"তেমন রাবার নেই মুছে উনিশে মে" কবি করুণা রঞ্জন ভট্টাচার্যের এই বাণী শ্বাশত। বরাকে বাঙালীর দৈনন্দিন জীবনে হাজারও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ভাষা কেন্দ্রিক আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে উনিশের চেতনাকে স্তিমিত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে যারা তাদের জানিয়ে রাখি, কবির এই প্রদীপ্ত ঘোষণাই আমাদেরও দৃঢ় অঙ্গীকার।
- শৈলেন দাস
মহান উনিশ, তুমি আছো
। সীমা পুরকায়স্থ ।
উনিশ, তুমি আছো ট্রেনে ঘুরে ফেরা
ফেরিওয়ালার মুখের বেসুরো গানে।
বাংলায় কথা বলা, রুমাল, টর্চ, ঘড়ি
চেইন, পার্স আদি বিক্রেতার মুখের বুলিতে
তুমি আছো কৃষকের ঘরের
অভাবী ছাত্রের বর্ণমালার বইয়ে।
ওরা মূর্খ! ইংরেজি, আসামি, হিন্দী
অনেকেই বোঝে না।
ওরা দেশ, রাজ্য, ভাষা, জাতি, ধর্ম
বিভাগের চিন্তায় বিভোর নয়।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত এক করে
নিজে বাঁচে, পরিবার বাঁচায়, দেশকে বাঁচায়।
বড়লোকের সুউচ্চ অট্টালিকা গড়ে নয়,
বাঁচায় মাটি - গ্রামের ক্ষেতে, বৃহদাকার বটবৃক্ষে।
সুরক্ষিত করে প্রাণের ভাষা - নবান্ন উৎসবে,
লোক সংস্কৃতিতে, লোক গানে।
আনে প্রশান্তি বাংলার ঘরে ঘরে,
শস্য শ্যামল সোনার ক্ষেতে।
। রাহুল দাস।
ওহে শহীদ,
তোমাদের কাছে আমরা ঋণী
কৃতজ্ঞ থাকবো চিরকাল।
রক্ষা করতে বঙ্গ মায়ের সম্মান
হাসতে হাসতে তোমরা করে দিলে
কত সতেজ প্রাণের বলিদান।
মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায়
কত না করলে লড়াই,
অবশেষে রেল জংশনে
জীবন উৎসর্গ করলে,
একটি ভগিনী আর দশটি ভাই।
ওহে শহীদ,
তোমাদের কাছে আমরা ঋণী
কৃতজ্ঞ থাকবো চিরকাল।
ওহে অমর শহীদ তোমাদের চরণে
জানাই আমি শতকোটি প্রণাম
আশীর্বাদ করুন আমাকে
যেন আমিও রক্ষা করতে পারি
আমার মায়ের সম্মান।
। সপ্তমিতা নাথ ।
ফাগুনের রং লাগিয়ে সবে গেল বসন্ত ,কোন তান্ডবের জোয়ার নিয়ে বৈশাখ দ্বারে দ্বারস্ত,যে স্টেশনে ছুটে যায় সবাই বরণ করিতে অতিথি আগন্তুক,সেই স্টেশনেই শেষ ঠিকানা ফেরাতে মাতৃভাষার তরী ডুবন্ত।
মস্ত বড় এক জামাট আবেগ ভেঙ্গে চুরমার
রাজপথে সেদিন লাঞ্চিত মা, হয়ে তার ভাষা ছারখারতপ্ত রোদে হঠাৎ হলো বৃষ্টিবিহীন বজ্রপাত,যখন ওরা কারা করলো ভাষার শরীরে আঘাত।
বরাক সেদিন স্তব্ধ বধির, গভীর নিরাশায়
কেমনে বইবে? গাইবে? কলকল নীরব বিদিশায়হাজার পাখির সুরের মূর্ছনা মুছে গেলবেদনায়, স্কুল-কলেজের সিলেট পেন্সিলব্ল্যাকবোর্ডও কথা দিল কথা না বলার।
তবে ভাইয়েরা হাল ছাড়েনি হার মানেনি
মিছিলের পর মিছিল করে বুক পেতে দিতে ওরা পিছায় নি।রাউন্ডের পর রাউন্ড পটকা ফাটিয়ে আনন্দ করতে ওরাও থামেনি !!রক্ত হাতে একে অপরে ধরে দশ ভাই এক বোনমাটিতে লুটায়, তবুও মাকে লুটাতে দেয়নি।
বিরাট আয়োজনে তারাপুর রেল স্টেশন থেকে,
প্রেমতলা দিয়ে ভাষার ভাষা প্রেম রক্ত বয়ে যায়।বিজয় কলসে প্রেম ধারা ভরে রাখে সবাই,উনিশ এলে কলস খুলে নিজেকে নিজে রক্ত তিলক পরায়।
দুই বাংলার বীর শহীদদের জানাই,
তোমাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে,
তোমাদের স্মরি
। জয়ন্তী দত্ত ।
ওগো তোমরা শোনো কান পেতে শোনো ঐ শোনা যায় মহাকালের ডাকখড়্গ হাতে উদ্যত, করিতে ছেদনআমাদের সাধের বাংলাভাষা।কত সাধনার ধন, কত রক্তের বন্যায় রঞ্জিত মাটি,
কত আত্মত্যাগ্ এগুলো কি বিফলে যাবে?
ওগো তোমরা শোনো
কান পেতে শোনো
মহাকালের বারতা। হিংসাস্রয়ীর কপটতা
আগ্রাসনে লিপ্ত চিত্ত
ধূর্ত শকুনীর দলের ভাবনা
কিভাবে করা যায় নির্মূল
মাতৃ দুগ্ধ সম মোদের মাতৃভাষা।
ওগো তোমরা শোনো
তোমরা কান পেতে শোনো
যে শ্লোগান মুখরিত ছিল তোমাদের বিজয় ধ্বনি
যাতে পেল স্হান মাতৃভাষা।
লাঞ্ছনার কবলে পড়ে সে
যন্ত্রণায় কাতরায় তবু ছাড়ে না নিজ অধিকার,
ভুলেনি তোমাদের শেখানো বুলি
"প্রাণ দেবো, ভাষা দেবনা",
"রক্ত দেবো তবু জবান দেবোনা"।
তোমাদের তেজস্বীতা গেঁথে আছে বরাকের জনমন।
এখনো আছে প্রতিবাদে মুখর
তোমরা কান পেতে শোনো।
বরাকের জনগণ তোমাদের স্মরণে শ্রদ্ধায়,
প্রেরণায় প্রদীপ্ত।