বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

সৈকত মজুমদার এর দুটি কবিতা

।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।

আমৃত্যু

আমৃত্যু
তোমাকেই ভালোবেসে যাব,
সেই কম্পিত ঠোঁট আর
চেনা পেলব দেহের ঘ্রাণ
আমায় টানে বারংবার।
আজও উন্মাদের মতন আমি
ছুটে যাই তোমার ডাকে
মৃত্যু জেনেও সেখানে...
তোমাকে পাওয়ার কামনা
এ জন্মে আর গেলো না।

এবারের মতো না হয় চলে যাব,
তবে আরেকটা কথা —
জন্মান্তরবাদ বলে যদি কিছু থাকে
সেই জন্মে আমি তোমাকে আমার
জীবনসঙ্গী হিসাবে চাই , কারণ
এ জন্মে তুমি অন্যের...
তাই  তোমাকে আর পাওয়া হলো না।
কিন্তু , পরের জন্মে তুমি আমার
সেই অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি
প্রতিদিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি...
                                       
....

সবাই উদ্বাস্তু

হে রাজন !
একটু ভেবে  দেখুন,
এ পৃথিবীতে আমরা কেউই 
আগে আসিনি ; এসেছে ভূমি
এবং এখানে অধিকার নেই আমাদের
তথাপি আমরা পৃথিবীতে বসবাস করি।
তাহলে কিসের আপত্তি আপনার ?
               এক খন্ড মাটি নিয়ে ......

ব্রহ্মপুত্র কিংবা বরাক
হাঙরের মতো যখন খায় গিলে তখন
কোথায় থাকে আপনার খবরদারি ??
অন্তরাত্মাকে জিগ্যেস করে দেখুন
কোনো না কোনোভাবে আমরা
                          সবাই উদ্বাস্তু।

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

আমার কর্মজীবন নিয়ে আমি গর্ববোধ করি



।।রেবতী মোহন দাস।।

সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম আমার । অভাব অনটনের জন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর সংসারের কাজে লেগে যাই । এমন কোন কাজ নেই যা করিনি । পড়াশোনা ছাড়ার 6 বৎসর পর আবার স্কুলে ভর্তি হয়ে 1975 ইং মেট্রিক পরীক্ষা পাশ করি শ্যামাচরণ দেব বিদ্যাপীঠ শিলচর থেকে । তারপর ইন্টারমিডিয়েট কাছাড় কলেজ থেকে প্রথম বর্ষ পাশ করে দ্বিতীয় বৎসর পরীক্ষা দিতে পারিনি কারণ সেই দারিদ্রতা । লেগে যাই কাজে । গৃহস্থী, মাছ মারা আরো কত কিছু । কিছু দিন পর অবস্থার উন্নতি হল । তখন মনে হল অনেক গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা পিতামাতার অবহেলার জন্য পড়তে পারে না । আমি চেষ্টা করব ওদের জন্য কিছু করতে । আমাদের গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রীযুক্ত গোপেশ রঞ্জন দাস মহাশয়ের প্রেরণায় আমাদের বাঘমারা গ্রামের পাশেই এক্স-টি গার্ডেন শ্রমিক 6 নং (আইরংমারা) গ্রাম । বর্তমান আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে দেওয়ালের নিকটে । তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম গন্ধই ছিল না, 1977 ইংরেজির কথা । গ্রামের লোকেরা দিবারাত্র সমানভাবে মাদকে আসক্ত ছিল সেই গ্রামে পরপর কয়েকটি সভা করে উনাদের মতামত নিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক ভেঞ্চার স্কুল স্থাপন করি ।  না ছিল ঘর না ছিল আসবাবপত্র । আমি উনাদের সাথে গিয়ে জঙ্গল থেকে বাঁশ এনে একটি ঘরের ব্যবস্থা করি । ছন বাঁশের ঘর কতদিনই বা টিকবে ? ভেঙ্গেও গেল । তখন গাছ তলায়, গোয়াল ঘরে, মানুষের ঘরের বারান্দায় ক্লাস করেছি । বইপত্র, খাতা, কলম জোগাড় করতে আমার যে কি কষ্ট হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না । তার উপর নেশাখোর মানুষের উৎপাত- 'আমাদের স্কুল লাগবে না' । কিন্তু ওই গ্রামেরই কিছু মুরব্বি আমাকে বলতেন মাস্টারবাবু এদের কথায় কান দেবেন না । অনেক ভাবনা চিন্তার পর আমি প্রায় প্রতিজ্ঞাই করে ফেললাম আমি স্কুল বানাবোই । নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আসলো সেই শুভ দিন, 1983 ইংরেজির পহেলা  অক্টোবর । আসাম সরকার স্কুলটি প্রাদেশিকরন করলো । এর পূর্বে অনেকবার গুয়াহাটি যাওয়া আসা করতে হয়েছে । অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাহায্য পেয়েছি । স্কুলের অবস্থা ভালো ছিল না । তখন ধলাইর বিধায়ক ছিলেন আমার বন্ধুবর বর্তমান আসাম সরকারের বরিষ্ঠ মন্ত্রী শ্রীযুক্ত পরিমল শুক্লবৈদ্য মহাশয় । উনাকে বললাম স্কুল তো হল ঘরের কি হবে ? তখন তিনি এক লক্ষ টাকা দিলেন । একটা পাকা ঘর হয়ে গেল । তখন থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি । স্কুলে শিক্ষক আমি একা । ডি.আই. মহোদয় কে বলে আরো একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করা হলো । ভালো মতে স্কুল চলছে ।
চাতলা হাওর তথা আশেপাশের বেশ কিছু স্কুল নিয়ে বাঘমারা কেন্দ্র । সম্পাদক ছিলেন শ্রীযুক্ত গোপেশ রঞ্জন দাস । উনার ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য আমাকে বললেন কেন্দ্র সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে । নুতন চাকুরী বয়স কম, এগুলি আমি বুঝিনা । কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে নির্বাচিত করা হলো কেন্দ্র সম্পাদক হিসাবে । দীর্ঘ 18 বৎসর সততার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছি । আসলো 2003 ইং, সর্বশিক্ষা আরম্ভ হলো । সি. আর. সি. সি. নিয়োগ করা হবে । উক্ত পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হলো । আমি নির্বাচিত হয়ে তরুতাজাবাড়ি সি. আর. সি. সি. তে নিযুক্তি পেলাম । দীর্ঘ 10 বৎসর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। অনেক ট্রেনিং করেছি ।
ধীরে ধীরে আমার অবসর গ্রহণের সময় এগিয়ে আসতে লাগল ।  2015 ইংরেজির 15 ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনে আমি একটি সভা ডাকলাম আমার স্কুলে । সেই সভায় শ্রীযুক্ত পরিমল শুক্লবৈদ্যসহ রাজনীতিবিদরা, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন স্কুলের বর্তমান কর্মরত এবং প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ, গ্রামের মুরব্বি বৃন্দ সহ সর্বস্তরের জনসাধারণ ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন । আমি সভা কে উদ্দেশ্য করে বললাম -'যে জায়গায় স্কুল হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না । সেই জায়গায় সর্বশিক্ষার কারণে তিনটা পাকা স্কুল গৃহ, রান্নাঘর, শৌচালয়, জলের কল সহ সবরকমের সুবিধা তৈরি হয়ে গিয়েছে । দীর্ঘ চাকুরী জীবনে যদি ভুল ভ্রান্তি কিছু করে থাকি তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । এই গ্রামের জনসাধারণ আমাকে দেবতার মতো মান্য করেছে । ওদের সর্বপ্রকার সামাজিক কাজে আমি অংশগ্রহণ করেছি । 48 বৎসর পূর্বে গ্রামের যে অবস্থা বা পরিবেশ ছিল তা আজ আর নেই । প্রত্যেক ঘরের ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন স্কুলে কলেজে পড়ছে । সত্যিই যাহা ভালোলাগা এবং আনন্দের বিষয় ।' সভায় বিভিন্ন বক্তা নিজ নিজ বক্তব্যে প্রশংসায় আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছেন । সকলের শেষে বক্তব্য রাখেন মাননীয় পরিমল শুক্লবৈদ্য মহাশয় । উনার বক্তব্য বলেন, আজ তো বিদায় সভা নয় তবে কেন এই সভার আয়োজন ? কেহ তো এরকম করেননি আপনি কেন করলেন ? আমি বললাম, কেউ এমন সভা করে না বলেই তো আমি করলাম । আমি আরো বললাম মজুমদার বাজারে একদিনের জন্য একটি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছিল, সেই শিবিরে সি. আর. সি. সি., কেন্দ্র সম্পাদক, প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন প্রায় 250 জনের মতো । শিবিরে গুয়াহাটি থেকে আগত প্রশিক্ষক মহাশয় প্রশ্ন করেছিলেন -আপনাদের ছেলে-মেয়েরা কি আপনাদের স্কুলে পড়ে না প্রাইভেট স্কুলে পড়ে ? সভা চুপ, কেউ কিছু বলছেন না । আমি দাঁড়িয়ে বললাম, স্যার আমার ছেলে মেয়েরা সরকারি এল. পি., এম. ই., হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত । তখন প্রশিক্ষক মহাশয় আমার খুব প্রশংসা করেছিলেন । কথাগুলো এই জন্যই বললাম, ব্যতিক্রম আমি সব জায়গায় । তারপর শুক্লবৈদ্যজি আমার জীবনের সব দিক নিয়ে সভায় বক্তব্য রাখলেন, উনার মত বক্তা বলেই বলা সম্ভব । শেষে বললেন আপনি 'ব্যতিক্রমী' বটে । সভার কাজ শেষ ।
তারপর এলো 31 শে আগস্ট 2015 ইং আমার কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার দিন । কি বলবো গ্রামবাসীরা যে কাজটি করলেন তা অবিশ্বাস্য । আমার ডাকা সভার চেয়ে বড় সভা করে সকলকে বুঝিয়ে দিলেন 40 বৎসর পূর্বে যাদের পড়ালেখার বালাই ছিল না, সভ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত অবস্থা তাদের ছিল না আজ সেই গ্রাম কোথায় দাঁড়িয়ে ! সরকারি মানপত্র ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে মানপত্র এবং অজস্র উপাধিতে ভূষিত করলেন আমায় দিলেন নানা উপহার । সভায় ছিলেন আইরংমারা তথা বরাকের গর্ব পরিমল শুক্লবৈদ্যজি, অফিস অথরিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এলাকার মুরুব্বীবৃন্দ, জনসাধারণ, প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ । উপস্থিত গন্যমান্যরা প্রশংসায় আমাকে ভাসিয়ে দিলেন । আমি নির্ধারিত আসনে বসে চোখের জল ফেলছিলাম আনন্দে। শেষে শুক্লবৈদ্যজি আমার জীবনের নানা দিক, সফল জীবন, সামাজিক চিন্তাধারা, স্কুল গঠন ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে বলে বক্তব্য শেষ করলেন ।
সভার কাজ ছল ছল চোখে শেষ হলো । আমার জীবনে এই প্রথম উপলব্ধি করলাম বিদায় যে এত করুন । প্রায় তিন শতাধিক গ্রামবাসী এবং ছাত্র ছাত্রী মিছিল করে আমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন ।
বিভিন্ন স্কুলে সংবর্ধনা, পেয়েছি ব্লক পর্যায়ের, 5 সেপ্টেম্বর 2018 ইং শিক্ষক দিবসে জেলা গ্রন্থাগারে জেলা ভিত্তিক সম্মাননা পেয়েছি। আমার কর্মজীবন নিয়ে আমি গর্ববোধ করি ।

সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

নৌকাবিলাস

।।রণবীর পুরকায়স্থ।।

শামীম আহমেদ আর শৈলজা চক্রবর্তীর প্রেমের তরী তখন মাঝ গঙ্গায় টালমাটাল। কেউ রাজি নয় কোলে। নিতে বলছে,
- একা এস তো গুন টেনে আনছি পারে।
-কিন্তু আর একজন? আমার প্রিয়? প্রিয়তমা?
-বিসর্জন দাও! জল সমর্পণ।
জোড়া প্রেম অবাধ্য সংকেতে জানায় প্রতিবাদ,
-এতো সোজা!
শামীম এর পরিজন বলে,
- তবে ধর্মান্তর করিয়ে নাও।
শৈলজার গোষ্ঠী বলে,
-আমাদের ওসব নেই।
শামীম শৈলজার কাজিয়া হয় তরণী'পরে,
-আছে কি নেই দিয়ে কী হবে। ধর্ম ছাড়াও হয় গৃহস্থালী। সেলিমদা চিত্রকর আর পৃথা খাসনবিশ তো বদলায়নি। জাহানারাদি অসীম সামন্তও সুখেই আছে।
-দু'রকম ধর্ম থাকলে সন্তানের ওপর চাপ পড়ে। কাকও হয়না  কোকিলও না।
-তবে টস করি। একজন পাল্টালেই চুকে যায় ল্যাঠা।
শামীম বলে,
-আমি পাল্টাব না। হিন্দুরা নেবে?
শৈলজার যুক্তি,
-রবীন্দ্রনাথকে যদি নেয় তোমাকেও নেবে।
-ওদের টা অন্য। নিমরাজি সমাজে তেমন আলোড়ন হয়নি। আমরা আরব সৈয়দ।
শৈলজা বলে,
-হতে চাইলে উপায় আছে। মায়াপুরে চলে যাও। শঙ্খ মহারাজ হয়ে ফিরে এসো দাড়ি মাথা ন্যাড়া।
শামীমের স্পষ্ট কথা,
-না  দাড়ি কাটব না। ন্যাড়া হব না, শঙ্খও না। তুমি কেন হয়ে যাওনা মুসলমানি।  তোমার একটা সুন্দর নাম দেব লুৎফা।
-ও নাম আমি জানি। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে আছে। আমি হব না।
ফলত মাঝগঙ্গায় নৌকা উল্টে যায়। হুবুডুবু খেতে খেতে দুজন দুদিকে। একজন দুঃখিনি থেকে যায় গঙ্গার পারে যেমন ছিল। সাঁতার জানে যে জন, গঙ্গা বেয়ে পড়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগর। মান্দাসে চেপে যায় হডসন সাগরপারে।
একটু তালগোল পাকিয়ে যায় উচ্চশিক্ষা হয় বিদেশে।
সাময়িক তকরার থেকে দীর্ঘ মেয়াদি বিচ্ছেদ কথা ভাবেনি কেউ কখনও।
শৈলজা শমীম যুক্তি তর্কে লড়াই করলেও ভালবাসার জমি ছাড়েনি এক ইঞ্চিও।
ওরা বলে,
-আমরাই ওরিজিনাল আদম হাওয়া।
বলে,
আমরা লক্ষ্মীজনার্দন। ছোটবেলায় হারিয়ে গেলাম আজমীর শরীফ আর পুষ্কর তীর্থের মধ্যবর্তী পাহাড়তলিতে। গিরিপথ বেয়ে যখন উঠছি তখন তীর্থযাত্রী পরিবার দুদিক থেকে আমাদের কেড়ে নেয়। আমরা মুক্ত হতে চাই। আমাদের জিহাদ এই আমাদের ধর্ম যুদ্ধ এখন।
ওরা বললে,
-বিয়ে করো।
সমিম বললে,
-রসো।
বলেই ফিরল দেশে।
ওদিকে, শৈলজার কি হইল তবে?
সেও আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাকি শুধু নির্বাচন। সুনীল মিথিলেশ স্বপ্নময় এর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। শৈলজার তিনজনকেই পছন্দ। তিনজনই থাকে নিউইয়র্ক আমেরিকায়।
তানা না নানা।
মালগুড়ি ডেজ-এর রিংটোন। পুরনো সেই দিনের কথা।
টোন পাল্টে দেওয়ারও কল আছে।
ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি।
পাঁচটা সকাল তখন।
কে বাজায়?
যাদের জন্মদিন আজ।
আদম হাওয়া, শিব-সতী।
যারা জন্মেছিল একই দিনে।
শীতের ডিসেম্বরে।
এক দুই তিন চার পাঁচ...
ছয় ডিসেম্বর ভোরে।
যারা অধুনা হারিয়ে গেছিল গঙ্গার জলে।
নৌকা ডুবিতে।
শুভেচ্ছা বিনিময় করে একজন আর একজনকে বলে,
-কি দেব তোমায় এমন দিনে, উপহার।
-তোমার যা প্রিয় তাই দেবে।
দুজন তিনসত্য করে বলে,
আর ঝগড়া করব না
বললে,
-বকেয়া কচাল মিটিয়ে ফেলা যাক তাহলে? হোক না একটা গোলটেবিল আজ।
-হোক। মন্দ কী? কোথায় কবে কখন বলে দাও আইটিননারি।
-কবে মানে তো আজ। সকাল বেলায় যে মহাবিস্ফোরণে জন্মে ছিলাম আমরা সে সময় তো আর খুলবে না 'গ্রেন অফ সল্ট'। তাই সন্ধ্যে সাতটা।
সঠিক সময়ে দুই বেঠিক নারী-পুরুষ খাবার ঘরের গোলটেবিলে মুখোমুখি বসে থাকে অবাক জলপাত্র হাতে। গৌরবর্ণ গৈরিক বসনে মুণ্ডিতমস্তক পুরুষে তাকিয়ে হতভম্ব নারী গায় উল্টো পদাবলি 'ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী।'
পুরুষ দেখে বরবর্ণিনী হরিণ-নয়নের চকিত চাহনি। ময়ূর রঙা অপরূপ কারুকাজ বোরখাবাসের শরীরি আমন্ত্রণে পুরুষ-হৃদয়ও বিহ্বল।
আহ কী হেরিনু!
ময়ূরপঙ্খী আবার পেখম তোলে নদীতে।
সেই যে টাইটানিক নৌকা ডুবে ছিল মাজ গঙ্গায়?
মন্দ সমীরণে সানন্দ কর্ণদার এবার প্রেমের নামের বাদামে লেখে অভিজ্ঞান।
-আমার নাম শঙ্খ মহারাজ।
অতি পরিষ্কার আকরে বিলাসিনীও লেখে নিজ নাম আমি,
-আমি লুৎফা।
মাঝগঙ্গায যখন কুয়াশায় আবৃত।
দুপারে দলীয় কোলাহল যখন স্তব্ধ।
তখন অকূলে পাড়ি দেওয়ার আগে নকল নামের বাদামখানি ওরা হেলাভরে ফেলে দেয় জলে।
দূর থেকে কাছের মানুষদের বলে,
-তোমরা কে হে।
বলে,
আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব আবহমানকাল।

রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮

মহিমাময় 'হিমা দাস'



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা ১৪২৫।।


।।পাপ্পন দাস।।

গেল ৩১ আগস্টের কথা।সেদিনের একটা খবর--
'জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ভারতের সোনার দৌড় ধরে রাখলেন অ্যাথলিটরা'-,আমাকে এবং আমার মতো অনেককে স্বস্তি দেয়।আমরা বুঝতে পারি যে,
অ্যাথলিটরা বরাবরের মতো এবারও আমাদের দেশের মাথা উঁচু করেছেন।যতই তাদের আমরা খুব একটা চালকের আসনে না বসাই,গাড়ি কিন্তু ঠিক চালিয়েই যাচ্ছেন তারা।
    এর আগের দিন(৩০ আগস্ট) দুটি সোনা আসে অ্যাথলেটিক্সে। ৪০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতেন ভারতের মেয়েরা।আর সে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন অসম কন্যা হিমা দাস।অবশ্য এর আগেই তিনি ৪০০ মিটার দৌড়ে রুপো পেয়েছিলেন।আর তাইতো সেদিন তিনিই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।ভারত সহ রাজ্যের আম জনতা যদিও বা এ নিয়ে খুব একটা চর্চার দিকে যাননি,কিন্তু ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে তো এ নিয়ে একটা উত্তেজনা ভাব বিরাজ করছিলই।হিমা দাস এর কী হল,এগিয়েছে নাকি মেয়েটা--এরকম কিছু প্রশ্ন তো মুখে মুখে ছিলই।আর সবশেষে দেখা যায় যে,তিনি হতাশ করেননি আমাদের।
   তিনি ছাড়াও পুরুষদের ১৫০০ মিটার দৌড়ে সে দিনের দ্বিতীয় সোনা এনে দেন জিনসন জনসন।আর সে দিনের জোড়া সোনা নিয়ে ভারতের সোনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩। অবশ্য মেয়েদের ৪০০ মিটার রিলে রেসে ভারতীয় দলই সোনা জেতার দৌড়ে গত চার বারই দাপট দেখিয়েছিলেন।উল্লেখ্য যে,এই নিয়ে ২০০২ সাল থেকে টানা পাঁচ বার সোনা জিতল ভারত এই ইভেন্টে। হিমা দাস ছাড়া ভারতীয় দলে ছিলেন এম আর পুভাম্মা, সরিতা গায়কোয়াড় এবং ভি কে বিস্ময়া।
    বলা বাহুল্য,রুপোর পরে এ বার হিমার সোনা জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসতে থাকে অসম।মন্ত্রী কেশব মহন্ত ঘোষণা করেন, অবিলম্বে ধিঙে হিমার মূর্তি বসবে। অক্টোবরে অসমে এসে নিজে হাতে নিজের মূর্তি উদ্বোধন করে বাড়িতে ঢুকবেন সোনার মেয়ে হিমা।
    এ নিয়ে কোনও একটা কাগজে কারো একজনের লেখা আমার চোখে পড়ে।তিনি লেখেন,হিমা দাসের মূর্তি বসানোর খবরটি পড়ে জানা গেল, অসমের জলসম্পদ মন্ত্রী হিমা দাসের মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এক শ্রেণির রাজনীতিকের এই এক সমস্যা, তাঁরা অপ্রয়োজনীয় চমক দিতে ভালবাসেন। হিমা ভারত তথা নিজ রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু মূর্তি বসানোর চেয়ে, রাজ্যের আনাচকানাচে হিমার মতো যে অসামান্য অ্যাথলিটরা লুকিয়ে আছেন, তাঁদের খুঁজে বার করে তাঁদের প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করাটাই আসল কাজ।
    তিনি সঠিক বলেছেন।হিমা দাসের মূর্তি বানানোর বিপক্ষে আমি।এদিকে,১৯৬৬ সালের এশিয়ান গেমসে ৮০০ মিটার দৌড়ে সোনা পেয়েছিলেন ভোগেশ্বর বরুয়া। তার পর থেকে অসমে আর এশিয়াড সোনা আসেনি। হিমার দৌড়ে প্রথম থেকে নজর রাখছিলেন তিনি। তিনি হিমাকে দৌড়ের বাইরে আর কোনোদিকে মন না দেওয়ার পরামর্শও দেন। আর সেদিন হিমার নজির ছোঁয়া দৌড় দেখার পরে আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েন এবং বলেন,
'জাতীয় ও এশীয় রেকর্ড করার পরেও আমি অলিম্পিক্সে দৌড়ানোর সুযোগ পাইনি। সেই কষ্ট দূর হল। তিক্ততা মনে করতে চাই না। আমাদের হিমা এক ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার। ওকে পরিবার বা প্রশিক্ষকরা তৈরি করে দেননি। আমার বিশ্বাস হিমা অলিম্পিক্সেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু অলিম্পিক্সে যাওয়ার পথে অনেক বাধা আসতে পারে। হিমাকেও সব কিছুর জন্য তৈরি হতে হবে। হিমাকে সামলে রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, রাজ্যবাসীর।'
    গত ৭ সেপ্টেম্বর হিমাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
ঘরের মাটিতে ফিরে রাজ্য সরকারের সংবর্ধনা সভায় এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক হাতে নিয়ে হিমা বলেন,'খেলোয়াড়রা আসলে মনপ্রাণ দিয়ে ভাল ফল করতে চায়। কারণ, তারা পয়সার জন্যই খেলে। জানে পদক জিতলেই টাকা পাবে। আজ যেমন আমি পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত আমায় এত টাকা পেতে দেখে অসমের অন্য খেলোয়াড়রাও আজ ভাবছে, হিমা যদি দৌড়ে এত টাকা পেতে পারে, আমিও ভাল খেললে তেমনই পাব।'
    তিনি সঠিক কথাই বলেন।সবকিছুর সঙ্গেই টাকা আর সম্মানের একটা সম্পর্ক রয়েছে।আর দুই-ই যদি কোথাও থেকে হাসিল করা যায় তা হলে অদূর ভবিষ্যতে কেউ এতে এগিয়ে যেতে পিছপা হবে না।
আমাদের অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা অসহ্য ভাব বিদ্যামান।সেই ছেলেবেলা থেকেই মা-বাবা তাদের সব সন্তানদের বুঝিয়ে দেন যে পড়াশোনা করতে হবে,আর এর পর ভবিষ্যতে একটা ভাল চাকরি জোগাড় করে নিতে হবে।কিন্তু সঙ্গে যে আরও অনেক কিছুও জরুরি বা আরও অনেক কিছুর মাধ্যমেও যে এগিয়ে যাওয়া যায় সে দিকে কারোর নজরই নেই।এ সমাজে সবাই যদি শুধু ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোনও অফিসের বড় কোনও অফিসার হন,তা হলে একস্ট্রা কারিকুলামের দিকে কার ঝোঁক হবে?এই যেমন আমরা যারা লেখালেখি করি,অন্তত এই অঞ্চলের,
তারা মনে মনে মেনেই নিই যে,লেখালেখির মাধ্যমে আমাদের আর কিচ্ছুটি হাসিল হওয়ার নয়,একটা ভাল চাকরি আমাদের করতেই হবে,আর তা-ই আমাদের তিন বেলা খাবারের যোগান দেবে।আর সবকিছুর পর যদি কিছুটা সময় বেঁচে যায় তা হলে লেখালেখি করতে পারি।কিন্তু এ থেকে যে কিচ্ছু হাসিল হবে,তা ভেবে নেওয়াই অন্যায়।টাকা তো কেউ দেবেই না,নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেই হবে।আর এ জায়গায় যদি হিমার মতো মেয়েদের হাতে এই লেভেলের সম্মান আর টাকা ওঠে তা হলে এর থেকে ভবিষ্যৎ অনেক কিছু পেয়ে যাবে।
    এদিকে,১৯৬৬ সালে ভোগেশ্বর বরুয়ার পর এবার হিমা। একটি সোনা ও ২টো রুপোর পদক।
সেদিন(৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টায় বিমানবন্দরে পৌঁছন তিনি।সেখানেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, ডিজিপি কুলধর শইকিয়া। সেখান থেকে বিরাট কনভয়ে, হুড খোলা গাড়িতে চেপে হিমার সফর শুরু হয়। প্রথমে জালুকবাড়িতে ভূপেন হাজরিকার সমাধিক্ষেত্রে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান।এরপর ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে যান। দৌড়ের ট্র্যাকে প্রণাম করে হিমা বলেন,'এই ট্র্যাকেই আমার দৌড় শুরু। জুন মাসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের সেরা সময় করেছিলাম এখানে। জাকার্তায় নির্বাচিত হয়েছিলাম। রাজ্যবাসীর স্বপ্ন সফল করতে পেরে ভাল লাগছে।'
   নস্টালজিয়া!আর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল হিমার হাতে বিশ্ব জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে সোনা, এশিয়ান গেমসে ১টি সোনা ও রুপোর দুটি পদকের জন্য মোট এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। অসমের ক্রীড়া দূত হিসেবে দু’বছরের জন্য হিমাকে ৩০ লক্ষ টাকা হওয়ার প্রস্তাবপত্রও দেওয়া হয়।দারুণ একটা বক্তৃতা দেন তিনি। হিমা বলেন,'বাবা স্পষ্ট জানিয়েছেন, অহঙ্কার পতনের মূল। এই যে চুলে রং করেছি, ছেঁড়া জিনস পরেছি দেখে বাবা খুব রেগে গিয়েছে। আমি জানি একটা চোট লাগলে কালকেই আমার কেরিয়ার শেষ। তখন অহঙ্কার নয়, আমার লড়াইটাই অন্যদের পথ দেখাবে।' তিনি আরও বলেন,'বিভিন্ন রাজ্যের পদকজয়ীরা দল বেঁধে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আমি গেলাম একাই। সঙ্কোচ হচ্ছিল। রাজ্যের ৩০টি জনগোষ্ঠী যদি অন্তত একজন করে ক্রীড়া প্রতিভাকে তুলে আনতে পারে, ১২৬ জন বিধায়ক যদি নিজেদের কেন্দ্র থেকে একজন করেও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় দিতে পারেন তবে তার মধ্য থেকে অন্তত ১০ জন পদকজয়ী আসবেই। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে পরের বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।' আর তারপর দৌড়ের পথ দেখানো শিক্ষক শামসুল হক এবং দুই প্রশিক্ষক নিপন দাস, নবজিৎ মালাকারকে ধন্যবাদ দিয়ে হিমা বলেন,'আমায় যাঁরা তুলে এনেছেন তাঁরাও একই সম্মানের দাবিদার।'
    সবশেষে আরও দু-চারটে কথা।অভিনব অভ্যর্থনার মধ্যে ঘরে আসেন হিমা।আর তা তাঁর প্রাপ্যই বটে।কিন্তু সরকার ও প্রাক্তনদেরও ভেবে দেখতে হবে যাতে আস্তে আস্তে করে এরকম আরও প্রচুর হিমা দাস বেরিয়ে আসেন,যা ভারতের নাগরিক হিসেবে আমাদের খুব আনন্দ দিয়ে থাকে।


সুমঙ্গল দাস এর দুটি কবিতা



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।


মহামায়ার আগমন


হে মা মহামায়া তুমি মায়ার কান্ডারি
তোমার আগমনের শুভবার্তা মহালয়ার দিনে।
বহিবে মৃদু বাতাস তোমার আগমনের লগ্নে
উচ্চারণ করবে সব তোমার মহামন্ত্র জপ।
প্রাতঃকালে যুবক, বৃদ্ধ, শিশু করবে প্রাতঃভ্রমণ
জলের স্রোতের ন্যায় বহিবে নদীর কিনারায়
এ অপূর্ব মানব স্রোত সংযোগ করিবে ধরায়।
ষষ্ঠীতে মন্দির প্রাঙ্গণ খুলে যাবে প্রবেশ দ্বার
স্বপরিবারে গ্রহন করবে আসন,শান্তি করবে দান
মহাপ্রসাদ বিতরণ হবে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে
মানব ভক্তি স্রোতে কল্যাণ ধারা করবে উপভোগ।
খুব আনন্দ উলুধ্বনি শুনবে তুমি শঙ্খ ধ্বনি
ফুল স্পর্শে চরণ ছুঁয়ে তোমায় জানাবে নিবেদন।
সবাইকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ রেখে ফিরবে দশমীতে
তোমার এই যাত্রা পথে ধ্বংস হবে অশুভ শক্তি
একে অপরের আলিঙ্গনে হউক সবার মুক্তি।

...


দীপাবলি


দীপাবলি আতশবাজি ডুরুম ড্রাম শব্দ
ফুরুত করে উঠে রকেট পোকামাকড় লুপ্ত।
চৌদ্দ পুরুষের চাই প্রদীপ জ্বলে সবার ঘরে
এটম বম্ ফাটে যখন কম্পন উঠে বুকে।
আটাশ ফাটে ফুরুট ফারাট জ্বালায় মোমবাতি
গুরুম গারাম শব্দ শুনি অমাবস্যা রাতি।
আটাশ বম্ এটম বম্ বাচ্চারা না ধরে
বড়োরাও ফাটাও তবে ঘর থেকে দূরে।
টুনিসেট বিদ্যুৎ জ্যোতি আলো করে রাত
বারুদ নিয়ে মত্ত সবাই খেয়াল রাখো হাত।
ঘোর জংগল অরণ্য বনে ডাকিনী যোগিনী সাজে
রুদ্ররূপি মহাকালী ব্যাস্ত নিধন কাজে।
মহাকালীর মহাপ্রসাদ চাইনা এবার সুরা
যুবকদের বলো মাগো মদ ছাড়ো তোরা।
অসুর রূপি মদের নেশা হউক সবার পতন
বধ কর সুরা পান সমাজ কর গঠন।

ইউনুস আমিন বড়ভুইঞা -র কবিতা



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।

জীবন ক্রিয়া

যন্ত্রের মতো ছুটে চলা জীবনে
ঝড় বৃষ্টি গা পুড়ানো রোদের দহনে
ফুটেছিল বসন্তের একবিংশ ফুল
সীমাহীন প্রেমে অবিরত মশগুল--
বুক পকেটে রাখা যত্নের চিটি
মরচিকায় অস্পষ্ট বর্ণগুলির চিমটি
এখনো মনে করিয়ে দেয় অতীত!

ব্যস্ততার ফুলদানি গোছানো বেমানান
শূন্যতার খাতায় সংযোজন ম্রিয়মাণ।
অবাধ্যতায় সর্বন্তকরণে বিষধর বিষফনা
দংশিতে দংশিতে বিনাশিবে পাওনা।
দেনার বহরে ভারাক্রান্ত হৃদয় বীণা
আত্মসংকোচনের বিলোপে এক ধাপ
এভাবেই সুচনাতে পতন হয়..!

অতীত হাঁসায় নিভৃতে কাঁদায়
নবীন দ্বারের খিল বিভ্রাট ছুটায়।
যৌবন বিমুখ তারুণ্য জ্যান্ত অভিশাপ
স্রোতের বিপরীতে জন্মাতে পারে নব ধাপ।
মিষ্ট অতীত, কষ্টের অতীত, দুঃখের অতীত!
এসব বলা বাহুল্য তারুণ্যের ভাবনায়
দিগন্তের পর দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষায়
অতীতের ব্যার্থতা এগিয়ে যেতে শেখায়--
আর এটাই জীবের জীবন ক্রিয়া।

সানী ভট্টাচার্য -র দুটি কবিতা

।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।

অজানা স্মৃতি

তোমার স্মৃতি অজানা হয়ে
শুধু চোখের সামনে ভাসে।

ভাবনাগুলো আকাশের মেঘ থেকে
বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হয়ে
কিছু বলতে চায় আমায়।

এক অজানা মুখ হয়ে তোমার ছবি
আজও এলবামেতে
পরে আছে।

শহরের ভিড় তোমার-আমার ভাবনা থেকে
আজ অনেকদূরে ।

আর হাসেনা শ্যামলীদের
পুকুরপাড়,  আমাদের কথা ভেবে!
গাছপালাও আজ আছে নীরবে।

হয়ত তোমার জানা নেই
কলম দিয়ে তোমার নাম লেখার
সেই অভ্যাসটা
আর নেই।

...

ভালবাসা ২৪ ঘন্টা

শুপ্রভাত,
আজ রবিবার, ছুটির দিন
হালকা মনে, ভালবাসার সাথে
চায়ে  চুমুক দিন।

   রেডিওর পাশে বসে
   দুপুরের খাবার সাথে
   রবীন্দ্র সংগীত শুনুন।

বিকেলে হাঁটতে গিয়ে
       কিংবা
বেলকনিতে বসে অতীতের
ভাবনাগুলো মনে করুন।

                 এবং

রাতের খাবার পরে -----
কারো
অনুমতি ছাড়াই,
কিশোরদার কোনো
রোমান্টিক গান শুনে
স্বপ্নে হারিয়ে যান।

             শুভেচ্ছা  রইল
         সকাল থেকে স্বপ্ন
                অবধি।

              ইতি------
" ভালবাসা চব্বিশ ঘন্টা "

রাজু দাস এর দুটি কবিতা



সুখ

সুখ, সে কেমন কখনো দেখিনি

কি তার প্রাচুর্যতা

আজও বুঝতে পারিনি

শুধু আধঘুমা অবস্থায়

প্রতিদিন স্বপ্নেই আসে

রাতের অন্ধকারে হাজার

সুখের গল্প নিয়ে

রাতের শেষে সেই কুঁড়েঘর

মাটির দেওয়াল আর বিন্না ছনেরচাল।

জানো!

মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়

কখন জানি উড়িয়ে নেয়

ঝড় তুফানে ওই ঘর

তখন লন্ঠনের আলোও নিবে যাবে

থাকবে পড়ে অন্ধকার আর অন্ধার।

সত্যি খুব কষ্ট হয়,

সমগ্র পৃথিবীটাই ছলনা

সুখ নামে কিছুই নেই।।



বন্ধু

ওরে বন্ধু

আমি কখনো ভাবিনি

তুই যে আবার ফিরে আসবি

ওই নীল আকাশে

রামধনুর সাত রঙে রঙিন হয়ে।

সত্যি,

আমাকে চমকে দিলে!

যেনো বৃষ্টি মাঝে এক ঝলক রোদ্দুর

আধার রাতে ফুটফুটে জোৎস্না

আর ব্যস্ত মনে বুক ভরা হাসি।

আমি কখনো ভাবিনি

বন্ধুত্বের যে এতো টান

যাকে ভুলতে গেলেও ভুলা যায়না

বার বার মনে পরে

তার সাথে কাটানো সময় ও স্মৃতিগুলো

আর সেই স্মৃতিই একদিন

পৌঁছে দেয় ওই ঠিকানায়

যেখানে স্নেহ ভালোবাসা

মায়া মমতার ভান্ডার,

রাগ অহংকার হিংসা নিন্দা

কিছুই নেই শুধু হাসি খুশির জমজমাট।

ওরে বন্ধু এ কেমন সম্পর্ক

যার গভীরতা এতো অসীম?


 

পবিত্র গঞ্জু -র দুটি কবিতা

।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।

সফলতা

মেয়েটির নাম হিমা দাস।
সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারে
তার জন্ম।
গাঁয়ের পাঁচ- সাতটা
মেয়ের মতো
তারও সমান যত্ন।
সুবিধা নেই ইচ্ছেমত
আছে যত শহরেতে
শুধু ইচ্ছাশক্তি ভিন্ন।
পরিশ্রম তার অবিরত
নিয়মিত যেমন ব্রত
কে ভাঙে তার স্বপ্ন।
শহর যখন  ব্যস্ত খেলায়
গ্রাম তখন সিক্ত ভেলায়
বিলীন পদচিহ্ন।
হিমা নীরবে সময় কাটায়
প্রস্তুত হয় ভেজা মাঠে কাদায়
কালচক্র হয় প্রসন্ন।
উপড়ে ফেলে পরিহাস
নিজেকে করছে প্রকাশ
দেশমাতৃকার জন্য।
দেশ-মহাদেশের প্রতিযোগিতায়
সেও যখন সুযোগ পায়
প্রদর্শন হয় ভিন্ন।
হিমার হয় জয়জয়কার
গোল্ডেন গার্ল নাম তার
আজ আদর্শ কন্যা।
দৃষ্টান্ত সে নিখিল বিশ্বের
নিত্য সাধনা,লক্ষ্য স্থির
হেরে যায় বাধা-অবমাননা।

...

বেদনাময়

যদি তুমি লৌকিক আকাশে
মেঘাচ্ছন্ন থাকতে চাও...
থেকো।
নিলামে বিকিয়ে দাও হংস-বলাকার দামে।
নিজেকে নিংড়ে দাও...
দেখো।
কত ফুল অতিথি রূপে এসেছিল জানি।
আজ একা শালিক কিংবা
তালগাছ।
অনেক অট্টালিকাগগুলি আজ বিধবা।
অহংকারের ভোজ অতীত
নিয়তির পরিহাস।
যদি ব্রহ্ম মুহূর্তের পূর্বেই তুমি
ভক্তি কিংবা শক্তি দর্শাও,
দেখাও।
মরীচিকায় ধাওয়া বিফলমনোরথ।
চল নিজ ছন্দে সম্বন্ধ নয়,
তা বেদনাময়।

পিনাক দাস এর কবিতা

।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা - ১৪২৫।।

ভালবাসা

হৃদয়ের স্পন্দনে ছিল তাহারই কথা
ছিল ছন্দের সাথে ছন্দের ব্যাথা
কি করিয়া হায় ঘটিল এ কথা
কি শুনিয়া সে কহিল মোরে
তাহার আপন ভাষা
আপনার কথা
রজনীর বুকে স্থান সাজাইয়া সে
কোথায় হারাইল।
ভাবিতে ভাবিতে সে একদা
নিজেকেই নিজে কাহিল
এ তো কিছু
আর কিছু নয়
এ তো ব্যর্থ ভালবাস।

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...