বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪

আমি আরো ব্যস্ত হতে চাই

 


।। সুখেন দাস ।।

 

আমি আরো ব্যস্ত হতে চাই!

নিজেকে নিজের মতো করে রাখতে চাই।

আমি চাই না কোনো ভোগ বিলাসী!

দুঃখ হলেও নিজেকে নিজের মতো করে হাসি।

 

আমি আরও ব্যস্ত হতে চাই!

নিজেকে একটু শান্তিতে বাঁচাতে চাই।

আমি চাই না কোনো রূপের রূপবতী!

চাই না কোনো অতল জলের মোতি!

 

আমি আরো ব্যস্ত হতে চাই!

নিজেকে নিজের মতো করে তৈরী করতে চাই।

আমি চাই না কোনো দয়াহীন রাজা হতে!

শুধু মিলেমিশে থাকতে চাই সবার সাথে।

 

আমি আরো ব্যস্ত হতে চাই!

নিজেকে তোমাদের কাছে সমঝে দিতে চাই।

আমি চাই না কখনো নিজের জন্য!

তোমাদের আনন্দ খুশিতেই আমি ধন্য।

 

আমি আরো ব্যস্ত হতে চাই!

 সমাজের হিতে কাজ করে যেতে চাই।

পাড়াপড়শি ভাই বন্ধু, সবার সাথে রাখতে চাই পরিচয়!

সমাজও যেন চিনে; সুখে আমি, শান্তিতে মা, পিতা বিজয়

শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪

স্বেচ্ছাচার

 


।। আনওয়ারুল হক বড়ভূইয়া ।।

 

আমিও মানসিকভাবে কিন্তু

চরম পীড়িত

জীবনের হাতে দশে দেশে

 

আমাদের অন্তর্গত সমস্ত

রক্ত আর বীর্য

শুধু জল থেকে জলই হয়

 

মায়ের গর্ভ দিয়ে আবার

ফিরে যেতে চাই

বাবার ঔরসে, নিরাপদে

 

আমাকে শিক্ষা দেয়া হয়

গন্ধ আছে তার

হোক না সে প্লাস্টিকের ফুল

 

এখানে শুধু একটাই কাজ

অন্ধকার চুরি

আর আগুন থেকে আগুন ফেরি

 

সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪

বিপন্নতার স্রোতে ভাসে নারী

 


।। সজল দাস ।।

 

নিরাপত্তা নেই যেখানে, স্বাধীনতার প্রশ্নই উঠে না-

কেবল বিপন্নতার স্রোতে ভাসে নারী।

 

এই ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ, নারী নির্যাতনের মুক্ত ময়দান।

শুধু শারীরিক নয়, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিদিন।

 

এই ভারতবর্ষেই গণচেতনা, মানবতার মূল্যায়নে

জন্ম নিলেন ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ-প্রীতিলতা ওয়াদ্দার।

যে দেশে নারী আন্দোলের এত নিশানা,

এখনও সেই দেশে সীতা-সাবিত্রী-বেহুলাদের মত

নিষ্পাপ নারীরা, খুন হয়ে আসছে।

 

পুরুষতন্ত্রের নষ্ট নিয়মই খুনি।...

 

প্রতিদিন চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা মৃত লাশ-

তোমার মানসিক মৃত্যুতে মানবতা চাপা পড়ে যায়,

 

তোমার ব্যর্থতাকে অনায়াসেই গ্রহণ করে নিতে পারতাম

শুধু সমাজ-ধর্মের ভয়ে নিজেকে বিরত রাখতে হল।

বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪

অবস্থান

 


-শর্মিলী দেব কানুনগো

-- বৌদি এই ক্রিমটা আমারেও একটা আনিয়া দিও নমিতার কথায় গা পিততি জ্বলে উঠে বিথির। এই এক সমস্যা হয়েছে এখন। বিথির যা আছে সব নমিতারও চাই। আশ্চর্যনিজের ওজন বুঝে চলতে পারে না মেয়েটা। মুখে অবশ্য নমিতাকে কিছু বলে না সে। না বলার কারণ আছে। নমিতাকে কেন্দ্র করেই সকাল থেকে বিকেল আর বিকেল গড়িয়ে রাত নামে বিথির বাড়িতে। দুই হাতে বিথির সংসার সামলায় নমিতা। একদিন নমিতা কাজ কামাই করলে বিথি চোখে অন্ধকার দেখে।

    রাত আটটায় বিথিদের রাতের খাবার টেবিল সাজিয়ে বাড়ি ফিরে সে। আর ভোর ভোর আবার এসে এ বাড়িতে ঢুকে। নমিতা ছাড়া কি একদিন ভালোভাবে থাকা সম্ভব এদের! এরজন্য অবশ্য বেতন পায় নমিতা। কিন্তু ইদানিং এক বায়না শুরু হয়েছে তার। বিথির মতো সবকিছু চাই তার। বিথি যে বেড কভারটা আনলো সেদিন সেল থেকে এমন একটা চাই তারও অনলাইনে একটা বাড়িতে পরার চপ্পল আনলো বিথি। অমনি নমিতাও বায়না ধরলো। তারও চাই এমন একটা চপ্পল অগত্যা মুখে কিছু বলতে না পেরে ভেতর ভেতর রাগে পুড়তে থাকে বিথি।

    নমিতা কাজ কর্মে খুব চটপটে। বিথির সকল ফাই ফরমাস হাসি মুখে পালন করে। সবাই বলাবলি করে ভাগ্য করে এমন কাজের মেয়ে পেয়েছে বিথি। কিন্তু এর বিনিময়ে যে কত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে বিথিকে সেটা কে বুঝবে। বিথির নীল রঙের নাইটি দেখে এখন নমিতারও চাই এমন একটা নাইটি। আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুঁজে পেতে এনে দিতে হলো এমন একটা নাইটি। মনকে বোঝালো দুধ খেতে হলে গরুর লাথিকে মেনে নিতেই হয়। তবে নমিতা প্রথম যেদিন এ বাড়িতে কাজ করতে এসেছিলো সেদিন চায়ের কাপ হাতে মাটিতে বসেছিলো। বিথিই তখন বলে ছিল - এমামাটিতে কেনো বসলে গো... চেয়ারে এসে বস। আমরা সবাইকে সমান দেখি যদিও একথা মন থেকে বলেনি সে। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিলো। যেকোনভাবে নমিতার মন জয় করতে হবে। কাজের মেয়ে পাওয়া যত কঠিন এরচেয়ে কঠিন একে টিকিয়ে রাখা। আর তাই আদর দিয়ে দিয়ে সে নিজেই নমিতাকে মাথায় তুলে।

     বিথির মেয়ে কেয়া ক্লাস নাইনে পড়ে। অনেক কষ্ট করে নমিতাও ওর মেয়েটাকে স্কুলে পড়ায় ।  দুটো বাড়িতে এক্সট্রা কাজ করে মেয়ের প্রাইভেট টিউশনের পয়সা জোগাড় করে। স্বপ্ন দেখে কেয়ার মতো একদিন তার মেয়েও দিদিমণি হবে ইস্কুলের। বিথির বড্ড রাগ হয় এসব শুনলে। শখ কতোকাজের মেয়েতেনার মেয়ে নাকি আবার ইস্কুলে পড়াবে…। চাপা রাগ গোপন করে নমিতার সামনে। আড়ালে গজগজ করে। কেয়া আর ওর বাবা হাসে। বিথির এসব ওরা বুঝতে চায় না। বরং কেয়া হেসে হেসে বলল - কি হয় মা, নমিতাদির মেয়ে দিদিমণি হলে? এত কষ্ট করছে নমিতাদিমেয়েটা চাকরি পেলে ওরা তো একটু ভালো থাকতে পারবে।

    কি হয় সেটা বিথিও ঠিক বুঝতে পারে না। কেমন যেন মনে হয় সে হেরে যাবে নমিতার কাছে। সেই হার যে কিসের হার সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। তবে একদিন সকালে নমিতা হেরে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল তার মেয়েটা পাড়ার একটা মোটর মেকানিকের সাথে পালিয়ে গেছে। বোধহয় ওরা বিয়ে করেছে। বিথি নমিতাকে সান্ত্বনা দিলো। কি আর করাযার যেমন কপাল…। নমিতার বুক ফাঁটা আর্তনাদ আর বিলাপের ফাঁকে বিথির বুক থেকে একটা নিশ্চিন্তের নিশ্বাস  বেরিয়ে এলো।

শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪

অপেক্ষা

 


।। অভিজিৎ দাস ।।

 

আকাশ পানে চাহিয়া আমি,

 চাঁদের আলোয় গা ভাসাই।

 আলোর স্পর্শে তোমায় খুঁজে,

 পূর্ণিমা দিয়ে মন জুড়াই।

 

 আমি মগ্ন হলাম তোমার প্রেমে,

 হৃদয়ে তোমার বাঁধবো ঘর।

 আমি সন্ধ্যাতারা হয়ে রবো,

 যদি না করো আমায় পর।

 

 তোমায় তারার মত সাজিয়ে নেব,

 ঘর করবো আলোকিত।

 তোমার আলোর জ্যোৎস্না মেখে,

 মন করবো পুলকিত।

 

 আমার হাতে তোমার হাতটি রেখে,

 পার করিব দিগন্ত।

 তোমার আশায় বসে থেকে,

 মন হয়েছে উড়ন্ত।

রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

এক নতুন সকাল

 


।। সুলতা রানি দাস ।।

 

আমরা দেখেছিলাম এক নতুন সকাল

দেখেছিলাম  এক নতুন রবি

 বুকের মধ্যে রক্ত নিয়ে

লড়েছিলাম স্বাধীনতার লড়াই

 

আমরা শুনেছি শহিদের জয়গান,

হাসতে হাসতে যারা হয়েছে শহিদ

 দিয়েছে বলিদান।

 

আমরা বুনেছিলাম ঐক্য আর  শান্তির পরিধান

সকল জাতি, ভাষা বর্ণ

আমাদের জন্যে সমান।

 

আমরা সবাই ভারতবাসী, গাই বিজয়ের জয়গান,

নিজের সুখের জন্যে কখনো

করবো না অন্যের উপর প্রহার।

 

আমরা এই শপথ নিয়ে গড়বো নতুন স্বপ্ন,

হিংসা-দ্বেষ মুছে দিয়ে

 নেবো একে অপরের  যত্ন।

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রতিভার আলোক শিখা

 


- সপ্তমিতা নাথ

শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছিল সেদিন মেয়েটি। সবে মাধ্যমিকের ফলাফল বেরিয়েছে। এই উষ্ণ অভ্যর্থনার উষ্ণতা সহ্য করে উঠতে পারে নাই , বিশেষ করে চোখ দুটি, রক্তিম ঝলসানো চোখে ভেসে উঠেছিল অতীতের ছেঁড়া, ফাটা, ভাঙ্গা কালো পর্দার স্মৃতি। গোটা উপত্যকার ছোট বড় সংগঠন ব্যক্তি বিশেষ আজ প্রতিভার পাশে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু  প্রতিভা  কি চায়? প্রতিভার কী চাওয়া উচিত বা অনুচিত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আত্মবিশ্বাসটুকু গড়ে ওঠার আগেই দুমড়ে মুছড়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল তার শৈশব।  সে আর  কেউ না  তারই নিজের পিতা । প্রতিটি মেয়েরই শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম নায়ক তার বাবা, কিন্তু কেন প্রতিভার ক্ষেত্রে তা বিপরীত! কেন তার বাবা নায়ক না হয়ে খলনায়ক এর প্রতিছবি হয়ে আজ চোখের অশ্রু হয়ে ভেসে গুলিয়ে যাচ্ছেন তার এই খুশির দিনে?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন কক্সা তিন এ, রোজ রাতের মতই সেই রাতও কালো ছিল কিন্তু নেমে এসেছিল অঘোর অমবস্যা, প্রতিভার জীবনে। প্রতিবারের মত মদাসক্ত বাবা ঘরে এসে মাকে প্রতিদিনের নিময়ের  প্রহার সেরে  বিশেষ করে যে কাজ সম্পাদন করলেন সেটি হলো প্রতিভার সমস্ত বইপত্র উনুনে দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা সেদিন থেকেই শুরু হলো প্রতিভার জীবনের পিছিয়ে যাওয়ার উন্নতির দিনগুলো।

রোগাক্রান্ত মা আর বাবাকে নিয়ে সংসার। বাবার সিদ্ধান্তই সর্বোপরি। আর আত্মীয়-স্বজন ও সমাজ? সে তো আগে থেকেই ছাপ নিয়ে বসে আছে প্রান্তিকের, কাজেই প্রতিবাদ তো প্রশ্নই ওঠে না। এ তো এক স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন ছবি এই সমাজের। ধীরে ধীরে বয়স বাড়তে থাকে সময়ের টানে হঠাৎ একদিন সার্ভে করতে এসে শিখা ম্যাডামের হাতে পড়ে যায় প্রতিভা। সরকারি কর্মজীবী, শিক্ষা বিভাগের বিশেষ প্রশিক্ষণ সেন্টারের প্রশিক্ষক। শিখা মেয়েটিকে দেখেই তার খোঁজ খবর নিলেন এবং তার ইতি বৃত্তান্ত জেনে তার মা এর কাছে অনুমতি চাইলেন। মেয়েটিকে তার বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার।  কিন্তু অক্ষম মা পিতার অনৈতিক কাজের ভারে আড়ষ্ট। সেখানে বাবাকে না জানিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আস্বস্ত করলেন শিখা ম্যাডাম প্রতিভার মা প্রণতিকে।

প্রতিভার জীবন শিখার আলোতে আলোকিত হতে শুরু হলো।  ব্রিজ কোর্স শেষ করে বয়স অনুযায়ী ক্লাসে ভর্তি হলো শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায়। কিন্তু নিয়তির খেলা অন্য এক গল্প লেখার  ফন্দি আঁটছে। যার ভয় ছিল সেই বিপত্তি ঘটলো। মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে সে সংবাদ বাবার অগোচরে থাকলো না  তারপর ঝরাক্রান্ত এক রাতের তুমুল  সংঘাতের পর এবার মা ও মেয়ে গৃহহীন এবং আশ্রয় হলো মামার বাড়িতে।

কিছুদিন বেশ ভালোই কাটলো তারপর শুরু হলো ভাইয়ের দৈমাত্রিক ব্যবহার । ভাইয়ের  পরিবারে দিদির অতিরিক্ত খরচের বোঝা কে বইবে? অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা বাবদ টাকা কোথা থেকে আসবে? জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে ঢালের মত খাড়া শিখার কাছে গেল প্রতিভা। তবে এবার অনেকটাই শক্ত পোক্ত মানসিকতা, যেকোন পরিস্থিতিতেই পড়া চালিয়ে যাবে । শিখার মনোবল যেন ফোঁয়ারার মতো উচ্ছাসের সাথে বেড়ে গেল সেদিন, যা চেয়েছিল তাই  বুঝি হলো। সে দেখতে পেয়েছিল প্রতিভার  মধ্যে অঙ্কুরিত হচ্ছে  আত্মবিশ্বাসের বীজ।

প্রতিভার জীবনের আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্ভুদ্ব করলেন শিখা ম্যাডাম। বললেন এবার তোর পড়াশোনা সাথে সাথে সাবলম্বী হতে হবে ব্যবস্থা কি? ‘সেটা আমি করে দিচ্ছি, ছোট ছোট ছাত্রদের পড়াবি আমি সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি  শুরু হলো নতুন যাত্রা কিন্তু নিয়তি আরো কিছু চাইছে প্রতিভার কাছ থেকে। দিন দিন অবহেলা বাড়তে থাকলো মামার বাড়িতে। প্রতিভা এতদিনে অনেক শক্ত, তাই শিখা ম্যাডামের পরামর্শ নিয়ে আত্মীয়তার যবনিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো প্রতিভা। মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল অজানা ঠিকানায়। ছোট একখানা  ঘর ভাড়া  করলো। এবার দায়িত্বও কর্তব্যের ভাড় অনেকটাই  যা সামলাতে শুধুমাত্র ছাত্র পড়ানো দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ যে ছাত্রগুলো পড়াতো তারা তো সেই প্রান্তিক সমাজেরই কাজেই আর্থিক সহায়তায় বা পারিশ্রমিক খুবই সামান্য। বড় বাবুদের দ্বারস্ত না হলে মায়ের ঔষধ, ঘর ভাড়া ও দুজনের পেট ভরে দুবেলা খাওয়া হয়তো সম্ভব নয়। অবশেষে বাধ্য হলো প্রতিভা বাসন ধোওয়া ও কাপড় কাঁচার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে, বড় বাবুদের ঘরে। সকালে কাজ সেরে স্কুলে যায় ও দুপুরে মা এ ঝি ত্র দুটা খেয়ে বসে পড়ে ছাত্র পড়াতে কথায় আছে আলস্যই দৈন্য দীনের প্রসূতি ও পরিশ্রমই সফলতার সোপান। সকলের সহায়তা ও সহযোগিতায় প্রতিভা বড় কলেজে ভর্তি হলো।

                আজ বিফলতার সাথে সমরযুদ্ধে জয়ী প্রতিভা কৌশল শিখে গেছে বিপদের সাথে কিভাবে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হয়। তাহলে কি সে সফল? তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির পেছনে যারা  রয়েছেন তবে কি তাদের ধন্যবাদ জানানো দরকার? নাকি বয়সের আগে প্রাপ্তমনস্ক হয়ে যাওয়ার জন্য কিংবা তার শৈশব কেড়ে নেওয়ার জন্য তাদের দোষারোপ করা উচিত? আজ মানসিক ভারসাম্য সামলাতে পারছিল না, প্রতিভার দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা বইছে। ঘরের এক কোনাতে লুকিয়ে রেখেছে প্রতিভা নিজেকে! যখন বাইরে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি-বিশিষ্ট সবাই দাঁড়িয়ে আছেন ওর সাথে দেখা করে সাহায্যের হাত বাড়াতে। পত্রপত্রিকা সংবাদ মাধ্যম সব কিছুতেই প্রতিভা তার সমরযুদ্ধের কাহিনী ও মাধ্যমিকের ফলাফলের জন্য শীর্ষে।

প্রতিভার প্রদীপ, শিখার দীপ্তিমা, আলোক না পেলে হয়তো ডুবে যেতো  অতল অন্ধকারে । অন্ধকারের সমাবেশে এরকম আরো অনেক শিখাই আলোকিত করতে পারবে হাটে , দোকানে  রাস্তায় রোজ দেখা পাওয়া বিবর্ণ প্রতিভাগুলোকে। হয়তো বা যদি কখনো হঠাৎ ছিটকে পড়ে কোন প্রদীপের অল্প আলোক শিখা ।


মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ছোট জাতের মেয়ে

 

   ।। সুনীল রায় ।।

 

আজ থেকে প্রায় দু শত বছর আগে

নাম সাবিত্রী, জন্মেছিল মালীর কুলে

বাবা ঠাকুরদারা ফুল ফুটোয় তাই ফুলে,

কত লোকে ঘৃণা করত ছোট জাত বলে।

সেই সাবিত্রী যখন  মাত্র আঠার হলো

স্বামীর সাহায্যে মেয়েদের স্কুল খুলেছিল।

প্রথম নারী বিদ্যালয় ভারত উপমহাদেশে,

নারী শিক্ষার প্রথম প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হলো।

আরও এক ছোট জাতের মেয়ে নাম রাসমণি

দু শত ত্রিশ বছর আগে বঙ্গে জন্মে ছিলেন যিনি।

উচ্চ বর্ণের বিরোধেও গড়েন মন্দির মায়ের

দক্ষিণেশ্বর কালী বাড়ি আজ আস্থা সকলের।

পাগল ঠাকুর রামকৃষ্ণকে চিনেছিলেন যিনি

সেই ছোট জাতের মেয়ে প্রণম্য রানী রাসমণি,

বঙ্গ দেশের রাসমণি তেজে ছিলেন ঝান্সির রানী।

মানুষ মানুষই হয় ছোট বড় কর্মে তাকে চিনি।।

সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

কবিতা

 


।। আদিমা মজুমদার ।।

 

কবিতা আমার মায়ের মুখ

বাবার শাসন,

কই যাস, বড় হয়ে গেছিস বুঝি?

কবিতা আমার চাতালের ধান

সোনালি ধানে শালিকের খুনসুটি।

কবিতা আমার বিধবা পিসি

আকাশ নীল সাদা থান।

কবিতা আমার বিকল্প পরিবার

একটাই জায়গা নিজেকে চেনার।

কবিতা আমার কাশ্মীর ফাইল

প্রপাগেন্ডার কি নিদারুন স্টাইল।

কবিতা আমার ডাস্টবিন থেকে

কুড়িয়ে খাওয়া আওয়ারা শিশু।

কবিতা আমার চুল দাড়ি না কামানো

ফুটপাতে বসা মলিন রবীন্দ্রনাথ।

যার জোব্বা জল মাখেনি অনেকদিন।

কবিতা আমার নিত্য মার খাওয়া

চার বাড়ি কাজ করা পুতুলি দাস।

কবিতা আমার রোজকার দীর্ঘশ্বাস

কবিতা আমার আঁধার রাতের পেট্রমাক্স।

কবিতা আমার শ্রেণী সংগ্রামের হাতিয়ার

ভাতের সাথে রক্ত মাখে পাকস্থলী ভর্তি করে।

কবিতা আমার জাগ্রত চেতনার খোলা খাতা

বন্ধক দিয়েছি আম্বানীর রিলায়েন্স কোম্পানিতে।

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...