঠা দিবসের ১২৫ তম
বর্ষপূর্তি। সপ্তর্ষিমণ্ডলের ছায়াপথে এক ঋষি গভীর ধ্যানে নিমগ্ন,
শ্রী শ্রী ঠাকুর তাঁকে সে ছায়াপথ থেকে কুড়িয়ে বসুমাতার
কোলে তুলে দেন। ছোট্ট বিলে থেকে নরেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ থেকে ঠাকুরের লরেন,
ঠাকুরের সংস্পর্শে সর্বস্ব ত্যাগ । ঈশ্বরের সাধনায় লীন,
গৈরিক বস্ত্র ধারণ, সন্ন্যাসী ব্রত পালন। গীতার যে উক্তি, "জীর্ণ বস্ত্র বর্জন করে নববস্ত্র পরিগ্ৰহণ”। ঠাকুর
কাশীপুরে লিখিত ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, "নরেন শিক্ষা দিবে, যখন ঘরে -বাইরে হাঁক দিবে"। ঠাকুরের কথাটি প্রমাণসিদ্ধ। ভারতের মাটিতে পদার্পণের,
মাদ্রাজবাসী স্বামীজীর অভূতপূর্ব অভ্যর্থনার আয়োজনের সাথে,
রাজপথে সুশোভিত তোরণ স্থাপন করা হয়েছিল,
লেখা ছিলো-- "Long Live the venerable
Vivekananda', "Welcome prince of Men', "Hail, Harbinger of peace',
Hearty Greetings of Awakened India" ইত্যাদি।
শতবছর অতিক্রান্ত, দেশে-বিদেশে তিনি সমাদৃত। বহু রাজনীতিবিদদের,
সংগ্ৰামীদের, দার্শনিকদের তিনি পথপ্রদর্শক। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঋষি
অরবিন্দ,
সুভাষচন্দ্র বসু, কানাইলাল দত্ত প্রমুখ। পাশ্চাত্য সভ্যতার মুখোমুখি হয়েও
তিনি ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ভুলে যান নি। কলকাতার বাগবাজারের তাঁকে অভ্যর্থনা দেওয়া হয় । সেসময়
স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী যোগানন্দ স্বামীজীর গলায় পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেন।
স্বামীজী দুজনকেই নমস্কার করে বললেন : "গুরুবৎ গুরুপুত্রেষু।" মহারাজ ও
প্রণাম করে উত্তর দিলেন : "জ্যেষ্ঠভ্রাতা সম পিতা।" নিজের মাতৃভূমি ও
গুরুভাইদের সাথে সেদিন স্বামীজী আনন্দের মেজাজে কাটিয়েছিলেন। বললেন,"আমি সেই নরেনই আছি।... বাংলার বুলি
ভুলিনি।" স্বামীজী দোতলায় উঠতেই গিরিশবাবু স্বামীজীর গলায় মালা পরিয়ে
দিয়ে প্রণাম করতে গেলে স্বামীজী তাঁর হাত ধরে ফেললেন : বলেন "ও কি জিসি! এতে
যে আমার অকল্যাণ হবে। তোমার রামকৃষ্ণকে "জয় রাম" বলে সাগর পার করে
দিয়েছি।" প্রত্যক্ষদর্শী কুমুদবন্ধু সেন লিখছেন : "গিরিশবাবু স্বামীজীর
দিকে তাকিয়ে আনন্দ পূর্ণ হয়ে গেছেন।" চার বছর পাশ্চাত্যে পরিশ্রম ও দীর্ঘ
সমুদ্রযাত্রার পর স্বামীজী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু কি আশ্চর্য পাম্বানে পৌঁছানোর পরই তাঁর মধ্যে অদ্ভুত
ভাবান্তর দেখা দিল ।
আরও হাজার হাজার বছর অতিক্রান্ত
হয়ে যাবে, স্বামীজীও হাজার বছরের
প্রতিটি প্রজন্মের অন্তরে স্বমহিমায় বিরাজমান থাকবেন তাঁর মূল্যবান বাণী ও উপদেশ দ্বারা।
তিনি যে যোগপুরুষ সিদ্ধপুরুষ। পরমহংসদেবের অখণ্ড অংশ।
🙏🚩
উত্তরমুছুন