সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৩

প্রতাপ- এর গান ভাসে হিজলের ছায়ায়



।। শর্মিলা দত্ত ।। 
‘প্রতাপ’ এগিয়ে চলেছে ........
এবং বহুদূর তার যাত্রা --- এ আমাদের একান্ত বিশ্বাসের উচ্চারণ।

‘একটি ভাটিয়ালি গান থেকে আমার জন্ম
বহু যুগ আগে, পদ্মানদীর বুকে, আমার এক পূর্বপুরুষ—
এক কৈবর্ত পুরুষ- এক বলিষ্ঠ ও উদাসীন ইলিশ-শিকারী মাঝি
শেষ রাতে, টিপ টিপ বৃষ্টির ভিতরে,
প্রবল ঘুর্ণিময় নদীজলে শক্ত হাতে বৈঠা টেনে টেনে
একটি ভাটিয়ালি গান গেয়েছিলেন—

সেই গান থেকে আমার জন্ম
আমার পিতৃ-পিতামহের
মাতৃ-মাতামহের জন্ম .....' (আত্মপরিচয়, রনজিৎ দাশ)
এমনই মানব জন্মের মানবতার বহুধা কথা নিয়ে ‘প্রতাপ’- এর চলমান সাহিত্যজীবন। সম্পাদক দৃপ্তকণ্ঠে আমাদের জানিয়েছেন, ‘শহরকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চার আসরের সাথে গ্রাম-বরাকের যোগসূত্র গড়ে তোলাই ‘প্রতাপ’-এর উদ্দেশ্য'।— এমন কথা বহু পত্রিকার সম্পাদকীয়তে প্রথমে উচ্চারিত হতে দেখা যায় কিন্তু পরে— এবং ক্রমশ তা অপসৃয়মান কিন্তু অবশ্যই ব্যতিক্রম ‘প্রতাপ’। প্রতাপ এর পাতা জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ জলজ অঞ্চল - শনবিল, চাতলা হাওরের অজস্র কথকতা। তরুণ প্রজন্মের এমন লেখার প্রবণতাকে আন্তরিকভাবে কুর্নিশ করি। স্যালুট জানাই সম্পাদককে যিনি প্রতিনিয়ত উৎসাহ এবং তাগাদা দিয়ে ভালবেসে লিখিয়ে নেন তাদের কলমে বহু সুখ-কথা কিংবা দুঃখগাথা, বঞ্চনার স্বরলিপি অথবা হিজলের ছায়ায় নদীর সাথে ঘাটের সখ্যতার কথা। এ-সবই রয়েছে ‘প্রতাপ’-এর পাতা জুড়ে।

গ্রাম-রাকের ছোট দুধপাতিল, শ্রীকোনার সাহারজুম, দ্বিগরশ্রীকোনা, বিস্তীর্ন চাতলার শ্যামপুর, হরিনগর, রাজপুর, বাঘমারা, রতনপুর এলাকার লেখকরা লিখে চলেছেন তাঁদের অনুভব ও ভাবনার কথা। তাঁদের এই লিখে যাওয়াই-অমাদের কাছে আগামীর প্রত্যয়। সময়, কাল তাঁদেরকে যে যার মতো করে তুলে ধরবে অবশ্যই।
সম্পাদক ‘প্রতাপ’ – এর মাধ্যমে বারবার অনুরোধ রেখেছেন নবপ্রজন্ম যেন নিজেদের এলাকার সমৃদ্ধ ভাবনাকে, লেখনীতে তুলে ধরেন। ‘গ্রাম-বরাকের নতুন প্রজন্ম ‘প্রতাপ’ কে নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করার প্রাথমিক মাধ্যম হিসাবে গ্রহন করলেই স্বকীয়তা বজায় থাকবে পত্রিকাটির, সার্থক হবে পত্রিকা গোষ্ঠীর নিরলস প্রয়াসের'- সম্পদকের এ উচ্চারণ অসাধারণ! ‘প্রতাপ’- এর অন্তরনামাই এই কথাকে সমর্থন করে। দু'একজন খ্যাত নামা লেখক ছাড়া বাকি সবাই প্রায় তরুন প্রজন্মের এ বিষয়টাই আমায় মুগ্ধ করেছে, ‘প্রতাপ’কে প্রশ্রয় দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। পত্রিকার মান রাখার তাড়নায় নিজের উচ্চারনের ক্ষতি করেননি সম্পাদক। মানের পরিধি, উচ্চতা – এসব বিষয়ে শেষ কথা বলার আমরা কেউ নেই। কাল-মহাকাল ঠিক চিনিয়ে দেবে আমাদের কে কোথায় আছি বা থাকবো। মাটির গল্প নিয়ে জলজ বাতাসে হিজলের ছায়ায় ‘প্রতাপ’-এর উড়ান হোক অনন্ত অসীম।

মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২

নাগরিকত্ব




।। ধ্রুবজ্যোতি মজুমদার।।

এই যে আমি আছি
রক্ত-মাংস-হাড়ে গড়া
জলজ্যান্ত তোমার সামনে
অখন্ড সত্য আমার অস্তিত্ব?!
কোন কোণ থেকে কি
আমাকে মনে হয় ভিনগ্রহী?
ভিন্নত্বটা ঠিক কোথায় বলো?
জন্মগত আমার নাগরিকত্ব।।
আমি জন্মসূত্রে নাগরিক এই পৃথিবীর
পুরো অধিকার বায়ু-মাটি-জলে,
তোমরা কে হও
দাগ কেটে ছিনে নেওয়ার
ঈশ্বর প্রদত্ত সত্ত্ব?!!
বুড়ো খোকার দল-
তোমাদের মানচিত্রে আমার আগ্রহ নেই
শুধু জেনে রাখো-
প্রাণী মাত্রেই বসুধার বাসী
এর বেশী জানতে চাই না-
কোন ভারী ভারী স্বার্থান্ধ কুট তত্ত্ব।।

রবিবার, ২৯ মে, ২০২২

মরুভূমি শ্মশান



[প্রতাপ, পঞ্চম সংখ্যা]

।।প্রসেনজিৎ দাস।।

আজ মাথা ঘুরে কান্ড দেখে
আকাশ ছুঁয়ে গেছে আগুনে
সন্ত্রাসের ত্রাসে আলোড়ন জাগে
সমস্ত বিশ্ব ভুবন জুড়ে।
ভয়ে পরাণ কাঁপে থরথর
যেভাবে মানুষ হারাচ্ছে হুশ
একদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে
হিংসার আগুনে পুড়ে কালাহারি
মরুভূমি অথবা মণিকাঞ্চনের মত
শ্মশানের রূপটা পড়ে থাকবে শুধু
মাটির 'পরে নিরব আর চুপ।

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

শতদল আচার্য-র দুটি কবিতা



।।'প্রতাপ' পূজা সংখ্যা ১৪২৫।।

দেশ নেই---শুধু গল্পই থেকে যায়।

আমাদের কোন দেশ নেই
কেবল গল্প আছে।
তেমন কোন ঘর ও নেই
শীত তাপ নিয়ন্তিত আরামপ্রিয় বিছানা
যেখানে নাড়িয়ে জানাবো শরীরের সব ভাষা।

ছোটবেলা থেকে শুনে আসা এক দেশের গল্প
গল্পে ভাসমান মাছ  ভাতে ভাল থাকার গান।

এই যে সব শেষ হয়ে আসার  পরও গল্প থেকে যায়
এখন দেখি গল্পের দেশের মত
আমাদের এক গল্প এসেছে জীবনে
আমাদের কোন দেশ নেই
শুধু গল্পই থেকে যায়।

...

স্মৃতি

দরজাটা খুলতেই দেখি
দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতি।

একটা সময় দ্রুত  দৌড়ে গেল
সমস্ত  ওয়েব ল্যাংথ জুড়ে
               একটা ছন্দপতন ।আর
ভেসে এলো,
                   বিলায়েত খানের
                      সেতারের শব্দ।

রাকেশ দাস এর দুটি কবিতা



অন্তহীন ভাবনা


চুকিয়ে দিয়ে সকল খেলা
            ধ্রুবতারার দেশে যাব,
মানস লোকে আপন-ভোলা
         শূন্য দোলায় দোল খাব।

ক্লান্ত পথিক শূন্য হাতে
          সসীম খেলায় ক্ষান্ত হব,
পাগল পারায় গতির নেশায়
            অনন্তকাল বিভোর রব।

এবার আমি চুকিয়ে দিয়ে
          ভূবন ঘরের পাওনা দেনা,
তিমির মাখা আলোক লোকে
                   মত্ত হয়ে দেব হানা।

থামব না কোনো আঘাত পথে
                 পূর্ন করব মন-বাসনা,
এ যে আমার  স্বাধীন মনের
               এক অনন্তহীন ভাবনা।

...


আকাশ মাটির যুগলবন্দী


মন পবনের নাও ভাসিয়ে বিশেষ কারো খবর
অসীম গাঙের সসীম তীরে নিয়েছি আজ জবর।

পাইনি খুঁজে অচিন পাখির নাগাল
মন মাঝি তার বৈঠা বেয়ে চলছে চিরকাল।

তোমার আমার খেলার মাঝে-কাজের ফাঁকে
ময়না দ্বীপের অচিন নারী  আমায় ডাকে।

ভাবছি আমি কাজের শেষে সারা বেলা
ভাসিয়ে দেব শ্যামের বাঁশির সুরের ভেলা।

প্রাণের খেলায় মত্ত হয়ে অভিসারে
অসীম পথে পা বাড়াব রাধার মত চুপিসারে।

বৃন্দাবনের পথের ধূলায়-ফুলের দোলায়
কৃষ্ণ-রাধার নবীন বাসর কুসুম মালায়।

ছুটির মাঝেও কাজের ছুটি হয়না আমার কোনোদিন
মনের আকাশ যুগান্তরে আশার দিশায় রঙিন।

নিরুদ্দেশে মাত্রা পথে যাত্রা কবে হবে শুরু
সেই আশাতে বক্ষ আমার করে দুরু  দুরু।

মনের ভিতর অচিন পাখি কখন আসে যায়
পড়লে ধরা হৃদয় শিকল দিব পাখির পায়।

নৃপেন্দ্র দাস এর দুটি কবিতা



চেতনা


হে আমার দরিদ্র শনবিল
হে আমার কাঙ্গাল শনবিল
হে আমার নির্যাতিতা শনবিল
উঠো জাগো নিশী অবসান প্রায়।
চিৎকার করো দুধের শিশুর ন‍্যয়।

মৌন কেন তুমি জননী
মৌন কেন তুমি নির্যাতিতা নারী
মৌন কেন তুমি নব শিশু
মৌন কেন তুমি কিশোর কিশোরী
উঠো জাগো নিশী অবসান প্রায়।
চিৎকার করো দুধের শিশুর ন‍্যয়।

ও আমার জন্মভূমিগো তুমি জাগো
ও আমার শনবিলগো তুমি উঠো
ও আমার চাষা ভাই উঠো জাগো
ও আমার মৎস্যজীবী ভাই উঠো জাগো
উঠো জাগো নিশী অবসান প্রায়।
চিৎকার করো দুধের শিশুর ন‍্যয়।

...


প্রিয় শনবিল


হে সোনার রবি সোনার আলো
সিগ্ধ পরশ তৃষার ভালবাসা।
জাগাও জাগাও হে তুমি
মৌন সমাজের নিদ্রা;
জাগাও নিরাশা মানুষের অন্তরে আশা।

সুপ্রভাতে যেমন শিশির ভেজা আকাশে
সোনালী আলোয় আলোকিত তুমি।
তেমন অসহায় সমাজের অন্ধকার
নিরীহদের জীবনের যত আঁধার
দুরে সরিয়ে দাও নব রবি তুমি।

হে বিচিত্র পৃথিবী সবুজ অরণ্য
তোমার সবুজে শ্যামলে,
ভরিয়ে দাও রাঙিয়ে দাও শনবিল।
তোমরা উঠে এসো হে কৃষক,
তোমরা উঠে এসো হে মৎস্যজীবী
সূর্যের মতো তেজস্ক্রিয় হয়ে
অন্ধকার থেকে এসো বাহির হয়ে।

সুমন দাস এর দুটি কবিতা



ক্ষত

সাতটি দশক আগে ভাগ হলো দেশ
সব ধ্বংস রাজনীতির পাশা খেলায়,  
ক্ষমতার লিপ্সায় ওরা দিল কূটচাল
মানুষও উঠলো মেতে ধর্মের নেশায়।

স্বাধীনতার রব উঠলো যে চারিদিকে
ধর্মের ভিত্তিতেই চাই আলাদা ভূখণ্ড,
রাজনীতির ব্যবসায়ীরা তো হর্ষল্লাসে
নিজের তাগিদে দেশ করলো দ্বিখণ্ড।

পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকে
ক্ষত নিয়ে নতুন ঠিকানায় দিল পাড়ি, 
কোথাওবা পড়ে রইল সোনার ফসল
কতো কতো জমিদারের দালান বাড়ি। 

কতো স্ত্রীর মুছে গেল সিঁথির সিঁদুরটা
কোল খালি হলো যে অনেক মায়ের,
ভাইটা হারালো প্রিয় ভাইকে চিরতরে
সম্ভ্রম হারাতে হলো কতো যে বোনের।

বুকে ক্ষত নিয়ে নতুন স্থানে নতুন করে
শুরু হল যে জীবনের আরেক সংগ্রাম,
ফের নিজেকে স্বদেশী প্রমাণের পালা
তাইতো ছুটছে অনেকের কালো ঘাম।

পূর্বপুরুষ ক্ষত নিয়ে হলেন বাস্তুহারা
উত্তরাধিকারী আজও তা বয়ে চলছে,
অজানা ভয়ে যে মরছে তিলে তিলে
শেষ ঠিকানাও কি হারিয়ে যাবে পাছে?

সারেনি তো এখনো পর্যন্ত কত জনার
সাত দশক আগেকার ওই পুরনো ক্ষত,
প্রমাণের গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে ফের কি
নতুন ক্ষত বুকে নিয়ে হতে হবে বাস্তুচ্যুত?

...


অনুকরণ
     

যদি কাউকে করো অনুকরণ
তবে সূর্যকে করো, চাঁদকে নয়।
সূর্যের যে কোনো বদনাম নেই
চাঁদের গায়ে কিন্তু কলঙ্ক হয়।।

চাঁদের পানে পারবে তাকাতে
যতক্ষণ তব ইচ্ছে আছে মনে।
ভরদুপুরে পারবে কি তাকাতে
নীলাভ আকাশের সূর্যের পানে?

নিজেকে গড়তে হবে সেই ভাবে
যাতে কেউ কলঙ্ক খুঁজে না পায়।
প্রতিটি পদক্ষেপে যেন তোমার
সুনামের ঔজ্জ্বল্যতাটুকু ছড়ায়।।

পাছে অনেকেই হিংসায় জ্বলবে
হয়তোবা চাইবে তোমার সর্বনাশ।
বাধা বিপত্তি পিছনে ঠেলে দিয়ে
কাজে হতে হবে সূর্য সম প্রকাশ।।

মেঘের আড়ালে কিন্তু সূর্য হাসে
ছড়ায় যে তার উজ্জ্বল বিচ্ছুরণ।
তেমনি কালো মেঘ দূরে সরিয়ে
গঠন করো তোমার এই জীবন।।

প্রসেনজিৎ দাস এর দুটি কবিতা



প্রতিদান কী দিয়েছ


ভাই কী দিয়েছ প্রতিদান তাঁদের রক্তের বদলে
যাঁরা দিয়েছে প্রাণ  আত্মাহূতি দেশ গড়ার
তাঁদের আদর্শ মেনে করি না সম্মান
অবহেলিত তাঁরা আজ আমাদের সবার  অন্তরে
দিনের আলোতে তাঁদের স্ট্যাচুতে  কুসুমদাম পড়িয়ে
আর রাতের অন্ধকারে নোংরা আবর্জনা
ফেলে দিলে তাদের ওপরে
তাদের রক্ত বয়ে যাওয়া রক্তনদীতে
তোমরা নিজেরাই দিলে শবদেহ ভাসায়ে
মনের মহানন্দে সময় গুণে।
          
...


অতীত হয়ে গেছি


আমাকে তুমি অন্য কিছু জিজ্ঞেস করো
কিন্তু সম্পার কথা নয়।
সে এখন দালান বাড়িতে সুখে শান্তিতে বাস করে।
সে প্রতিদিন বাস্তব স্বপ্নের সাথে খেলা করে
আমাকে মনে রাখার মতো তার  সময় নেই হাতে 
আমি তো এখন অতীত হয়ে গেছি ।
আমার ভালোবাসার স্মৃতির বোঝা
এখন দাঁড়িয়ে আছে অর্ধ পুড়িয়ে ফেলা
কিংবা ছেড়া খাতার পুরনো মলাঠের মতো
রাস্তা, নর্দমার নোংরা, আবর্জনার ভেতরে
ঘুমিয়ে আছে চিরকালের জন্যে।
তার অন্তরে কি আর ফোটে উঠবে?
আমার প্রথম জীবনে দেওয়া লাল গোলাপ।

আব্দুল হালিম বড়ভূইয়া-র দুটি কবিতা



এক গুচ্ছ কাশ

পথের শেষান্তে একগুচ্ছ কাশ

খুলে দিল তার ফুটন্ত দুয়ার।

অবুঝ আগ্রহে প্রকৃতির বুকে

সাদা পালক তুলে আনন্দ করে।

এক খুশীর বার্তা ছড়ায়ে দিয়ে---

শরৎরাণীকে দেয় আভরণ।

কর্কশদেহে তুলো সাজিয়ে নেয়,

মনুষ্যলোকে মুক্ত ঝরা চাদরে।

বাতাসের দোলায়, জগৎ ভোলায়

আগমণী বার্তার আবেগ রসে।

শুভ্র মনোহর এই কাশফুল

আশ্বিনের আঙিণায় হিমের পরশ।

...


শিউলি


নূতনের গন্ধে খুঁজে বেড়াই---

কী জানি ; কী একটা উদ্যম এসেছে,

আকাশের নীলিমায় ঘন মেঘ;

বাতাসও একটু ভার।

গরমের সকাল-সন্ধ্যায়; শিশির কণা,

গাছের ডালে শিউলি ফুটেছে

মুকুলেও গেছে ভরি।

মাটির টানে উপচে পড়া

লাল-সাদা দেহ নিয়ে কী বাহার!

অশেষ মগ্ন আনন্দলোক,

শিউলি ফুটে গেছে এই ভেবে।

বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৯

বাবুল চন্দ্র দেব এর দুটি কবিতা



আইনের চোখে কালো কাপড়

যখন দেখি শতোর্ধ বৃদ্ধ ভারতীয় কিনা
প্রমাণ দিতে আদালতে ঘন্টার পর ঘণ্টা
বারান্দায় পড়ে থাকেন, তখন জানতে
ইচ্ছে হয়, স্বাধীনতা তোমার বয়েস কত!
ভারত, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান
শতোর্ধ তো এখনো নয়।

যখন দেখি কাগজের প্রামাণিকতায়
মাকে বন্দি হতে হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে
তখন জানতে ইচ্ছে হয় আইনের কাছে
কোথায় হারিয়ে গেল মানবতা!
একাত্তরটাই সীমারেখা আর পরিচয়?

যখন দেখি ঘরের একমাত্র সম্বল
ছেলেটির খোঁজাখুঁজি চলে আর
নদীর জলে ভেসে উঠে পচাগলা লাশ
তখন জানতে ইচ্ছে হয় খসড়ার কাছে
প্রাণ নিয়ে খেলার কে দিলো অধিকার!

উন্মাদ উল্লাসে বিজয় কীর্তন যখন দেখি
কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় জনতার
তখন ঘৃণা আর লজ্জায় জানতে ইচ্ছে হয়
এই টাকা দিয়ে করা যেতো না দূর
বেকারত্বের হাহাকার!

ক্রান্ত হও ভাই, ভেঙ্গে দাও সংকীর্ণ যত
মানষিকতার বেড়াজাল, উন্মুক্ত আকাশ
এসো হাতে হাত ধরে মানুষের কথা বলি
উড়াই ত্রিরঙা নিশান ভারত মাতার।
পাঞ্জাব যদি পাঞ্জাবির, বিহার যদি
বিহারির, আসাম যদি আসামির
তবে ভারত দেশটি কার!

প্রাণের গ্রন্থ সংবিধান, জানতে ইচ্ছে হয়
আইনের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য আইন
নাকি জীবন নিয়ে খেলা ভাগ্যবিধাতার।
আইনের চোখে কালো কাপড়
বড় লজ্জার, বড় লজ্জার, বড় লজ্জার!

....

অন্ধ নাচ

বন্যার কান্না ভাসছে এখনো
দুঃসহ জীবন রাত্রিবাস
আর্ত যন্ত্রণা হতাশার মেঘে
তপ্ত,  ক্লান্ত, উপবাস।

ঘৃতের বাতি ধূপ চন্দন
ঢাকে পড়লো কাটি
রঙ, ঢঙ আর সাড়ম্বরে
ভাবের পরিপাটি।

কপালে যার কাল বৈশাখী
উত্তাল সাগরে কিসের ভয়?
জীবন তো আর ঘুমের ঘোরে
অলীক কোনো স্বপ্ন নয়।

তালের পাতার নৌকা দিয়েই
জীবন নদীর পারাপার
দুহাত যাদের কাণ্ডারি হয়
প্রয়োজন কি মহামায়ার!

ক্ষুদার পেটের জ্বালা কি আর
জোড়ায় শিউলি ফুলে
অন্ধ নাচের উন্মাদনা
কাণ্ডজ্ঞান ভুলে।

এই সপ্তাহের জনপ্রিয় পোষ্ট

আকর্ষণীয় পোষ্ট

প্রতাপ : ১৭তম সংখ্যা (পূজা সংখ্যা - ১৪৩১)

প্রচ্ছদ  :  শুভজিৎ   পাল সম্পাদকীয় ......... বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব , দুর্গাপূজা। এই সময়টিতে বাঙালির প্রাণের মিলন , সংস্কৃতি আর ঐতিহ...