-
যোগেন্দ্র চন্দ্র দাস
বিড়াল রাস্তা কাটলে গাড়ির চালক কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, তারপর যায় কেন? এমনকি মানুষ হেঁটে যাচ্ছে এমন সময়ও বিড়াল রাস্তা কাটলে মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে
কেন? এর কারণ কি? এই প্রথা অনেক পুরনো। সেই কোন যুগ থেকে চলে আসছে। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তি
কি?
আগেকার দিনে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। গরুদের সামনে দিয়ে
বিড়াল গেলেই তারা অস্থির হয়ে পড়তো। গরুদের অস্থিরতার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত। তাই গরুর গাড়ির চালক বিড়াল
রাস্তা কাটলে গরুদের শান্ত করার জন্য কিছুক্ষণ গাড়ি থামিয়ে দিত। সেই অভ্যাসই
হয়ত এককালে কুসংস্কারে পরিণত হয়। তারপর থেকেই সম্ভবত যেকোনো গাড়ির সামনে দিয়ে
বিড়াল গেলেই গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার রীতি শুরু হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে রাহুকে অশুভ গ্রহ বলে। রাহুর
প্রভাবে অমঙ্গল বা দুর্ঘটনা যোগ আছে। বৈদিক জ্যোতিষ অনুসারে বিড়াল রাহুর বাহন। এই
কারণেই বিড়াল পথ ঘাটলে অশুভ বলে মনে করা হয়। কারণ বিড়াল পথ কাটছে মানে সেখানে
রাহুর প্রভাব আছে। তাই যেকোনো অমঙ্গল আসতে পারে বলে ধরে নিয়েই বিড়াল পথ কাটলে
গাড়ি থামানোর রীতি শুরু হয়।
বিদেশেও এই রীতি প্রচলিত আছে। আগেকার দিনে ইউরোপীয়
দেশগুলোতে একসময় পোষা কুকুর, বিড়াল রাস্তা পার হওয়ার সময়
তাদের পিছু পিছু বাড়ির ছোট বাচ্চারা ছুটে যেত এবং প্রায়ই গাড়ির তলায় চাপা
পড়ার ঘটনা ঘটত। তাই অনেক দেশে সরকারি নির্দেশ ছিল কুকুর, বিড়াল রাস্তা পার হলে কিছুক্ষণ থেমে দেখতে হবে যে
পেছন পেছন কোন বাচ্চা আসছে কিনা।
তাছাড়া কালো বিড়াল ইউরোপে এভিল এবং উইচ্ক্রাফট এর সাথে
জড়িত। অন্ধকার রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ির সামনে বিড়াল এলে তাকে মাড়িয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। তারপর সওয়ার এর উপর ইভিল স্প্যাল চেপে বসবে এই আশঙ্কায় কালো
বিড়াল দেখলে গাড়ি থামানোর প্রথা চালু হয়।
রাস্তার বিড়াল তার নিজের প্রয়োজনে রাস্তা অতিক্রম করে।
কোন অশনি সংকেত দেওয়ার জন্য নয়। কখনো শিকারের জন্য কখনো খাবারের সন্ধানে আবার
কখনো হয়তো বেড়ানোর জন্য তারা সাধারণত রাস্তা অতিক্রম করে থাকে।
একমাত্র
জনসচেতনতা এবং মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়িয়ে এই কুপ্রথা থেকে মুক্তি
পাওয়া যেতে পারে।