ফ্রম হেয়ার টু হেয়ার

প্রতাপ : অনলাইন-২৭

সোমদত্তা দাস

। সোমদত্তা দাস ।

সূচি এই প্রায় তিন বছর পর নিজের শহরে ফিরে এসছে। বাড়িতে দুদিন রেস্ট করে আজ বেরিয়ে পড়েছে শহরটাকে একটু ঘুরে নিতে। সেই পুরনো স্পটস্। মল পার্ক আরও কত জায়গা। যতসব কাণ্ডকারখানা। আজকের ডেসটিনেশন মল্। মলের থার্ড ফ্লোরে উঠেই টয় শপের দিকে ছুটে সূচি। কত স্মৃতি এখানে। কলেজ কালের প্রেম, কোচিং বাঙ্ক করে এখানে আসা। স্মৃতি রোমন্থনের সাথে চলছিল পুতুল দেখা। হঠাৎ কেউ পাশ থেকে তার নাম ধরে ডাকে ---

--- সূচি ! তুই! এখানে! কবে এসছিস? 

--- আরে শুভম! এই তো লাস্ট উইকে এলাম রে। তুই বল, কেমন আছিস?  

--- একদম ফার্স্ট ক্লাস। তা মলে একা একা... 

--- কিছু না। জাস্ট ওয়ান্টেড টু ফিল নস্টালজিক। 

বলেই হেসে ফেলে দুজনেই। খানিক চুপ থেকে সূচি আবার বলে ওঠে ---

--- তা আপনি এখানে কী করছেন! ডেট? 

--- এ্যাই, ধ্যাত পাগল, ওই অফিস তো পাশেই। আজ ভাবলাম লাঞ্চটা বাইরে করি, তাই। আর কিছু নয়। 

--- আরে বাহ্! মাইন্ড ইফ আই জয়েন? 

--- ধুর। মাইন্ড কেন করব? গুড,  উল্টো খুশি হব। চল। চল। তোর কী কিছু কেনার ছিল?

সূচি মাথা নেড়ে জানায় কিছু কেনার নেই। এবার দুজনে এগোয়। নেক্সট স্টপেজ কেএফসি। 

--- ভেরি অরিজিন্যাল শুভম। 

--- এ্যাই চুপ কর তো। কতদিন পর কেএফসি এসছি, উফ!!! 

সূচি আবার হাসে। কাউন্টারে গিযে নিজেদের পছন্দমতো অর্ডার করে একটা ভালো জায়গা দেখে বসে পড়ে। অল্প সময় অকোয়ার্ড সাইলেন্স। তারপর সূচি-ই বলে ওঠে ---

--- তুই এখানেই আছিস তাহলে। বাইরে যাবার প্ল্যান নেই বুঝি?  

--- বাবা মারা যাবার পর মাকে একা রেখে কী করে যাই বল? 

--- শিট! আই অ্যাম স্যরি। জানতামই না আঙ্কেল পাসেস এওয়ে। আই অ্যাম এক্সট্রেমলি স্যরি। 

--- আরে না না। ইটস্ ওকে। আর বল, কেমন আছিস? কী করছিস?  

তিন বছরের জমানো গল্প বলতে থাকে সূচি। শুভমও। দুজনেই গল্পে মাতল। হাসি ঠাট্টাও চলল। একদম যেন পুরনো দিনেই পাড়ি দেয় তারা। খাবার আসলে দুজনেই খেতে শুরু করে। একটু সময় চুপচাপ। হঠাৎ শুভম বলে ---

--- দেখ সূচি, আমাদের তো সবই ভালো, কম্পিটেবল। তাহলে সম্পর্কটা কেন শেষ হল?   

সূচি মুচকি হাসে। বলে ---

--- মনে আছে আমাদের থ্রি মান্থসারিতে তুই আমায় জিজ্ঞেস করেছিলি তোকে আমি কতটা ভালোবাসি । 

--- আর তুই কী একটা হাবিজাবি উত্তর দিয়েছিলি। 

--- হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম ফ্রম হেয়ার। 

--- হুম্। কোন মানে হয়! কী জিজ্ঞেস করলাম আর তুই কী উত্তর করলি! 

--- মনে আছে সম্পর্ক শেষ হওয়ার ঠিক ছয় মাস পরে তোকে একটা মেসেজ করি, ' টু হেয়ার '। তুই অবশ্য সেই ম্যাসেজটাকে সিন করেই রেখে দিয়েছিলি। 

--- হ্যাঁ। কিন্তু আমি যা জিজ্ঞেস করেছিলাম ওটার সাথে ওই ম্যাসেজের কী সম্পর্ক? 

--- আজও বুঝলি না তো! আসলে যেদিন তোকে ' টু হেয়ার ' লিখে পাঠালাম, ওইদিনই বুঝে গেছিলাম উই আর নট কম্পিটেবল। আমরা দুজনেই খুব ভালো মানুষ। কিন্তু একজন আরেকজনের জন্য নয়। তোর মত হয়ত কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে না কিন্তু আমরা হাজার চেষ্টা করলেও একজন আরেকজনকে বুঝতে পারব না। তাই ওইদিন আমি ভাবলাম, যতই দিন-রাত কান্না কাটি করি আমাদেরটা হবে না। আর তুই যতই সাফার করিস শেষ পর্যন্ত দুজনকেই কষ্ট পেতে হবে। তাই আই লেট গো... 

--- আমি কিন্তু এখনও বুঝিনি সূচি, তুই কী বলতে চাইছিস । 

--- একজ্যাক্টলি শুভম। এসব ছাড় এখন। খাবারটা শেষ কর জলদি। আবার অফিস যেতে হবে তো, না কী! 


সূচী আবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুভম কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। সে-ও এবার খাওয়ায় মন দিল। আর যাই হোক, আজকের কথা গুলো শুভমের মাথায় ততদিন ঘুরবে যতদিন না সে বুঝতে পারবে সূচি আসলে কী বলতে চেয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ : শুভজিৎ পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের...