একটি টিপটপ গল্প

 

। রণবীর পুরকায়স্থ ।

       লোকটা ছোটো শহরের ছাপোষা বাস্তুকার। সে স্বার্থপর কিন্তু বেশ টিপটপ।সে একা থাকে, কাউকে ধারেকাছে ঘেঁসতে দেয় না। সুখেই থাকে। সে লেখালেখিও করে, মানুষের মন নিয়ে কত অনুসন্ধান। ত্রুটিহীন নির্ভুল মানুষ সাজাতে চায়, পারে না। মনের ভাব প্রকাশে সঠিক বাক্য লিখতে পারে না পরিপাটি। তাই টিপটপ হওয়ার, অনুপম হওয়ার খেসারত দিয়ে তার বউও পালায় বাড়ি থেকে। 

       একদিন সঙ্গহীন অবস্থার বর্ণনায় প্রতিবেশিরা ডিস্টেন্সিং বিধি না মানায় সে বিচলিত হয়। লিখতে গিয়ে সে থমকায় লকডাউন পর্বে। মাস্ক লাগিয়ে সে চলে যায় স্বাস্থ্য অধিকর্তার কার্যালয়ে, বলে সে কাজ করবে, মানুষের সেবা করবে। সে বাড়ি বাড়ি মুখোশ দেয়, নির্বিষ করার তরল দেয়, বিধি শেখায় যথাযথ। তার নিবেদিতপ্রাণ অভিসন্ধি দেখে ডাক্তারবাবুও বলেন, ’দুরন্ত সাহসী লোকটা, স্বাস্থ্য বিধির পরাকাষ্ঠা। একেবারে টিপটপ। 

       একটানা কাজ করতে করতে সে অসুস্থ হয়, কাশতে কাশতে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। সেও অতিমারীর প্রকোপে পড়ে। কোভিড-১৯ নিশ্চিত। বিমর্ষ হাসিতে সে ডাক্তারকে বলে, চললাম। বলে, আমার সব লেখালেখির কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলবেন। ডাক্তার আবার সব দেখলেন, লক্ষন টক্ষন তো ঠিকই আছে। টিপটপ মানুষটি হতাশ হয়ে পড়ে।

        আচমকা টিভিতে ঘোষিত হয় আনন্দবার্তা। ভাইরাস বিদায় নিয়েছে, আর মানুষ ছোঁয়াছোঁয়িতে মরবে না, নিরাপদ হবে পৃথিবী, সম্পর্কের শিকড়ে আবার সিঞ্চিত হবে স্নেহমমতার বারিধারা। পুরনো আক্রান্তরাও পাবে নিরাময়। 

       এরপর আর কী। লোকটা নবীন উদ্যমে লিখতে শুরু করে আবার। তার বউও ফিরে আসে টিপটপ সংসারে।


৭৩ বছর আগে পারী শহরে ছাপা হয়েছিল আলবেয়ার ক্যামুর ফরাসি উপন্যাস ‘লা পেস্ট’, দু বছর পরে যা ‘প্লেগ’ নামে অনুদিত হয় ইংরেজিতে। অনন্যসাপেক্ষ মানবিক গুনের আধার ‘যোসেফ গ্রাঁ’র এই ছাপোষা চরিত্রটি উপন্যাসের অন্যতম কুশীলব। তাঁকে এ সময়ে সাজালেও কি হতে পারে না হিতকামী যথাযথ ও টিপটপ। অসহ করোনাকালে তাঁর শুশ্রূষা বয়ে আমরাও তো গাইতে পারি আশার গান, আপনা টাইম আয়গা।

২টি মন্তব্য:

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...